শিরোনাম :
মাদকনির্ভরশীলতা ও পরিবার শীর্ষক কারিতাস বারাকা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত
গত ১৮ জানুয়ারী ২০১৭, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত “মাদক বিরোধী প্রচারণা মাস ২০১৭” উপলক্ষ্যে কারিতাস প্রকল্প ’বারাকা” এবং মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসমূহের নেটওয়ার্ক সংগঠন “নারকব”-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। “মাদকনির্ভরশীলতা ও পরিবার” শীর্ষক উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বারাকা পরিচালক ও নারকব সভাপতি ব্রাদার রবি টি. পিউরীফিকেশন সিএসসি। এছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বারাকার ডা.জসীম উদ্দীন পাঠান। সংবাদ সম্মেলনে বারাকা’র ম্যানেজার প্যাট্রিক অতুল রড্রিক্স অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার প্রায় পঞ্চাশোর্ধ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন ।
লিখিত বক্তবে ব্রাদার রবি ’মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির পরিণতি ও পরিবারে এর প্রভাব, মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির চিকিৎসায় ও সুস্থতার জন্য করণীয়’ বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, “অভিভাবকেরা মাদকনির্ভরশীল সন্তানকে নিয়ে কতটা অসহায় আর নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তা শুধু ভুক্তভোগিরাই জানেন। মাদকনির্ভরশীল সন্তানটির আচরণ যখন সহ্যের চুড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে তখনই অভিভাবকদের জরুরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। মূলতঃ সামাজিক অপবাদের ভয়ে অভিভাবকেরা আপনজনের মাদক গ্রহণের বিষয়টি লুকিয়ে রেখে সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলেন”। তিনি বলেন, “অন্যান্য অসুস্থতার মতোই মাদকনির্ভরশীলতাও একটি অসুস্থতা। তাই লোক-লজ্জার ভয় পেয়ে সমস্যাটিকে আরো জটিল না করে প্রাথমিক অবস্থাতেই আসক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসায় আওতায় নিয়ে আসতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা দেশের জন্য উপকার হয়”।
মাদকনির্ভরশীলতার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “মাদকে আসক্তির পাশাপাশি মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা ((Psychiatric Illness) ) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদক যেহেতু মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে ব্যাহত করে সেহেতু প্রত্যেক মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিই মাদকের ধরণ, মান, ব্যবহারের পদ্ধতি, সেবনের মাত্রা ও পৌনঃপুনিকতা ইত্যাদি ভেদে কোন না কোন মানসিক (Psychological) ) বা মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতায় (Psychiatric Illness) আক্রান্ত হয়; যা মৃদু থেকে চরম মাত্রা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও মাদকনির্ভরশীলতার পূর্বে মৃদু অথবা সুপ্ত অবস্থায় থাকা মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতার মাত্রা মাদক গ্রহণের ফলে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। দূর ও নিকট অতীতে মাদক ব্যবহারজনিত মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতা আমাদের দেশে লক্ষ্য করা গেলেও বিগত কয়েক বছর ধরে এই অসুস্থতার ক্রমোবৃদ্ধি ও মাত্রা আমাদের সকলের জন্যেই অশনীসংকেত এবং চ্যালেঞ্জস্বরূপ”।
বর্তমান মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয় ইয়াবা সম্পর্কে তিনি বলেন, “সবথেকে ভয়ংকর দিক হচ্ছে ইয়াবা মস্তিস্কের গঠন ও স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে পরিবর্তন করে দেয়। ফলশ্রুতিতে সন্দেহবাতিকতা, দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ, আক্রমণাত্মক-সহিংস-হিংস্র-বৈরি আচরণ, হেলুসিনেশন, অতিমাত্রায় সক্রিয়তা ইত্যাদি অসুস্থতা দেখা দেয়। এছাড়াও শারীরিকভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘুমের ব্যাঘাত, ক্ষুধামন্দা, ফুসফুসের প্রদাহ, কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেহেতু ইয়াবা সেবন করলে ঘুম হয় না, সেহেতু অনেক ইয়াবাসেবী ঘুমানোর জন্য ইয়াবার পাশাপাশি ঘুমের ঔষধ বা অন্যান্য মাদকও সেবন করে। ফলে দুই বিপরীত মেরুর মাদক মস্তিস্কে চাপ তৈরি করে কোষ ও স্নায়ুকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। উপরোক্ত মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতাগুলো গাঁজা সেবনকারীদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। বিগত ২০১৬ সনে বারাকায় চিকিৎসারত ৩৫% রোগীর মধ্যে মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে, যা পূর্বের তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে”।
মাদকের উপরোক্ত ভয়াবহতা প্রতিরোধে তিনি অভিভাবক, সচেতন নাগরিক ও সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে সারা দেশের মানুষকে সচেতন করার উপরে গুরুত্বারোপ করেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সুস্থতাগামী আসক্ত (Recovering Addict) ও একজন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির স্ত্রী সাহসিকতা এবং আবেগঘনভাবে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা সহভাগিতা করার মধ্য দিয়ে সকলকে সচেতন করেন।
আরবি/আরপি/এসএস/ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭