শিরোনাম :
মোখায় লণ্ডভণ্ড সেন্ট মার্টিন, অতিক্রম করলো কক্সবাজার
ডিসিনিউজ।। ডেক্স (ডিসিনিউজে মোখার সর্বশেষ আপডেট)
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে প্রচণ্ড ঝড়ের সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। ঝড়ে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি, হোটেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। প্রচুর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে।
রবিবার (১৪ মে) দুপুরে মোখা উপকূল অতিক্রম শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় মোখার মূল আঘাত হচ্ছে মিয়ানমারে। যে কারণে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি অনেক কমেছে। আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মোখার কেন্দ্র উপকূলে উঠছে। সন্ধ্যা নাগাদ সম্পূর্ণ ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে সেন্ট মার্টিনে। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি চেয়ারম্যান। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘শুনেছি একজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখনো শিওর না। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হতে পারছি না।’
চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বলেন, ‘ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সেন্ট মার্টিন। এখানের ৯৯ শতাংশ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ঘরের চাল উড়ে গেছে। কিছু দুমড়েমুচড়ে গেছে। তবে এখনো জলোচ্ছ্বাস হয়নি। প্রচণ্ড বাতাস হচ্ছে।’
ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা টেকনাফ থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ মিয়ানমারের সিটুয়ে অঞ্চল দিয়ে যাবে। রবিবার (১৪ মে) সকাল ১১টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ চলে যাবে মিয়ানমার অঞ্চল দিয়ে। টেকনাফ, কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো ঝুঁকিমুক্ত হতে চলেছে। এর ফলে শুরু থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আমাদের যে ঝুঁকির আশঙ্কা ছিল, এখন আর তা নেই।
কক্সবাজারের উপকূল অতিক্রম করল মোখা
কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। এখন মিয়ানমারের স্থলভাগে অবস্থান করছে। মোখা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সামান্য দুর্বল হয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ এটি সম্পূর্ণ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন ও ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রবিবার (১৪ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২১ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও সামান্য দুর্বল হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আজ বেলা ৩টায় মিয়ানমারের সিটুয়ের নিকট দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে দেশটির স্থলভাগের ওপর অবস্থান করছে।
ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পূর্ণ ঘূর্ণিঝড়টি রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজার ও দেশের সমুন্দ্রবন্দরগুলোতে পূর্বের বিপৎসংকেত বহাল রাখা হয়েছে সর্বশেষ বুলেটিনেও।
১৮০ কিমি বেগে উপকূলে তাণ্ডব চালাচ্ছে মোখা
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৮০ কিলোমিটার বেগে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলে তাণ্ডব চালাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মোখার কেন্দ্র উপকূলে উঠছে। সন্ধ্যা নাগাদ সম্পূর্ণ ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করবে।
এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৯.৭° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২.৪° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ রবিবার (১৪ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল।
কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রমরত ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ সিটুয়ের (মিয়ানমার) কাছ দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখাতে দেশজুড়ে বৃষ্টি কম কেন
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে কক্সবাজারের দ্বীপাঞ্চলে বৃষ্টি হলেও দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণ জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রোববার (১৪ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান অধিদপ্তরের পরিচালক আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান।
মোখার অগ্রভাগের প্রভাবে সেন্ট মার্টিনে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়টি বিকেল বা সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালকের উদ্দেশে বলেন, অন্যান্য সময় ঘূর্ণিঝড়ের তিন দিন আগে বৃষ্টিপাত হয়। এবার আসলে তেমনটা হচ্ছে না কেন? এটার কোনো স্পেসিফিক কারণ আছে কি না?
জবাবে আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, এবার বৃষ্টিটা অ্যাকচুয়ালি সাইক্লোনের যে বডিটা, এটা আমাদের কোষ থেকে বেশ দূরে এবং এটা যেহেতু মিয়ানমারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, সেই কারণে সমস্ত এনার্জি ওই সাইক্লোন সেন্টারের দিকে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। সেই কারণে আমাদের দেশে বৃষ্টিপাত কমে গেছে এবং সেন্টারটা যখন, সাইক্লোনের ফুল বডিটা যখন উঠে যাবে ল্যান্ডে, তারপরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাংলাদেশে বেড়ে যাবে এবং বিশেষ করে সিলেট, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এই তিনটি বিভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে।