ঢাকা ,
বার : বৃহস্পতিবার
তারিখ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১১ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ মৃত্যুর এক বছর পর মোংলার শেলাবুনিয়া কাথলিক চার্চে সমাহিত হলেন ফাদার মারিনো...

মৃত্যুর এক বছর পর মোংলার শেলাবুনিয়া কাথলিক চার্চে সমাহিত হলেন ফাদার মারিনো রিগান

0
1156

বাংলাদেশে জন্ম না হলেও বাংলার মাটি ও মানুষ তার আপন জন। ইচ্ছা ছিল এদেশেই মৃত্যুবরন করার। তা আর হয়নি, কিন্তু ইচ্ছে ছিল এদেশেই সমাহিত হওয়ার। সেই ইচ্ছে পূরণ হলো অবশেষে।

২০১৪ সালে ৬১ বছরের সেবাকাজ শেষ হয় শারিরিক অসুস্থতার কারণে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিজ দেশে নিয়ে যান। ২০ অক্টোবর, ২০১৭ সালে ৯৩ বছর বয়সে নিজ দেশ ভিনচেঞ্চায় মারা যান তিনি।

অন্তিম ইচ্ছানুসারে এক বছর পর ফাদার মারিনো রিগানকে রবিবার বিকালে বাগেরহাটের মোংলার শেলাবুনিয়ায় সেন্ট পলস গির্জার পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

ফাদার রিগানের মৃত্যুর এক বছর পর সরকারিভাবে তাঁর মরদেহ ইতালি থেকে ভোরে দেশে আনা হয়। এরপর সকাল ৯টা ৪৮মিনিটে তাঁর কফিনবাহী হেলিকপ্টারটি মোংলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে অবতরণের পর ফাদার রিগানের কফিনটি গ্রহণ করেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস। মোংলা উপজেলা পরিষদের মাঠে ফাদার মারিনো রিগানের কফিনে সর্বস্তরের হাজার-হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। দুপুরে ফাদার মারিনো রিগানের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট পলস উচ্চবিদ্যালয় এবং সেন্ট পলস হাসপাতালে মরদেহ নেওয়া হলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ হাজারো অনুরাগী শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

সমাহিত করার আগে গির্জায় অনুষ্ঠিত হয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ। খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন খুলনার বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী। তাঁকে সহায়তা করেন ভিকার জেনারেল ফাদার যাকোব এস. বিশ্বাস, জেবুরিয়ান সম্প্রদায়ের সুপিরিওর ফাদার জেকব গব্বি এসএক্স, শেলাবুনিয়ার ফাদার সেরাপিন সরকারসহ আরো অনেকে।

ধর্মীয় আচার-আচরণ শেষে তার দেখিয়ে যাওয়া স্থানেই সমাহিত করা হয়েছে বাংলাদেশের এ অকৃত্রিম বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী ফাদার রিগানকে। এ সময় সমাহিতকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইতালি থেকে রিগনের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরে আনার ও সমাহিত করণে অনুষ্ঠানের কো-অর্ডিনেটর বীরপ্রতীক স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত লে: কর্ণেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও বৈদেশীক কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার, পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলামসহ আরো অনেকে।

সরকারের সাবেক সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, বাংলাদেশে আনার জন্য ইতালিতে বসে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ফাদার রিগানের মরদেহ গ্রহণ করেন ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ। ঢাকায় আনার পর ফাদার রিগানের মরদেহ গ্রহণ করেন সাজ্জাদ আলী জহির।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী কেবিনেট ডিভিশন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ৪জন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি ছিলেন ফাদার রিগানের সমাহিত করণের এই আনুষ্ঠানিকতায়।

বীরপ্রতীক স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত লে: কর্ণেল (অব:) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘১৯৫৩ সালে ফাদার মারিনো রিগান এ এলাকায় আসার পর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চার্চ করেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছিলেন যার কারণে সরকার তাঁকে এদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেছিলেন। মৃত্যুর আগে ফাদার রিগান ইতালিতে তাঁর আত্মীয়দের বলেছিলেন তাঁকে যেন বাংলাদেশে শেলাবুনিয়ায় সমাহিত করা হয়। সরকারের সহায়তায় আমরা সবাই মিলে তাঁর শেষ ইচ্ছাটুকুই পূরণ করেছি মাত্র।’

মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রবিউল ইসলাম জানান, ‘ইতালি থেকে তার্কিস এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ফাদার রিগানের মরদেহ রবিবার ভোরে ঢাকায় আসে। এরপর সেখান থেকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সকাল পৌনে ১০টায় মোংলায় আনা হয়। প্রথমে শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামের মরদেহ আসার পর সেখান থেকে তা সর্বজনের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেয়া হয় উপজেলা পরিষদ মাঠে। যেখানে ফাদার রিগানের মরদেহে শ্রদ্ধা জানান খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, স্থানীয় সাসংদ হাবিবুন নাহারের পক্ষে আওয়ামী লীগ, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়সহ দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা ও সংগঠনের মানুষ। এছাড়াও ফাদার রিগানের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।’

 

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মোংলার কাথলিক মিশনে থাকাবস্থায় ফাদার রিগানকে তাঁর পরিবার ইতালি নিয়ে যায়।

জন্মস্থান ইতালির ভিল্টাভেরলা গ্রামে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ৯৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই ধর্মযাজক।

সূত্রে জানা যায়, মাত্র ২৮ বছর বয়সে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের ব্রত নিয়ে ১৯৫৩ সালে ৭ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানে আসেন ফাদার মারিনো রিগান। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিদের পাশে দাঁড়ান তিনি। ১৯৭১ সলে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার মাধম্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা, আশ্রয় ও সেবা দেয়ার পাশাপাশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এদেশে শিক্ষা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান আসামান্য।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ফাদার রিগানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে।

ইতালিয় হয়েও ফাদার রিগান বাংলা ভাষায় লিখেছেন ৪০ কাব্যগ্রন্থ ও ৩৫০টি গান।

ফাদার মারিনো রিগান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবি-লেখকদের প্রায় ৭০টি বই ইতালির ভাষায় অনুবাদ করেছেন।

ফাদার রিগান ইতালিয় পরিচয় রেখে বাংলাদেশি পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করতেন।

ডিসিনিউজ/আরবি.ইউএমএইচ. ২২ অক্টোবর ২০১৮