শিরোনাম :
রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ
“শাবাশ বাংলাদেশ, এই পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
কবি সুকান্তের এই লাইন দু’টির মধ্য দিয়ে আজ আবেগী, পরদুঃখে কাতর বাঙ্গালী সর্বশক্তি দিয়ে যে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’ তার মোকাবেলায় প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মানব দরদী, স্নেহময়ী জননী, পরদুঃেখ বেদনায় কাতর মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দু’হাত বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নিয়েছেন, তা বিশ্বয়কর। অভাবিত। এমন করুণায় বিগলিত মাতৃ-হৃদয় যেন স্নেহছায়া দিয়ে আচ্ছাদিত ক’রে রেখেছে এই রোহিঙ্গাদের যারা স্বদেশ হতে বিতারিত, সহায়সম্বলহীন, নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে। লাখ লাখ শরনার্থী শিশু, বৃদ্ধা, রোগি, গর্ভবতী মায়েরা কত কষ্টে পায়ে হেঁটে ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর, প্রাণের ভয়ে ছুটে আসছে বাংলাদেশে একটুখানি জীবনের প্রত্যাশায়, প্রতিদিনের ছবি, হৃদয় বিদারক দৃশ্য টিভি পর্দায় বাংলার জনগণ প্রত্যক্ষ করছে।
“ভাগ ক’রে খাব” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই যে দৃঢ় আশ্বাস ও পদক্ষেপ অভাবনীয়। জনগণের মধ্যেও যেন দয়ার দুয়ার খুলে গেছে। যেভাবে যে যা পারছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান এর সমস্যা সমাধানে সারাবিশ্বই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ছোট কিন্তু ভালবাসার মানসিকতায় অনেক বড়। বাঙ্গালীর শরীর দয়ার, স্নেহ মমতার শরীর। কোন প্রতিকুল অবস্থাতেই হেরে যায় না। অসহায় শিশুগুলোর মুখের দিকে তাকালে, বৃদ্ধাদের অসহায় অবস্থা দেখলে কার না কষ্ট হয়! আজ কাগজে দেখলাম ৭০ হাজার নারী সন্তান সম্ভবা, ভাবা যায়? এদের অবস্থা কেমন হবে। ঘর নাই, পর্যাপ্ত সেনিটেশন নাই, রোদ বৃষ্টি, ঝড় সামনে শীতকাল এই সন্তানসম্ভবা মায়েদেরে অবস্থা কেমন হবে? অনেক চিন্তার বিষয়। প্রতিদিন জন্মাছে ৮ জন ক’রে নবজাতক। এদের সু-চিকিৎসা, খাবার, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, নিরাপত্তা সবই মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি। বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, রোগী এদের অবস্থা কি? নিজের আপন দেশ তাদের বিতারিত করেছে। এমন ঘৃণ্য বর্বরতা কেন? মানবতা এখানে এত বিপন্ন কেন? মানুষ কেন এত নিষ্ঠুর আর হৃদয়হীন। রোহিঙ্গাদের কি অপরাধ? ঈশ্বরের রাজ্যে, পৃথিবীতে সকল মানুষ তো সমান।
বাংলাদেশে ৭০ হাজার শিশু জন্ম নিলে তাদের বাসযোগ্য স্থান কোথায়? জানা নেই কিন্তু জন্ম তাদের বাংলাদেশে। আশ্রয় শিবিরে মানবেতর জীবন যাপনের মধ্যেই হবে তাদের জগৎ দর্শন। জায়গা হবে হয়তবা, শতছিন্ন বস্ত্রখন্ডে, শয়ন হবে মাটির নরম ঘাস শয্যায়। পাবে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা, পাবে না উষ্ণ-সেবা, তবুও তারা পৃথিবীতে আসবে। বড় হয়ে জানবে তারা উদ্বাস্তু। অনেকে হয়তবা হারিয়েছে বাবা, দাদা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজন। কার ভাগ্যে কী তারা বলতে পারবেনা। মেয়ে শিশু, কিশোরী, কম বয়সী নারী, মহিলা তাদের কত নিরাপত্তার অভাব। নারী পুরুষ এক কাতারে খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে। বসবাস করছে। পদে পদে ভয়। শুত্রু চারিদিকে থাবা মেরে আছে। অসহায় দুর্বলতার সুযোগ তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলছে। আশ্রয় শিবির, খোলা আকাশ, অবারিত মাঠ, আব্রু বলতে থাকে না, তবুও যাপিত জীবন চলছে ত্রান এবং সাহায্যের জোরে। বাংলাদেশ সিমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গাদের স্থান ক’রে দিয়েছে। সারা বিশ্ব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে। নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানাচ্ছে বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশ সরকার তাদের অসহায় অবস্থায় ঠাঁই দিয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়ের ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছে। তবে কতদিন? কে কতদিন সাহায্য দিবে? সামনে শীতকাল খোলা আকাশের নীচে শিশু, বৃদ্ধ, রোগী তাদের কী অবস্থা হবে? তাদের নিজস্ব দেশ মিয়ানমার কি বুঝবে? তাদের স্বদেশ কি ফিরিয়ে দেবে? চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি তাদের কি প্রাপ্য নয়? এর উত্তর মিলবে কি? মানবতার জয় হবে কি?
রোহিঙ্গা সমস্যা এখন বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হ’য়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের উপর এই বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা সারা বিশ্ব-বিবেককে নাড়া দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধেয়ে আসা লাখ লাখ উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা ক’রে অসীম ধের্য্য, সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বকে অবাক ক’রে দিয়েছে। “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।” তাই যতদিন এই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হয়, ততদিন বাংলার জনগণকে আর্ত-মানবতার সেবায় পাশে দাঁড়াতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা আজ আপনার আমার সকলের। বাংলাদেশ সরকারের সেবা দানের সাথে সাথে জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই সম্মিলিতভাবে সেবা দানে হাত বাড়াতে হবে ।
হেলেন রোজারিও
লেখক ও সাহিত্যিক
আরবি/আরপি/৯ অক্টোবর, ২০১৭