শিরোনাম :
রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার ও নির্বাচনে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সমাবেশ ও বিক্ষোব পদযাত্রা
মায়ানমার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা হত্যা এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নির্বাচনী ৫ দফা দাবি আদায়ের জন্য ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও আন্দোলন করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক জনগণ।
আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন ১৯ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ঐক্য মোর্চা ‘ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনসমূহের জাতীয় সমন্বয় কমিটি’র উদ্যোগে এ বিক্ষোপ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষুদ্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে পদযাত্রা করে।
সমাবেশে সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে লিখিত স্মারকলিপি পাঠ করেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আজ আমরা এই স্মারকলিপি যখন পেশ করতে চলেছি, সে মুহুর্তে গোটা দেশ ও জাতি এক সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেখানকার সামরিক বাহিনী ও কালো মুখোশ-কালো পোশাকধারীদের পরিচালিত নির্মম সহিংসতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা আমাদের নিদারুণ বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই এবং এ ঘটনার জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাই।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক বিপর্যয়ের এ দিনগুলোতে তাদের প্রতি আমাদের মানবিক সহযোগিতার যে আন্তরিক ভূমিকা আপনি পালন করে চলেছেন, তার প্রতি বিশ্ববাসীর যেমন অকুণ্ঠ প্রশংসা, তেমনিভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রশংসিত করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সার্বিক সমাধানে সরকারের গৃহীত উদ্যোগকে আমরা সার্বিকভাবে সমর্থন করি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছেন, বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ অঞ্চল গঠন করে ফিরিয়ে দিতে পারবেন, সে বিশ্বাস এদেশে জাতিধর্ম-সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রয়েছে। এই মানবিক সমস্যা সমাধানে আপনার সকল উদ্যোগের সাথে আমরা একাত্ম। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপনার জিরো টলারেন্স নীতি আমরা সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করি।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে এমন কাউকে প্রার্থী করা যাবে না, যারা নির্বাচিত হয়ে বা রাজনৈতিক নেতৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল বা আছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল ও জোটের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের প্রাণের দাবি ৭-দফার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত হবে এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিতকরণে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকবে। এতে নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কামিশন আইনের বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, বর্ণবৈষম্য বিলোপ আইন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
সমাবেশ ও বিক্ষোব পদযাত্রায় ‘রোহিঙ্গাদের রক্ষা কর, সংখ্যালঘুদের বাঁচাও’, ‘রোহিঙ্গাদের মারে যারা, মানবতার শত্রু তারা’, ‘রাখাইন রাজ্যের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেও, নিতে হবে’, ‘বাঁচাও সংখ্যালঘু, বাঁচাও দেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ’ সম্বলিত ফেস্টুন ও শ্লোগান ব্যবহার করা হয়।
সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সমন্বয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোব পদযাত্রায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, হিউম্যান রাইটস্ কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিজ, বাংলাদেশ মাইনোরিটি সংগ্রাম পরিষদ, সাংবাদিক সংগঠন ‘স্বজন’, মাইনোরিটি রাইটস ফোরামসহ মোট ১৯টি সংগঠন অংশ নেয়।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, সেক্রেটারি জেনারেল হেমন্ত আই. কোড়াইয়া, এশিয়া প্যাসিফিক এলায়েন্স অব ওয়াইএমসিএসর প্রেসিডেন্ট তথা আন্তর্জাতিক নেতা বাবু মার্কুজ গমেজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিক্ষোব-সমাবেশ ও পদযাত্রায় অংশ নেয়।
আরবি/আরপি/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭