শিরোনাম :
শায়িত হলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য রুবেন গমেজ: ঢাকা ক্রেডিটের শ্রদ্ধা নিবেদন
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
তেজগাঁও ধর্মপল্লীর কবরাস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও প্রাক্তন উন্নয়নকর্মী রুবেন গমেজ।
বিকাল সাড়ে ৫টায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই। এরপর প্রয়াতের আত্মীয়স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের চোখের জল ও শ্রদ্ধায় তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
১৯৩৪ সালের ২১ এপ্রিল জন্ম নেওয়া রুবেন গমেজ ৮৭তম জন্মদিনের দুইদিন আগে ১৯ এপ্রিল সকাল ১১ টায় ইমপালস হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খ্রিষ্টযাগে উপস্থিত ছিলেন রুবেন গমেজের স্ত্রী খ্রিষ্টীনা রেনু গমেজ, ছেলে সেন্ট খ্রিষ্টীনা চার্চের পাল-পুরোহিত ডেভিড শ্যামল গমেজ, প্রয়াতে অন্যান্য ছেলেমেয়ে, ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ, তেজগাঁও চার্চের পাল-পুরোহিত সুব্রত বি. গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, সাধু জন ভিয়ানী হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ফাদার কমল কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর সজল যোসেফ গমেজ, পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিন্টু সি. গমেজ, কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিওসহ অসংখ্যা ব্রতধারি-ব্রতধারিনীসহ আরও অনেকে।
তাঁর মৃত্যুতে সমাজের ব্যাপক শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা। তিনি বলেন, ‘রুবেন গমেজ ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাতিষ্ঠাকালীন ৫০ জন সদস্যের মধ্যে একজন। যা সত্যিই গর্বের বিষয়। তিনি ঢাকা ক্রেডিটের পথ চলায় অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। এছাড়াও একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে তিনি সমাজের সেবা করে গেছেন অকাতরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রুবেন গমেজ যেমন ছিলেন একজন ধার্মিক ব্যক্তিত্ব, তেমনি একজন দক্ষ সংগঠক ও সমাজকর্মী। তাঁর কাজ আমাদের জন্য সব সময় শুভময় ছিল। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে থাকবে চিরকাল। ঈশ্বর তাঁর এই সন্তানকে নিজের কোলে আশ্রয় দিয়েছেন এই বিশ্বাস করি।’
এছাড়াও তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ও সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া যৌথবিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য রুবেন গমেজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করি। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। তাঁর শোকার্ত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। মহামানবের মৃত্যু আমাদের সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, যা সহজে পূরণ হবার নয়।’
খ্রিষ্টযাগে আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রজ বলেন, ‘রুবেন গমেজ ছিলেন একজন ধার্মিক ও নিষ্ঠাবান মানুষ। তিনি সব সময় সমাজের উন্নয়ন চিন্তা করে গেছেন। তাঁর অবদান আমরা সব সময়ই স্মরণ করবো।’
রুবেন গমেজের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও। তিনি এই সমাজকর্মীর আত্মার চিরশান্তি কামনা করে বলেন, ‘রুবেন গমেজ আমাদের মাঝে আজ আর নেই। কিন্তু তাঁর কাজ আমাদের সারাজীবন মনে থাকবে। ঈশ্বর তাঁর আত্মার চিরশান্তি দান করুন।’
ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ শোক প্রকাশ করেছেন রুবেন গমেজের মৃত্যুতে। তিনি বলেন, ‘রুবেন গমেজ ছিলেন সমাজ উন্নয়নের একজন নির্ভীক সৈনিক। তাঁর চিন্তাধারা আমাদের সমাজে আজীবন অনুরোণিত হবে। রুবেন গমেজের ধার্মিক জীবনের দৃষ্টান্তও আমাদের আদর্শ হয়ে থাকবে। রাজাবাজারে যে চ্যাপেল নির্মাণ হয়েছে, তাঁর পেছনে রুবেন গমেজের অনন্য অবদান রয়েছে। আমরা তাঁর আত্মার কল্যাণ কামনা করি।’
এ ছাড়াও কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন রোজারিওসহ অনেকে প্রয়াতে জীবনাচরণ নিয়ে সহভাগিতা করেন।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য রুবেন গমেজের মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও।
রুবেন গমেজ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিগত দশদিন প্রথমে গ্রীণ লাইফ হাসপাতাল, পরে ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবশেষে পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান তিনি।
রুবেন গমেজ ছিলেন দেশসেরা সর্ববৃহৎ সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তাঁর সদস্য নম্বর ছিল ২৯। পেশা জীবনে তিনি কারিতাস বাংলাদেশে প্রাক্তন কল্যাণ পরিচালক ও খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সেবা দিয়েছেন।
মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী খ্রিষ্টীনা রেনু গমেজ, তিন ছেলে সেন্ট খ্রিষ্টীনা চার্চের পাল-পুরোহিত ডেভিড শ্যামল গমেজ, জুলিয়ান গমেজ, জর্জ গমেজ ও মেয়ে সিনথিয়া গমেজ।