শিরোনাম :
যোসেফ কমল রড্রিক্সকে চোখের জলে চির বিদায়
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চোখের জলে বিদায় নিলেন কিংবদন্তী নজরুল সংগীতশিল্পী যোসেফ কমল রড্রিক্স। তিনি ৩১ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ ছাড়া র্দীঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন।
১ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও গির্জায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর তাঁর মরদেহ কবরস্থ করা হয় গির্জা প্রাঙ্গণে কবরস্থানে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন যোসেফ কমল রড্রিক্সের স্ত্রী রেবেকা গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া, কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম শাকিলসহ প্রায় একশত মানুষ।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, ‘যোসেফ কমল রড্রিক্স বাংলাদেশের সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। খ্রিষ্টীয় সংগীতেও তাঁর অবদান অপরীসিম। তাঁর অবদান নত মস্তকে স্বীকার করি। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।’
নির্মল রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পক্ষে যোসেফ কমল রড্রিক্স চলে যাওয়াতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি মারা যাওয়াতে অনেক ক্ষতি হয়েছে যা পূরণী নয়। তাঁর চলে যাওয়াটা বেদনাদায়ক। তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
যোসেফ কমল রড্রিক্সের স্ত্রী রেবেকা গমেজ বলেন, ‘তিনি দায়িত্বশীল একজন স্বামী ছিলেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, গানের বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ার, অন্যদের সাহায্য করাসহ যেকোনো ব্যাপারে তিনি ছিলেন অনন্য। নজরুল পাগল মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন চিকিৎসকদের বলেছেন, ডাক্তার আমাকে বাঁচান। আমি নজরুলকে অনেক ভালোবাসী। নজরুল ছিলেন তাঁর প্রাণ।’
রেবেকা জানান, তাঁর স্বামী প্রায় ২০০’র মতো খ্রিষ্টীয় সংগীতের কোনটার সুর, কথা, কন্ঠ বা পরিচালনা দিয়েছেন।
যোসেফ কমল রড্রিক্সের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ফাদার ঝলক দেশাই, উপদেশ দেন খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দের পরিচালক ফাদার আগষ্টিন বুলবুল রিবেরু।
তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা ক্রেডিট, ঢাকা ক্রেডিট কালচারাল একাডেমি, খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দের বিভাগ বাণীদীপ্তি, বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থা, নাগরী ক্রেডিট, মহাখালী ক্রেডিট, মহাখালী খ্রিষ্টান কল্যাণ সমিতি, ওয়ার্ল্ড ভিশন ও পরিবারের সদস্যরা।
যোসেফ কমল রড্রিক্স রেখে গেছেন স্ত্রী রেবেকা গমেজ, মেয়ে প্রিসিলা রড্রিক্স, ছেলে পল রড্রিক্সসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী ।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আরো অংশ নেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, মনিকা গমেজ, পাপিয়া রিবেরূ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের সিও জোনাস গমেজ ও সুইটি সি পিউরীফিকেশনসহ আরো অনেকে।
বাংলাদেশ নজরুল সংগীত সংস্থার সভাপতি যোসেফ কমল রড্রিক্স একেধারে ছিলেন সংগীতশিল্পী, অন্যদিকে একজন দক্ষ গীতিকার ও সুরকার। দীর্ঘকাল ধরে কমল রড্রিক বাংলা সংগীত জগতে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। তিনি বিটিভি ও বিভিন্ন চ্যানেল ও রেডিও’র একজন বিশিষ্ট নজরুল সংগীতশিল্পী। করেছেন অসংখ্য গান রচনা এবং দিয়েছেন অপরূপ সুমিষ্ট সুর। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার ও ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান পরিবেশন শুরু করেন।
ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য কমল রড্রিক্স ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের কালচারাল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল।
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সটারনাল এক্সামিনার হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও স্কুল-কলেজের সংগীত প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকাও পালন করেছেন।
শ্রদ্ধেয় কমল রড্রিক্স ঢাকা থিয়েটারের ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
খ্রিষ্টীয় ধর্মসঙ্গীত ‘গীতাবলীতে’ গীতিকার, সুরকার, পরিচালক ও শিল্পী হিসেবে তাঁর ৮০টি গান লিপিবদ্ধ রয়েছে।
তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের সাথে তাল রেখে বিভিন্ন সময় পেয়েছেন গুণীজন সম্মাননা। তার মধ্যে বাংলা কথা (চ্যানেল-৯)-এর নজরুল এ্যাম্বাসেডর, বাগেরহাটের অংকুর সাংস্কৃতিক সংগঠনের নজরুল সঙ্গীত প্রশিক্ষক, ঢাকা ক্রেডিটের গুণীজন সম্মাননা, খ্রিষ্টান ছাত্র কল্যাণ সংঘের গুণীজন সম্মাননা, ঢাকার নজরুল একাডেমির জাতীয় পর্যায়ে গুণীজন সম্মাননা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের গুণীজন সম্মাননা পদকসহ আরো অসংখ্য সম্মাননা ও পদক অর্জন করেন তিনি।
১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট কালীগঞ্জের নাগরীর পিতা পল রড্রিক্স ও মাতা প্রিসিলিা রড্রিক্সের কোল জুড়ে নজরুল সংগীতজ্ঞের জন্ম। স্কুল জীবনে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে সংগীত শিক্ষা শুরু হলেও ওস্তাদ পিসি গোমেজের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ভর্তি হন কলেজ অব মিউজিক-এ সাটিফিকেট কোর্সে। তিনি ছায়ানটেও পাঁচ বছর রবীন্দ্র নজরুল ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নেন। এ ছাড়াও অনেক নামজাদা সংগীতজ্ঞের কাছেও তিনি গান শেখেন।