শিরোনাম :
শতাব্দীর ভয়াবহ তাপদাহে বাংলাদেশ
মৌসুমী মারিয়া রোজারিও।। স্ট্যাফ রিপোর্টার।। ডিসিনিউজ
তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীসহ দেশের দেশের সব অঞ্চলের জনজীবন। একাধিক জেলায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এতে খেটে খাওয়া মানুষ সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছেন। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করেই মাঠেঘাটে কাজ করছেন তারা, চালাচ্ছেন রিকশা, ঠেলাগাড়ি। প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমে মানুষের শরীরের ত্বকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তেমনি বোরো ধানের খেতে ফাটল ধরেছে।
চৈত্রের শেষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভ্যাপসা গরমে হাসফাঁস অবস্থার মধ্যে তীব্র গরমের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান তাপপ্রবাহ আরও এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
হঠাৎ এত গরম কেন?
গরম বেশি পড়লে দেশের সবখানে গরম নিয়ে আলাপ শুরু হয়। যেমন এ বছর বৈশাখ আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল ‘হিট ওয়েভ’। মানে উত্তপ্ত আবহাওয়া সারা বাংলাদেশে বয়ে গেছে। ফ্যান ছাড়লে গরম বাতাস টের পাওয়া যায়। খুব গরম পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরম নিয়ে শোরগোল শুরু হলো। একটা গ্রাফিক ছবি সবাই শেয়ার করল। যেখানে দেখা গেল, এক লোক বিছানায় শুয়ে আছে। গরমে উত্তপ্ত হয়ে টকটকে লাল হয়ে গেছে তার শরীর। সঙ্গে গলে গলে বিছানায় মিশে যাচ্ছে। গরমে সবার কেমন অবস্থা, এই মিম দিয়ে তা বোঝা যায়। এত গরম, যেন শরীর গলে যাবে!
এর মধ্যে পত্রিকায় খবর এল, গত ৫৮ বছরে এত গরম পড়েনি! এই তথ্য জানা গেল বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে। তাঁরা বহু বছর ধরে পৃথিবীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। আবহাওয়াবিদেরা ২০০ বছর ধরে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখছেন। এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। ২০০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা জানেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভবিষ্যৎদ্বাণী করার জন্য বর্তমান আবহাওয়ার রেকর্ড রাখতে হয়। ২০০ বছরের মধ্যে প্রথম ১০০ বছরে কোনো জায়গার স্থানীয় আবহাওয়া কয়েক ঘণ্টা বা এক দিন আগে বলে দিতে পারতেন তাঁরা। রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, ঝড়ের পূর্বাভাস, বরফ কতটুকু পড়বে এসব। আর ১০০ বছর ধরে আবহাওয়া অনুমান মডেলগুলো এত উন্নত হয়েছে, কয়েক দিন আগেই সুনিশ্চিতভাবে যেকোনো জায়গার আবহাওয়া কেমন হবে বলে দেওয়া যায়। তাছাড়া একটু ইন্টারনেট খুঁজলেই তা পাওয়া যাবে। এছাড়া সবখানেই এখন আবহাওয়াকেন্দ্র আছে। কেন্দ্র থেকে তথ্য নিয়ে মডেলগুলো এই ভবিষ্যদ্বাণী করে।
নাসা পৃথিবীর ভ‚মি, বায়ুমন্ডল, মহাসাগর ও বরফ সম্পর্কে অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার করে। নাসার দেওয়া তথ্যমতে, পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ হয়ে উঠছে। কখনো আবহাওয়া, কখনো জলবায়ু বললে গোলমাল লেগে যেতে পারে। সহজ করে বললে, ৩০ বা তার বেশি বছরের কোনো স্থানের গড় আবহাওয়া হলো জলবায়ু। আবহাওয়া বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়। কখনো খুব ঝড়, কখনো অতিবৃষ্টি, আবার অস্বাভাবিক গরমকে চরম আবহাওয়া বলা যেতে পারে। আর জলবায়ু চট করে বড় পরিবর্তন হয় না, আবহাওয়া হয়। দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। জলবয়ুর পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে। সাধারণত এক দিকে ঝুঁকিতে থাকে। যেমন বর্তমানে পৃথিবীর জলবায়ু ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে। আমাদের বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর জলবায়ুকে উষ্ণ করে তুলছে। গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে সূর্যের তাপ আটকে রাখে।
বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর জলবায়ুকে উষ্ণ করে তুলছে। গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে সূর্যের তাপ আটকে রাখে। বায়ুমন্ডলে কিছু গ্রিনহাউস গ্যাস থাকা স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উষ্ণতা প্রয়োজন আছে। কিন্তু অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস অতিরিক্ত উষ্ণতা সৃষ্টি করে। কয়লা ও তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বেশ কয়েকটি মিশনে নাসার এমন যন্ত্র রয়েছে, যা বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মাপে। এ ছাড়া পৃথিবীতে ২০০ বছরের আগে (কত আগে তুমি কল্পনা করতে পারো?) জলবায়ু কেমন ছিল, তা দীর্ঘকাল ধরে পরিবেশ-প্রকৃতিতে থাকা বস্তু থেকে জানা যায়। বিজ্ঞানীরা জীবিত বয়সী গাছগুলো নিয়ে গবেষণা করে শত শত বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু কেমন ছিল, তা বলতে পারেন। কয়েক হাজার থেকে মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু কেমন ছিল, জানতে বিজ্ঞানীরা পলি ও বরফের কোর বিশ্লেষণ করেন। ফলে হ্রদ বা সমুদ্রের তল থেকে আসে। অ্যার্ন্টারটিকার মতো জায়গায় বরফের পৃষ্ঠের একদম নিচে কখনো কখনো মাইলখানেক গভীর থেকে বরফের কোরে প্রতিবছর স্তরে স্তরে বাতাসের বুদ্বুদ আটকে থাকে। প্রতিটি স্তরের বুদ্বুদকে বাতাসের বিশ্লেষণ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দেখা হয়। যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ু গবেষণার জন্য গাছ, বরফের কোর হ্রদ এবং সমুদ্রের পলি ব্যবহার করেন তাদের প্যালিওক্লাইমেটোলজিস্ট বলা হয়। তাদের কাছে রেফারেন্স ভ্যালু থাকে। নিজেদের পরীক্ষায় পাওয়া ভ্যালু মিলে গেলে গবেষণা সফল বলে ধরা হয়। আর যদি না মিলে, তখন আরও পরীক্ষা করা হয়।
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ সেই পরিচিতি ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয় ৪৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এসে নথিভুক্ত করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল নথিভুক্ত করা হয় বিগত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে। তাপমাত্রার এই পরিসংখ্যানে আপাতদৃষ্টিতে যদিও মনে হচ্ছে তাপমাত্রা কমছে কিন্তু বস্তুত অতীতের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিলো কম, অথচ বর্তমানে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি। কেননা, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড গবেষণায় দেখা যায়, শুধু ঢাকা শহরেই মে মাসের গড় তাপমাত্রা ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ওই মাসের তুলনায় বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২০০৯ প্রেক্ষিত)। নভেম্বর মাসে এই তাপমাত্রা ১৪ বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবহাওয়া অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়। গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০.৫%। এমনকি ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২১০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাপমাত্রা বাড়ার ঘটনাটি অনেকটা সম্পূরক হারে ঘটবে। কেননা বাড়তি তাপমাত্রার কারণে পানির বাষ্পীভবন বেড়ে যাবে এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়িয়ে দিবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়া। আর্দ্র বাতাসের প্রভাবে প্রকৃত তাপমাত্রা না বাড়ালেও অনুভ‚ত তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। ফলে তাপমাত্রার তুলনায়ও বেশি গরম অনুভ‚ত হবে। ইতোমধ্যেই একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আর্দ্রতার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১০-১৫ ভাগ এবং ২০৭৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তা প্রায় ২৭ ভাগ বেড়ে যাবে। ফলে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেড়ে যাবে চরম হারে। এই আর্দ্রতা গরম বাড়িয়ে দিবে। উল্লেখ্য, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা’র মতে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ ছিল ২৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতম বছর, আর ২০০১ থেকে ২০১০ সময়টুকু ছিল বিশ্বের উষ্ণতম কাল।
গ্রীষ্মকালে যেখানে তাপমাত্রা বাড়বে, শীতকালে ঠিক একইভাবে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমবে। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের পর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে প্রচন্ড শ্বৈতপ্রবাহের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। শ্রীমঙ্গলে নথিভুক্ত করা হয় ৬.৪ডিগি সেলসিয়াস। পরিবেশ ও জলবায়ুবিদদের মতে, এসময় অনুভ‚ত তাপমাত্রা হয়েছিল আরো কম।
মরুকরণ ও বৃক্ষনিধন
ব্যাপক খরা’র জন্য দায়ী মরুকরণ। দিনে দিনে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে, সময়মত হচ্ছে না বন্যা। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৩০০ মিলিমিটার, বরেন্দ্র এলাকায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১১৫০ মিলিমিটার। এরকম স্বল্প বৃষ্টিপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়ে খরায় আক্রান্ত হবে বিপুল সংখ্যক মানুষ, এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লোকই বেশি। এরকম খরায় কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার ব্যাপারে বিভিন্ন উৎস থেকে আলাদা আলাদা উপাত্ত পাওয়া যায়। কারো মতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ খরায় উদ্বাস্তু হবে প্রায় ৮০লক্ষ মানুষ।
এছাড়া বিগত দুই মাসে উন্নয়নের নামে শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটিতে। আরও কিছু গাছ রয়েছে কাটার অপেক্ষায়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র যেখানে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ২ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়ে পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন সেখানে উন্নয়নের অজুহাতে শতাধিক গাছ কেটে ফেলা স্ববিরোধী কি না প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীর সাতমসজিদ রোডে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা না থামতেই একই বিতর্কে জড়িয়েছে উত্তর সিটি। অথচ সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় নিজের অবস্থান জানিয়ে বলেছিলেন, গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন নয়। ডিএনসিসি এলাকায় বিনা অনুমতিতে গাছ কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটির মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত সড়ক বিভাজনে থাকা কৃষ্ণচ‚ড়া, বটসহ শতাধিক পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটায় ছায়া-সুশীতল সড়কটি এখন দিনভর তপ্ত হয়ে থাকে গনগনে সূর্যের তাপে। স্থানীয়রা বলছেন, একদিকে মেয়র গাছ লাগানোর প্রকল্প নিচ্ছেন, অন্যদিকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৩৫.৭১ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৩১ শতাংশে। ফলে গ্রীষ্মের দাবদাহে রাজধানীর দুই সিটিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। মরুভূমি এলাকার মতো অসহ্য গরমে ভুগতে হচ্ছে নাগরিকদের। রাজধানী থেকে নির্বিচারে গাছপালা কেটে ফেলা এবং জলাশয় ভরাট এ অস্বস্তিকর অবস্থার উদ্ভব ঘটিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র সবুজ পরিবেশ সৃষ্টির যে অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তবে এ বিষয়ে শুধু মেয়র নয়, সবাইকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। মেয়র লাখ লাখ গাছ রোপণের কথা বলবেন আর অন্যরা বৃক্ষ নিধন অভিযান চালাবেন তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানারকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শ্বাসকষ্ট, হীটস্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা তীব্র ঠান্ডাজনিত মৃত্যু ইত্যাদি এখন খুব সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-প্রভাব নিয়ে করা তাদের গবেষণা রিপোর্টে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে যেসব রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে, সে সম্বন্ধে উল্লেখ করেছে- সংক্রমণ ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ধরনে পরিবর্তন আসবে, তাপপ্রবাহে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে সরাসরি জখমের সংখ্যাও বাড়বে। তা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে শারীরিকভাবে আহত হোন শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধগণ। এছাড়া বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শিশুরা মানসিকভাবেও হয়ে পড়ে পর্যুদস্ত। বিপুল মানুষ নিজস্ব আবাস ছেড়ে উদ্বাস্তুর জীবনে পদার্পণ করায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে গর্ভবতি মায়েদের জীবনে। তারা পাননা ন্যূনতম স্বাস্থ্য-সুবিধা, ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান জন্ম দেওয়া, লালন-পালনের কারণে অনায়াসেই সন্তানের শরীরে জায়গা করে নেয় নানা রোগব্যাধী। এছাড়া উদ্বাস্তু জীবনে বয়ঃসন্ধিকালে, কিশোর-কিশোরীরা পায়না উপযুক্ত নূন্যতম পরিবেশ।
তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
গ্রীষ্মের প্রথম দিকে তেমন গরম অনুভ‚ত না হলেও জ্যৈষ্ঠের সাথেই শুরু হয়েছে দাবদাহ। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশেই পারদ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া অফিস থেকেও জানানো হয়েছে আগামী দুই দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। পূর্বাভাস বলছে চলমান দাবদাহ আরো চার দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমন গরমে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে লোকজন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি। শারীরিক পরিশ্রম সীমিত করুন, বিশেষ করে দিনের মাঝখানে যখন তাপমাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। একটি শীতল ঝরনা বা স্নান নিন, অথবা একটি ভেজা তোয়ালে দিয়ে ঠান্ডা করুন।
তীব্র গরমের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার ১০ উপায়
১. পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন।
২. বাড়ির বাইরে থাকার সময় সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩. শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করতে হবে।
৪. স্যালাইন পানিতে থাকা সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও চিনি শরীর সজীব রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে স্যালাইন পান করুন।
৫. গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি তাজা জুস পান করুন।
৬. মাংস এড়িয়ে বেশি করে ফল ও সবজী খান।
৭. প্রস্রাবের রঙ খেয়াল করুন। প্রস্রাবের গাঢ় রঙ পানি স্বল্পতার লক্ষণ।
৮. সব সময় ছাতা বা টুপি সাথে রাখুন।
৯. ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
১০. চেষ্টা করুন যেন দিনে কম বাইরে যেতে হয়।