শিরোনাম :
শরীরের জন্য দইয়ের ভূমিকা
দই নিয়ে হইচই এই বঙ্গদেশে কম হয়নি। বগুড়ার দইয়ের কথা সবাই জানেন। কিন্তু দেশের অন্য অঞ্চলেও যে খাঁটি দই হয় সে কথা মানেন ক’জন? মানলেও বিতর্ক পিছু ছাড়ে না। গরুর দুধ নাকি মহিষের দুধের দই ভালো? টক দই নাকি মিষ্টি দই উপকারী? ঘরে পাতা দইও অনেকের প্রিয়। সেক্ষেত্রে অনেক গৃহিণীর আক্ষেপের শেষ নেই- শত চেষ্টা করেও দই জমছে না কেন? এজন্য অবশ্য ইন্টারনেটে রয়েছে কম করে হলেও শত পরামর্শ। সুতরাং সেই নেট দুনিয়ায় না হয় আরেকটি পরামর্শ যোগ করি। চলুন জেনে নেই দইয়ের গুণ।
* দই হজমে সহায়তা করে। এর ল্যাকটোবেসিলিসের মতো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যেগুলো প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত, তারা পেটের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বিতাড়িত করে। উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো হজমের সমস্যা দূর করে ও শরীরের জন্য ভিটামিন ‘কে’ তৈরি করে।
* প্রতিদিন দই খেলে হৃদরোগ প্রতিরোধ হবে। কারণ দই শরীরের কোলেস্টেরল দূর করে ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিহত করে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও দই সহায়ক।
* দইয়ে অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। ভিটামিন বি-টুয়েলভ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংকসহ বেশ কিছু ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ক্ষুদ্র পুষ্টি উপাদানের অভাবে যারা ভোগেন তাদের জন্য দই চমৎকার ওষুধ।
* দই শরীরের বাড়তি ওজন কমিয়ে দেয়। পেট ও হৃদপিণ্ডের চর্বি জমার জন্য দায়ী হরমোন কোরটিসোল কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীর থেকে জাংক ফুডের ক্ষতিকর উপাদানও বের করে দেয় দই।
* হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে দইয়ের ভূমিকা আছে। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে। জাপানে এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন দই খাওয়ার ফলে মানুষের মুখের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। মুখে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে দই। এতে দন্তক্ষয় ও মাড়ির রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে।
* প্রতিদিন দই খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। গবেষকরা বলছেন ৪ মাস ধরে প্রতিদিন দুই কাপ করে দই খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৫ গুণ বেড়ে যায়।
* দই যৌন জীবনের জন্যও উপকারী। নিয়মিত দই খেলে দৈহিক মিলনে নিজেকে পুরোপুরি খুঁজে পাবেন। এমনকি পুরুষত্বহীনতা দূর করা ও বীর্য উৎপাদনেও দই ভূমিকা রাখে।
* চেহারার উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে দই। প্রতিদিন দই খেলে খুব সহজেই লাবণ্য, সৌন্দর্য দেখা দেবে চেহারায়। এর কারণ হলো দইয়ে প্রচুর ভিটামিন-ই, জিংক, ফসফরাসসহ আরো কিছু মাইক্রো মিনারেল থাকে, যেগুলো ত্বক উজ্জ্বল করে ও মুখের ব্রণ দূর করে। চেহারায় বয়সের ছাপও কমায়। এটি খুব ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার।
* রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়া রোধ করে দই। এক্ষেত্রে অ্যালোভেরা উপকারী হলেও তা সহজে পাওয়া যায় না, দামও বেশি। তাই হাতের কাছে থাকা দই শরীরে রোদে পুড়ে যাওয়া অংশে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
* দই হতাশা নিরাময়কারী। কোরটিসোল হরমোনের কারণে যে হতাশা তৈরি হয় দই তা কাটিয়ে তোলে। প্রতিদিন দই খেলে মাথা ঠান্ডা থাকে।
* আপনার মাঝে যদি ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, তাহলে দই খান। এতে খাওয়ার আগ্রহ ফিরে পাবেন।
* যদি শরীর থেকে রক্তপাত হয়, তাহলে দই খান। দইয়ের ভিটামিন-কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
* মহিষের দুধের চেয়ে গরুর দুধ থেকে তৈরি দই তুলনামূলভাবে উত্তম। কারণ মহিষের দুধে অতিরিক্ত ফ্যাট ও প্রোটিন থাকায় অনেকেই খেয়ে বদহজমের অভিযোগ করেন। বয়স্ক ও ছোটদের মহিষের দুধ বা সেই দুধের তৈরি দই না খাওয়াই উচিত।
* দই টাটকা খাওয়া উচিত। কারণ কয়েকদিনের সংরক্ষিত দইয়ে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই দই তৈরির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।
* যারা দুধ খেতে পারেন না, তারা দই খেতে পারবেন। দুধ খাওয়ার পর অনেকেই হজম করতে পারেন না, এতে ডায়রিয়া বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তবে দই খেলে এ ধরনের সমস্যা হয় না।
আরবি/আরপি/৮ নভেম্বর, ২০১৭