ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ লকডাউন ব্যর্থ হলে অনেক মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশকে।

লকডাউন ব্যর্থ হলে অনেক মূল্য দিতে হবে বাংলাদেশকে।

0
672

লরেন্স রানা, গাজীপুর:

সারা পৃথিবীতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশী, মোট মৃত্যু ১ লাখ ১৭ হাজারে বেশি। আমেরিকা আজ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এর দিক এবং মৃত্যুর সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। অথচ প্রথম সংক্রমণের এক মাসের মাথায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ জন, ৭৬ তম দিনের মাথায় একদিনে সর্বোচ্চ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২,১০৫ জন। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত ৫ লাখ ২০ হাজারের ও বেশি মানুষ।

 স্পেনের এই সংখ্যাটি ছিল ১৩ জন, ৬১ তম দিনের মাথায় এক দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৯,২২২ জন। মৃত্যুপুরী ইটালির প্রথম সংক্রমণের একমাস পর এই সংখ্যাটি ছিল ২৩৮ জন। ৫৩তম দিনের মাথায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় ৬,৫৫৭ জন। ইরানে এই সংখ্যাটি ছিল ১০৪৬ জন। ৪২ তম দিনে এই সংখ্যাটি ছিল ৩১৮৬ জন। যুক্তরাজ্যে প্রথম সংক্রমণের একমাস পর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০ জন, ৬৭ তম দিনে এসে এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৫,৯০৩ জনে।

 চীনের পর সব থেকে বেশি আক্রান্তের দেশ গুলোর ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে প্রথম সংক্রমণের ৩৮ থেকে ৭৬ দিনের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের আঘাতটি এসেছে ।

বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণের ঘটনা ঘটে ৮ মার্চ। ইটালি ফেরত দুইজন এবং তাদের এক জন কন্টাক্ট মোট ৩ জন সনাক্ত হয়। এর পর নিয়মিত ভাবেই কমবেশি রোগী সনাক্ত হতে থাকে। প্রথম সংক্রমণের একমাসের মাথায় বাংলাদেশে এই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৩৩০ জনে। ৩২তম দিনে এসে দাড়ায় ৬২১ জনে। অন্যসব দেশের তথ্য -উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তবে কী আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে! করোনার চুড়ান্ত আঘাতটি কি এই এপ্রিল এর ২০ তারীখের পর হবে নাকি মে মাসের মাঝামাঝি!

আমি বলবো বাংলাদেশে করোনা আঘাত অবশ্যই হানবে। তবে কোনো ভাবেই তা ভয়াবহ হবে না। সংক্রমণের ধর্ম অনুযায়ী মানুষে মানুষে তা অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে একমাত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে, ঘর থেকে না বেরুলে, সরকারের নির্দেশাবলি পালন করলে বিদেশি এই রোগটি থেকে আমরা বেঁচে যাব। বিদেশি রোগ বললাম এই কারণে, রোগটি বিভিন্ন দেশ ঘুরে প্রবাসী বাংলাদেশী, তবলিগ জমাতের লোক বা ওমরাহ হজ্জ এর পুনার্থীদের মাধ্যমে এই দেশে তাদের অজান্তেই চলে এসেছে। দেশে এসে হোমকোয়ারান্টাইন এর বিষয়টিকে সবাই সমান ভাবে গুরুত্ব না দিয়ে অবাদে মানুষের সাথে মিশেছেন। নীরবে নিজের রোগটি পরিবারে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এক পর্যায়ে ক্লাস্টার অর্থাৎ গুচ্ছ সংক্রমণ থেকে তা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, শরীয়তপুর জেলাগুলো এই অবস্থায় সামনের দিকেই। ঢাকার টোলারবাগ, বাসাবো, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীতে সব থেকে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে এবং প্রায় ৭১টি জায়গা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের সরকারি ছুটির সময় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সারাদেশে স্বন্ধ্যা ৬টার পর কাউকে বাইরে দেখলে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলার যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বলতে গেলে দেশকে করোনা মহামারী থেকে বাঁচাতে সরকার সবরকম কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাথে সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য কর্মীরা রাত দিন দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজপথ সহ পাড়ার গলিপথ, দোকান কোথাও মানুষ সরকারের নির্দেশ সঠিকভাবে পালন করছে না।

সবচেয়ে চেয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ এ আটকে পড়া প্রায় ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে। করোনা ভাইরাসের এর সংক্রমণ এই জেলাটিতে তুলনামূলক বেশি হওয়ায় মানুষজন রাতের আধারে নদী পথে এবং অন্য উপায়ে পালিয়ে যাচ্ছে দেশের নানা জেলায়। এমন বহু দলকে আটক করে কোয়ারান্টাইন এ পাঠানো হয়েছে চাঁদপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, কুমিল্লা,পিরোজপুর সহ বিভিন্ন জায়গায়। এর মধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে যাত্রা পথে বা পরিবার ছড়িয়ে দিয়েছেন ভাইরাসটি। এই নারায়ণগঞ্জ সহ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জেলা গুলোকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে অন্তত ২০ দিনের জন্য। নারায়ণগঞ্জ এর নদী পথগুলো কে একেবারে বন্দ করতে হবে। এই সব ব্যপারে সামান্য ভুল কিন্তু পরবর্তীতে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি কথাই শুধু এই মুহূর্তে বলছে আর সেটা হলো নিজের ঘরে থাকা। যতক্ষণ আমরা ঘরে থাকবো এবং অন্যান্ন নির্দশাবলী সঠিকভাবে পালন করবো ততক্ষণ আমরা নিরাপদ থাকবো। সারা পৃথিবী এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে ইতোমধ্যে করোনার বিস্তার কিছুটা কমিয়ে এনেছে। করোনার প্রতিষেধক তৈরী করতে কাজ করছে বিশ্বের প্রায় ২০ টি প্রতিষ্টান এবং তার জন্য সময় লাগতে পারে ১৮-২০ মাস। যেহেতু বিকল্প আর কোন পথ আমাদের জানা নেই তাই ঘরে থাকার বিষয়টি আমাদের নিজেদেরকেই করতে হবে।

এর মধ্যে সরকারের আজকের স্বাস্থ্য বিষয়ক আপডেটে ১৩৯জন নতুন আক্রান্ত আর ৪ জন নতুন মৃত্যুর খবর সবাই শুনেছি। কিন্তু উৎবেগের বিষয় হচ্ছে আক্রান্তের বয়স নিয়ে। যেখানে অন্যসব দেশে অপেক্ষাকৃত বয়স্করা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে তার সম্পূর্ন উল্টো চিত্র। ২১ থেকে ৩০ বছরের আক্রান্তের হার ১৯%, ৩১-৪০ বছরে এই হার ২২%, ৪১-৫০ বছরে এই হার ১৯%। পুরুষদের আক্রান্তের হার ৭০%, আর নারীদের এই হার ৩০%। আইইডিসিআর আজ পরিস্কার ভাবে বলেছে, তরুণরা বাইরে বেশী সময় কাটাচ্ছে বলে তাদের আক্রান্তের হার এত বেশি। তো এখুনি তরুণদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ঘরে থাকবে না কি বাইরে থেকে করোনা ঘরে নিয়ে আসবেন!

বিশ্বের শক্তিধর সবগুলো দেশ করোনায় আজ নাজেহাল হয়ে বাঁচার আকুল চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বুড়ো -প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ঘরে ডুব মেরেছেন। আইনের হাত থেকে বাচার কৌশল জানা বহু রাজনৈতিক নেতা ঘরে বন্ধী দিন পার করছেন। তাদের এখন আর কোথাও দেখা তো দূরের কথা টু শব্দটাও বন্ধ। অথচ আম জনতা দিব্বি হাটে -বাজারে, রাস্তায়, মোড়ে আড্ডা মেরে সরকারের লক ডাউনকে ব্যার্থ করে দিচ্ছে। মানুষের নিয়ম না মানার কারণে এই বাংলাদেশ যদি করোনার মহামারীতে ব্যাপক আক্রান্ত হয় তবে তা অবাক হবার কিছু না। কেননা গত চারদিন ধরে আক্রান্ত এর হার ব্যাপক বাড়ছে যা ধারণার বাইরে। এই চার দিনকে একক ধরে এবং সংক্রমণের সংখ্যা ধরে যদি করোনার সংক্রমণের চুড়ান্ত সময় মে মাসের ১৪-১৫ তারিখ ধরি তবে বাংলাদেশে আক্রান্ত হতে পারি ১ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যু হতে পারে বহু মানুষের। আক্রান্তের বয়সের গড় % দেখে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন এখন কি করবেন।

আক্রান্ত জেলা গুলো বিশেষ করে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। এই দুটি জেলাকে একেবারে বিচ্ছিন্ন না করতে পারলে লক ডাউন এর কোন সুফল আসবে না। একান্ত জরুরী না হলে বাইরে পাওয়া লোকজনকে এখন বড় আকারের জরিমানা করতে হবে। অবশ্য মানবিক কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হতে পারছেন না। কিন্তু এখন আর মানবিকতার সময় নয়, হতে হবে কঠোর। কেননা নারায়নগঞ্জে, ঢাকা থেকে গিয়ে মানুষ প্রতিদিন নতুন নতুন জেলায় রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছে। আজ যেমন নারায়ণগঞ্জের কন্টাকে ঠাকুরগাঁও, ঝালকাঠির, লক্ষীপুর সহ চারটি জেলা আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। লোকজন রাতের আধারে পালিয়ে যাচ্ছে। এই পুরোপুরি বন্ধ না হলে সামনের দিন আরো কঠিন হতে পারে।