শিরোনাম :
মাটির ঘরে শুয়ে রইলেন গরীবের ডাক্তার বার্ণাড
গরীবের পরম বন্ধু ডাক্তার বার্ণাড সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন অজানার পারে।
ডাক্তার বার্ণাড বি. নাথ ঠান্ডাজনিত এবং হার্ডস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন স্কয়ার হাসপাতালে।
১৬ জানুয়ারি, সকাল সাড়ে ১০টায় স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯।
১৮ জানুয়ারি তাঁকে তেজগাঁও চার্চে সমাধিস্থ করা হয়। ডাক্তার বার্ণাডের শেষকৃত্যের খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন
খুলনা ধর্মপ্রদেশের বিশপ রমেন বৈরাগী। সকাল ১১টায় তাঁর শেষকৃত্যের খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করা হয়।
বাণী সহভাগিতায় বিশপ বৈরাগী বলেন, ‘ডাক্তার বার্ণাড একজন খাঁটি যিশুর মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন সহজ-সরল, বিন¤্র, ভদ্র, দয়ালু এবং কারো প্রতি কখনো কোনো হিংসা বিদ্ধেষ ছিল না। টাকার জন্য তিনি ডাক্তারি করেননি, ডাক্তারি করেছেন মানুষকে সুস্থ করার লক্ষে। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অমায়িক।’
শেষকৃত্যের খ্রিষ্টযাগের পর ডা. বার্ণাডের বাল্য বন্ধু স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে বলেন, বার্ণাড মান্ডলিকভাবে পুরোহিত হতে পারেনি, কিন্তু তিনি আক্ষরিকভাবে পুরোহিতের চেয়ে কোনো অংশে মানুষকে কম সেবা প্রদান করেননি অসহায় মানুষকে।’
তেজগাঁও গির্জার পাল-পুরোহিত কমল কোড়াইয়া বলেন, ‘প্রতি শনিবার তিনি তেজগাঁও মাদার তেরেজা সম্প্রদায়ে সিস্টার বাড়িতে রোগিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করতেন। এছাড়া তিনি আমাদের পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন।’
ডাক্তার বার্ণাড বি. নাথ ১৯৫০ সালে ২২ নভেম্বর খুলনা ধর্মপ্রদেশের শেলাবুনিয়া ধর্মপল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে সেন্ট পলস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে বান্দুরা সেমিনারীতে যান। বান্দুরা হলিক্রস স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ফিরে আসেন নিজ বাড়িতে। এসএসসি পাশ করার পরে নটর ডেম কলেজে পড়াশোনা করেন। তৎকালীন খুলনার বিশপ মাইকেল রোজারিও’র মাধ্যমে ইটালীতে ডাক্তারি বিষয়ে স্কলারশীপ পান। ইটালীতে তিনি ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে এসে সেন্ট পলস হাসপাতালে সেবা প্রদান করেন। এরপর তিনি ঢাকার মিরপুরে সালভেশন আর্মিতে ডাক্তারি সেবা দিয়েছেন। পরবর্তীতে ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে নিজ চেম্বার খোলেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নামমাত্র মূল্যে মানুষের চিকিৎসা করে গেছেন।
তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তাঁকে নিয়ে বেদনাকাতুর বিষয় লিখেছেন, ‘খুবই কমমূল্যে ভালো চিকিৎসা দিয়েছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ একবার দেখার আশায় ভিড় জমায় এই গরীবের ডাক্তারকে। আজ থেকে আর খোলা থাকবে না তাঁর চেম্বার। রিক্সা চালক চিকিৎসা করতে এসে ফিরে যাবে হাতাশ হয়ে।’ এ ধরণে নানা আলোচনায় বার বার তাঁর সেবার বিষয়টি ফুটে ওঠেছে।
ডাক্তার বার্ণাডের শেষকৃত্যের খ্রিষ্টযাগে হাজারো মানুষের ঢল নামে। তার সমাধিতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয় বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণিপেশার মানুষ।
ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ এবং সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তির কবরে ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।
মৃতকালে তিন রেখে গেছেন স্ত্রী, প্রবাসী দুই ছেলে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী।
ডিসিনিউজ/আরবি.এইচআর. ১৮ জানুয়ারি ২০১৯