শিরোনাম :
রবীন রোজারিও’র স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান
একজন শিক্ষানুরাগী হয়ে সমাজকে দিয়ে গেছেন অবারিত আলো। তাঁর কাজের আলো ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে, সমবায়ে, মন্ডলীতে ও সাধারণ সেবাদানে।
৬ এপ্রিল সকাল ১১টায় ফার্মগেট চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে রবীন রোজারিও’র পরিবার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এতে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজের পৌরহিত্যে খ্রিষ্টযাগ অর্পন করা হয়। খ্রিষ্টযাগে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি, ফাদার তপন রোজারিও, ফাদার কমল কোড়াইয়াসহ আরো অনেক ফাদার, সিস্টার, রবীন রোজারিও’র পরিবার বর্গসহ খ্রিষ্টভক্তরা।
এ সময় বক্তারা রবীন রোজারিও’র জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাঁর কর্মগুনের মাধ্যমে মঙ্গল কাজের প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, ‘রবীন রোজারিও’র শিক্ষকতা ছিল পেশা, আর সমাজ সেবা ছিল তাঁর নেশা। তিনি সর্বজনীনভাবে সকলের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ। শিক্ষা দিয়ে যেসকল শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলেছেন, তার আদর্শ সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যদিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।’
‘রবীন রোজারিও ছিলেন উদার মনের মানুষ। তিনি সব কাজে সবর ছিলেন। সার্থশূন্য কাজ করেছেন সমাজের মঙ্গলের জন্য। রবীন রোজারিও ছিলো একটি নির্ভরতার নাম’ বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, কারিতাস বাংলাদেশের প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিও, সেন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অজয় সরকার, দড়িপাড়ার পক্ষ থেকে অনিল লিও কস্তা, তুমিলিয়ার সেন্ট মেরিস্ স্কুলের শিক্ষক সিস্টার শান্তা এসএমআরএ, সেন্ট ফ্রান্সিস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সিস্টার লুর্দ মেরি আরএনডিএমসহ আরো অনেকে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল হেমন্ত আই. কোড়াইয়াসহ আরো অনেক বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
২৩ মার্চ, সকাল পৌঁনে ৮টায় গুলশান কিউর হাসপাতালে অসুস্থতাজনিত কারণে রবীন রোজারিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন।
মৃত্যুর খবর শুনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় শোকাতুর অনুভূতি ও স্বজন হারানো বিহ্বলতা। তার মরদেহ জনগণের শেষবারের মতো দেখা ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিজ ধর্মপল্লী দড়িপাড়া, দীর্ঘদিনের আবাস ও কর্মস্থল লক্ষ্মীবাজার গির্জা এবং ঢাকার তেজগাঁও গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়।
২৬ মার্চ, সকাল ১১টায় তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খ্রিষ্টযাগের পর তাঁকে সমাহিত করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খ্রিষ্টযাগ অর্পণ করেন ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি। তাঁকে সহযোগিতা করেন রবীন রোজারিওর ভাই ফাদার তপন রোজারিও, ফাদার প্রশান্ত রিবেরু, ফাদার রিপন গমেজসহ আরো অনেকে। খ্রিষ্টযাগ শেষে স্যার রবীন রোজারিও’র প্রতি বিভিন্ন সংগঠন, অঙ্গসংগঠন ও নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সদস্যগণ। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও’র নেতৃত্বে প্রতিনিধিগণ তাঁর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আরো শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন, অঙ্গসংগঠনসহ সাধারণ জনগণ।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। ১৯৬৬ থেকে ৬৯ সাল পর্যন্ত নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি লক্ষ¥ীবাজারে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট সিলভেস্টার টিউটোরিয়াল বিদ্যালয়, যা এখনো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি ছিলেন সমাজের একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৩ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের সর্ববৃহত সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ছিলেন। এর আগে তিনি বোর্ড অব ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি তুমিলিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর প্রাক্তন সেক্রেটারি, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর প্রাক্তন ডিরেক্টর হিসেবে সেবা দিয়েছেন।
রবীন রোজারিও ছিলেন মন্ডলীর কাজে নিবেদিতপ্রাণ। আশির দশক থেকে বিংশ শতাব্দির প্রথমভাগ পর্যন্ত তিনি মন্ডলির বিভিন্ন সেবাকাজে সক্রিয় ছিলেন। ২০০০ সালের জয়ন্তী পালনের ক্ষেত্রে তিনি কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গেছেন। চার্চের সব ধরনের কাজে তিনি ছিলেন খ্রিষ্টের নিবেদিত সৈনিক। এছাড়াও তিনি দড়িপাড়া জাগরণী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীবাজার ঐতিহ্যে মোড়া সুহৃদ সংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।
রবীন রোজারিও ম্যারেজ এনকাউন্টার এক্লেজিয়াল টিমের কনর্ভেনর ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই সংগঠনে নিরলস অবদান রেখে গেছেন।
১৯৪৭ সালের ৪ মে, কালিগঞ্জের দড়িপাড়া ধর্মপল্লীতে সিলভেষ্টার ডি’রোজারিও ও মার্থা পালমার কোল জুড়ে জন্ম নেন রবীন রোজারিও। পড়াশুনা শেষে তিনি চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। স্ত্রী প্রণতি রোজারিও ও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তিনি লক্ষ্মীবাজারে বসবাস করতেন। এরপর মহাখালীতে গড়ে তোলেন নিজ বাসভবন। সেখানেই তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত বাস করেছেন।