শিরোনাম :
মহাপ্রয়াণে ফাদার জ্যোতি এ. গমেজ
প্রতিবেশীর সাবেক সম্পাদক ফাদার জ্যোতি এ.গমেজ দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থ থাকার পরে আজ (সোমবার, ১৬ জুন) ভোর ৪টায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও গির্জায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং বিকালে তার জন্ম স্থান তুমিলিয়া ধর্মপল্লীতে আবারো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মাধ্যমে তুমিলিয়া মিশনে সমাধিস্থ করা হয়।
ফাদার জ্যোতি আলেক্সিয়াস গমেজ ১৯৪২ সালে ২১ জানুয়ারি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বোয়ালিয়া গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৩য়। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু তুমিলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর পর নাগরীর সেন্ট নিকোলাস হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬২ সালে বান্দুরা হলি ক্রস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৪ সালে নটর ডেম কলেজে এইচএসসি ও ১৯৬৬ সালে ডিগ্রী পাস করেন।
ফাদার জ্যোতির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় খ্রিষ্টযাগে পৌরহিত্য করেন বিশপ থিওটনিয়াস গমেজ এবং সহায়তা করেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও। খ্রিষ্টযাগে বাণী সহভাগিতায় ফাদার কমল কোড়াইয়া বলেন, ‘ফাদার জ্যোতির বাবা ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিকমনা মানুষ। তাঁর পিতার গুণগুলো নিজের জীবনে প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে প্রথম যুব-সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন ফাদার জ্যোতি। সাপ্তাহিক প্রতিবেশীকে যখন জাতীয় পত্রিকা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তখন কাজ করা অনেক কঠিন ছিল। ফাদার জ্যোতি কখনো পিছু-পা হননি। খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের বাণীদীপ্তির প্রতিষ্ঠাতা ফাদার জ্যোতি। তাঁর হাতে গড়ে উঠেছে দীপক বোসের মতো অনেক শিল্পী। তিনি শিল্পী সৃষ্টিতে পৃষ্টপোষকতা করেছেন। খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ক্যাসেট হচ্ছে ‘গুড ফ্রাইডে’ যা ফাদার জ্যোতির সময়ে তৈরি হয়েছিল।
তিনিই বাণীদীপ্তি স্টুডিওটিকে বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক স্টুডিও হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তৎকালীন সময়ে। তিনি প্রতিবেশীর সম্পাদক থাকাকালে অনেক মানুষকে লেখক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। রেডিও ভেরিতাসের বাংলা প্রোগ্রাম তিনিই শুরু করেছিলেন ভারতের সাথে যোগাযোগ করে। ফাদার জ্যোতিই প্রথম সমর দাসের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বড়দিনে অনুষ্ঠান প্রথম প্রচার শুরু করেছিলেন, এখন ইস্টারের অনুষ্ঠানও বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের একমাত্র এবং প্রথম যাজক ফাদার জ্যোতি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। কাথলিক ক্যালেন্ডার প্রথম তিনি তৈরি করে এনেছিলেন সিঙ্গাপুর থেকে। এর পর যখন তিনি জেরী প্রিন্টিং প্রেস স্থাপনের পর বাংলাদেশেই তৈরি হতে থাকে। ফাদার জ্যোতির লেখাগুলো ছিল বাস্তব ও ইতিহাস সম্মত। তাঁর লেখাগুলো এখন বাংলাদেশ খ্রিষ্টমন্ডলীর এক ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয়েছে। ফাদার জ্যোতির জীবন-যাত্রা আমাদের প্রত্যেক যাজকের জন্য অনুকরনীয়।’
ফাদারের কৃত্যানুষ্ঠানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায় ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পিটার গমেজ, ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান সলোমন আই. রোজারিও, সিও জোনাস গমেজ, সেক্রেটারিয়েট ম্যানেজার স্বপন রোজারিওসহ সমিতির অন্যান্য কর্মীবৃন্দ।
তিনি ক্ষুদ্রপুষ্প বান্দুরা সেমিনারীতে প্রবেশ করেন ১৯৫৭ সালে। এর পরে তিনি সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক সেমিনারী রমনা, ক্রাইষ্ট দ্যা কিং সেমিনারী, পাকিস্তাানের করাচীতে ঐশতত্ত্ব এবং দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৭ সালে করাচীতে শুভ্রপোশাক লাভ করেন, ১৯৭০ সালে ডিকন পদে অভিষিক্ত হন এবং ১৯৭২ সালের ৮ সেপ্টম্বর করাচীতে আর্চবিশপ যোসেফ কর্ডেরো কতৃর্ক যাজক পদে অভিষিক্ত হোন।
ফাদার জ্যোতি যাজক হিসেবে সেবা দিয়েছেন ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের মরিয়ম নগর, জলছত্র, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের লক্ষীবাজার, তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে পর পর দু-বার, হাসনাবাদ ও গোল্লা ধর্মপল্লীতে। এ ছাড়া তিনি সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক, খ্রিষ্টীয় যোগাযোগের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, কো-অর্ডিনেটর-রেডিও ভেরিতাসের বাংলা প্রোগ্রাম ম্যানিলা, ফিলিপাইন; বান্দুরা সেমিনারীতে পরিচালকের উপদেষ্টা, রমনা সেমিনারীতে আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা, সাধু পোপ ২য় জন পলের ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সফরের মিডিয়া প্রোগ্রামের সমন্বায়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা প্রদান করেন।
১৯৮০ সালে The World Journalism, Communication Foundation in Manila-তে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং এবং ১৯৮৪ সালে লন্ডনে Radio & TV Producer Shift Course সম্পন্ন করেন।
ফাদার জ্যোতির তেজগাঁও গির্জায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টাযাগে প্রায় ছয়শতাধিক খ্রিষ্টভক্ত, প্রায় বিশ জন যাজক এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শতাধিক সিস্টার, অনেক এসপাইরেন্ট এবং সেমিনারীয়ান অংশগ্রহণ করেন।
এইচআর/আরপি/আরবি/১৬ জুলাই ২০১৮