ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ মানুষকে রক্ষা করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: প্রধানমন্ত্রী

মানুষকে রক্ষা করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: প্রধানমন্ত্রী

0
359

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছেন, যেকোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাঁর সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা।’

‘বাঙালি বীরের জাতি এবং নানা দুর্যোগ এবং সঙ্কট বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছে, ’উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।’

শেখ হাসিনা বলেন, আজ সমগ্র বিশ্ব এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলছে। তবে, যেকোন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

‘আমরা জনগণের সরকার। সব সময়ই আমরা জনগণের পাশে আছি। আমি নিজে সর্বক্ষণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি প্রাণঘাতি করেনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং জনগণকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্যও উদাত্ত আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবারও বলছি- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলে যাঁর যাঁর ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।’

দুর্যোগের সময়ই মনুষত্যের পরীক্ষা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনই সময় পরস্পরকে সহায়তা করার, মানবতা প্রর্দশনের।’

প্রধানমন্ত্রী সকলকে ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ সঙ্কটময় সময়ে আমাদের সহনশীল এবং সংবেদনশীল হতে হবে। কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বাজারে পণ্যের কোন ঘাটতি নেই।’

‘দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের সঙ্গে সরবরাহ চেইন অটুট রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করবেন না, জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবেন না’, উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ‘সর্বত্র বাজার মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

মজুদদারিত্বের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এখন কৃচ্ছতা সাধনের সময়। যতটুকু না হলে নয়, তার অতিরিক্ত কোন ভোগ্যপণ্য কিনবেন না। মজুদ করবেন না। সীমিত আয়ের মানুষকে কেনার সুযোগ দিন।’

তিনি বলেন, আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ বছর রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকারি গুদামগুলোতে ১৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। বেসরকারি মিল মালিকদের কাছে এবং কৃষকদের ঘরে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ আছে। চলতি মওসুমে আলু-পিয়াজ-মরিচ-গমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

তিনি এ সময় আবাদি জমি ফেলে না রেখে উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনযোগী হওয়ায় ও কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, কোন জমি ফেলে রাখবেন না। আরও বেশি বেশি ফসল ফলান।’

যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সঙ্কটময় মুহূর্ত আসে এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মত মহামারী মানুষ প্রতিরোধ করেছে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই বিশ্ববাসী এ দুর্যোগ থেকেও দ্রুত পরিত্রাণ পাবে।

আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গত ১৫ মার্চ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে আঞ্চলিকভাবে সম্মিলিত প্রয়াস গ্রহণের জন্য সার্কভুক্ত দেশসমূহের নেতাদের উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ উপলক্ষে সার্কভুক্ত দেশসমূহের একটি যৌথ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ যাতে ১৫ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে করোনাভাইরাস পরবর্তীকালে দরিদ্র জনগণকে পুনর্বাসনে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমাদের তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি নিম্ন-আয়ের মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য এ সময় সমাজের বিত্তবানদের প্রতিও আহ্বান জানান।

শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্যে করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে আঘাত আসার আশংকা থাকায় তাঁর সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আঘাত মোকাবিলায় কিছু আপদকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যবসায়-বান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোন গ্রাহককে ঋণ খেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে।

পাশাপাশি, রপ্তানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। মোবাইলে ব্যাংকিং-এ আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।

একইসঙ্গে বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ বা জরিমানা ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দেশের সকল স্কুল কলেজ ও কোচিং সেন্টার গত ১৭ই মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। একইসঙ্গে সকল পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামীকাল ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে, কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে।

২৪-এ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে এবং এটি কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে সেনাবাহিনীর সদস্যগণ সহায়তা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে যেখানে আছেন, সেখানেই অবস্থান করুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে যাঁরা জনগণকে সেবা প্রদান করবেন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে প্যানডামিক বা মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের হোম কোয়ারন্টিান বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন।

তিনি বলেন, মাত্র ১৪দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।

কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিস্কার করতে, হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিতে এবং যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকতে দেশবাসীকে অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ দূর না হওয়া অবদি অন্য ধর্মের ভাইবোনদেরকেও তিনি ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর খোলা হয়েছে। এছাড়া সোসাইটি অব ডক্টরস তাদের ৫০০টি নম্বর উন্মুক্ত করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ঐসব নম্বরে যোগাযোগ করুন। সরকার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখলেও ততটা প্রাণঘাতী নয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ মানুষই কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেন। তবে, আগে থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এই ভাইরাস বেশ প্রাণ-সংহারী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি পরিবারের সবচেয়ে সংবেদনশীল (বয়োজেষ্ঠ্য) মানুষটির প্রতি বেশি নজর রেখে তাঁকে সুস্থ রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আতংকিত না হয়ে বর ং নিজেকে পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীরা যেন সংক্রমিত না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখারও আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার সচেতনতা আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং সর্বোপরি দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে।’

তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২টি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনসহ সকল স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ ফেরৎ যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৮১ জন যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

এছাড়া, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢাকায় ৬টি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা এবং ঢাকায় ১০ হাজার ৫০ টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সর্বপরি সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ৮ মার্চ সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসবাহী রোগীর অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৯ জন করোনাভাইরাসবাহী রোগী সনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪ জন বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন। তাঁরা আগে থেকেই নানা অসুখে ভুগছিলেন। ৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।’

তিনি বলেন, গতকল পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭ হাজার ৩৮ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৮৫ জনকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৯-এ মার্চ থেকে বিদেশ হতে আগত সকল যাত্রীদের সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিমান বন্দর হতে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকায় আশকোনা হাজী ক্যাম্প এবং টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোকে কোন বিদেশি নাগরিককে ভিসা না দিতে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে এবং যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম মজুদ আছে।

তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হবেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার পরীক্ষা কিট মজুদ ছিল। আরও ৩০ হাজার কিট শিগগিরই দেশে পৌঁছবে।’

ঢাকায় ৮টি করেনাভাইরাস পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে এবং দেশের অন্য ৭টি বিভাগে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেতার-টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

গুজব রটনাকারিদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ গুজব ছড়াবেন না। গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি স্বাস্থ্যকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রশাসনের সদস্যবৃন্দকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে একযোগে কাজ করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোন এবং’৭৫এর ১৫ আগষ্টের শহিদদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। তাই, এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। কারণ, ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড়-সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত।’

‘জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাঁর সরকার এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সকল জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।’

তাঁর সরকার জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তাঁর (জাতির পিতার) ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।’

তবে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে। যে আঘাত বাংলাদেশের ওপরও আসতে পারে, বলেও বিশেষজ্ঞদের অভিমত রয়েছে মর্মে সকলকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। (বাসস)