ঢাকা ,
বার : শুক্রবার
তারিখ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১৩ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ রাজধানী বাড্ডায় দুই বৃদ্ধ দ্বারা ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ

রাজধানী বাড্ডায় দুই বৃদ্ধ দ্বারা ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ

0
394

রাজধানীর বাড্ডায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ইফতারি খাওয়ানোর কথা বলে দুজন ব্যক্তি আট বছরের একটি খ্রিষ্টান শিশুকে ধর্ষণ করে।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইফতারের দাওয়াত দিয়ে শিশুটিকে পরপর দু’দিন নির্যাতন করে। পরপর দুইদিন নির্যাতনের ফলে শিশুটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশুটির গলা কেটে মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় বিষয়টি কাউকে বলতে সাহস করেনি। দশ এগারো দিন পর শিশুটির মা জোর করে মেয়েকে গোসল করাতে গিয়ে বিষয়টি টের পান।

শিশুটির বাবা জানান, পাশের বাসার প্রহরী শাহিনুর আগের দিন ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল। ইফতারের সময় মা মেয়েটিকে প্রহরীর কাছে পাঠায় ইফতার খাওয়ার জন্য। তখনই এমন জঘণ্য কাজ করে ধর্ষণকারী পাষন্ডরা।

বাড্ডার ময়নারবাগের ফজলুল হকের ৩৫২নং বাসার পঞ্চম তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করতো ধর্ষিতার পরিবার। ২৯ মে ইফতারের দাওয়াত দিয়ে তাদের আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণ করে সামনের বাসার প্রহরী আমজাদ হোসেনের সহযোগিতায় অপর প্রহরী শাহিনুর।

ওই ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১২টায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০২ এর সংশোধনী ২০০৩ এর ৯ (৩) ধারায় মামলা করেন। মামলার দুই আসামি হলেন- নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুর রহমান (৫২) ও আমজাদ হোসেন (৫০)। দু’জনই ময়নারবাগ ৩৫২/৫তলা এলাকার নিরাপত্তা প্রহরী।

ঘটনার বিবরনে মেয়েটির পরিবার জানায়, ইফতার কেনাকাটা আর নামাজের প্রস্তুতি চলছিল চারদিকে। সবার মধ্যে যখন ধর্মীয় আচার পালনের ব্যস্ততা তখনই সুযোগ নেয় নিরাপত্তা প্রহরী শাহিনুর। এজন্য পরিকল্পিতভাবে আগের দিন আমার বাসায় গিয়ে ইফতারের দাওয়াতও করে আসে।

পরদিন ঠিক ইফতারের আগে দাওয়াতের কথা মনে করিয়ে দেয় প্রহরী শাহিনুর। আমার মেয়েটি তখন নিচে খেলছিল। মেয়ের মা সহজ-সরলভাবে ইফতার খেতে প্রহরীর কক্ষে মেয়েকে পাঠিয়ে দেন। মেয়েটির বাবা বলেন, দাদুর বয়সী মানুষ। এতটা পাশবিক হবে, জানা ছিল না। দুই প্রহরী মিলে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরের দিনও নির্যাতন করে। কিন্তু লজ্জা আর ভয়ে মেয়ে আমাদের কিছুই বলেনি।

ধর্ষিতার বাবা আরও বলেন, ঘটনার ওই রাতে মেয়ের গায়ে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আসে। জ্বর কোনো মতে কমছিল না। জ্বরের কারণ, শরীরে ব্যথা, হাঁটতে না পারা- কোনো কিছুই জানতে পারছিলাম না। মেয়ের মায়ের মনে সন্দেহ হয়। তিনি আদর করে, শান্ত গলায় মেয়ের কাছে জানতে চান, কিচ্ছু হবে না তোমার, কে তোমার গায়ে হাত দিয়ছে, দ্বিধাহীনভাবে বলো।

কিন্তু মুখ খোলেনে মেয়েটি আমার। এভাবে ১০টি দিন পেরিয়ে যায়। শিশুটির শরীরে বেড়ে যায় ইনফেকশনের যন্ত্রণা। মেয়েটি প্রচণ্ড ব্যথার কথা বলছিল। মা তিনদিন ৩/৪টা করে নাপা দিচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যথা কমে না। একদিন মা জোর করে গোসল করাতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের শরীরে ক্ষত দেখতে পান।

মা মেয়েকে অভয় দিয়ে বলেন, কিছু হবে না তোমার। কেউ কি তোমার ক্ষতি করেছে? মায়ের অভয় পেয়ে মেয়ে সব কথা খুলে বলে। বলে দাদুর বয়সী দুই নিরাপত্তা প্রহরী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের কথা। নির্যাতনের পর তারা আমার মেয়েকে ভয় দেখায়, কাউকে বললে গলা কেটে দেবে। মেরে ফেলবে…!

ধর্ষিতার বাবা বলেন, আমি বিষয়টি বাসার মালিককে অবহিত করি। এরপর প্রহরীর সামনে মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা আমজাদ হোসেনকে বাড্ডা থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন। সে সময় মূলহোতা শাহিনুর বাসায় ছিল না।

শিশুটির বাবা বলেন, নিজের জীবনে এমন ঘটনা ঘটবে- তা কখনও ভাবতে পারিনি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে গেছি। পুলিশি কেইস বলে ভর্তি করাতে পারিনি। সামাজিক মানসম্মানের ভয়ে প্রথমে মামলা করতে চাইনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করাতে পারিনি।

চিকিৎসক জানান, এ ঘটনায় আগে থানায় মামলা করুন, তারপর চিকিৎসা। কষ্টে, আক্ষেপে ফিরে এসেছি। থানায় মামলা করেছি। আসামিরা ধরা পড়েছে। হয়তো বিচার হবে কিন্তু আমার জীবনে, আমার মেয়ের জীবনে যা ঘটে গেল তা কখনও ঘুচবার নয়- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ধর্ষিতার বাবা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, দুই আসামিকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ভিকটিম শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি’তে ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে দুই আসামীকে আদালতে নিয়ে গেলে মহামান্য আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে বাড্ডা এলাকায় বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের নেতৃ কল্পনা ফলিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমি সেখানে গিয়েছি। শিশুটির অবস্থা বেশি ভাল নয়। থানায় কথা বলেছি, তারা বলেছে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষিকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।’

দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করে কল্পনা বলেন, দোষিদের এমন শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে অন্য কেউ এমন জঘণ্য কাজ করতে সাহস না পায়।

আরবি/আরপি/১২ জুন, ২০১৭