ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার শতবর্ষী কেন্ত কখনোই ঔষধ খান না!

শতবর্ষী কেন্ত কখনোই ঔষধ খান না!

0
551

বৃষ্টিভেজা সকাল। চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া নামক চা বাগানে একটি কুঁড়ি দুটি পাতা চায়ের দেশে চা খাওয়ার নিমন্ত্র পেয়েছিলাম। এই বাগানে অধিকাংশ গারোদের বাসসহ অন্যান্য চা জনগোষ্ঠিরাও বাস করে।

সকালের নির্মল আলো ও বৃষ্টির মাঝেও বেরিয়ে পড়চ্ছে চা বাগানের চা জনগোষ্ঠিরা নিত্য দিনের চা বাগানের কাজে।

পথে দেখা হলো চাতালি বন বিভাগ। শোনা যাচ্ছে হরিণ, বানর ও বন মুরগসহ নানা জাতের পাখির ডাক। চোখে পড়ল পথিকের বিশ্রামদাতা সাধু বাবার নামে পরিচিত বিশাল বড় কয়েকটি বট গাছ। কাছে আসতেই শান্তির পরশের ছোঁয়া অনুভব লাগবে।

অনেকগুলো আবাসস্হল দেখে পথে একজনকে জিজ্ঞাসা করে নিলাম, এখানে ডাক পিয়নের বাড়ি কোনটি?

পৌঁছে গেলাম। আমাদের দেখে খুশি হলেন, প্রথমেই চা নিয়ে আসলেন এই বাড়ির কর্তী। এই চা তাদের নিজস্ব তৈরি কোন কারখানার তৈরি নয়। সাধারণত চা বাগানের লোকেরা চা কারখানার চা পান করে না।

তাদের চা প্রস্তুত প্রণালী হলো চা পাতা প্রথমে তুলে টেঁকির সাহায্যে চা পাতাগুলো গুরা করে রোদে শুকানো হয়। শুকিয়ে গেলেই আরো ভালো করে গুরা করে সংরক্ষণ করে। এটাই তাদের কাছে এক নম্বর পরিচ্ছনভাবে তৈরি চা পাতা।

চা পান করার সময় বাহিরে চোখে পড়ল এক বৃদ্ধ লোক দা দিয়ে কি যেন তৈরি করছে। কাছে গিয়ে দেখি বাঁশ দিয়ে ঝাঁটা তৈরি করছে।এই ঝাঁটা ফুলছড়া গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন। মাঝে মাঝে প্রতিবেশি অন্য গ্রামের লোকরাও নিয়ে যায় তার তৈরি ঝাঁটা। কথা বলতে বলতে এই বৃদ্ধ ব্যক্তির নাম জানা গেল কেন্ত চিসিম। বয়সও ১০০ উপরে। পিতা: মৃত দারসাং রিছিল, মাতা: মৃত জৈরনি চিসিম। জন্ম ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের মোঁজাখালি গ্রামে। তিন সন্তানের জনক কেন্ত চিসিম। স্ত্রী ও প্রথম ছেলে আর নেই ইহলোকে। ছোট মেয়ের পরিবারের সঙ্গে আছেন।

১৯৭২ সালের শুরু থেকেই পরিবারসহ চা বাগানে এসে কাজ শুরু করেন। চা বাগানের কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পরই শুরু করেন এই ঝাঁটা তৈরির কাজ।

জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে তার জন্ম ১১ ফ্রেবুয়ারি ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দ, আর্থাৎ ৯১ বছর। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, জন্ম সাল তারিখ আমার সঠিক জানা নেই অনুমান করে জাতীয় পরিচয় পত্রে বসিয়েছে। তবে আমার বয়স ১০০ উপরে।

বর্তমানে বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২ বছর। অথচ এখনো সুস্থ এবং কাজ করে যাচ্ছেন ব্রিটিশ পিরিয়ডে জন্ম নেওয়া এই শতবর্ষী কেন্ত চিসিম। তিনি জানান, মাঝে মাঝে অসুস্থ হলেও কোনো ঔষধ খান না।

বয়সের ভারে এখন বিছানাই পড়ে থাকার কথা তার কাছে উল্টো। সকাল হলেই বিভিন্ন পরিবারের কাছে যায় চা খাওয়ার জন্য ও আলাপ করে সময় কাটানোর জন্য। মাঝে মাঝে তার নাতিরা পাহাড় থেকে বাঁশ এনে দেয় দাদুর জন্য। এই বাঁশ দিয়েই অল্প সময় নিয়ে প্রতিদিনই ঝাঁটার কাজে লেগে পড়েন।

কান্ত চিসিম বলেন, এই বাগানের মানুষগুলো ঘরের আশপাশ পরিস্কার করেই না, তাই জোর করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলি ঝাঁটা নেওয়ার জন্য এবং মাঝে মাঝে দামও রাখি না।

আরবি.এসপি. ১৯ আগস্ট ২০১৮