শিরোনাম :
শুন্য গির্জা: কেমন হবে এবারের ইস্টার সানডে?
সুমন কোড়াইয়া:
কোভিড-১৯ এর কারণে গির্জাগুলো ফাঁকা। শুধু দেশে কয়েকটি ধর্মপ্রদেশ থেকে মাঝে মধ্যে অনলাইনে খ্রিষ্টযাগ লাইভ দেখানো হচ্ছে। সেখানে খ্রিষ্টক্তরা অংশ নিচ্ছেন।
এক মাস আগে ৮ মার্চ প্রথম দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সনাক্ত হয়। এক মাসের মধ্যে এই সংখ্যা ২১৮ জন। মারা গেছেন ২০ জন। সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৩৩ জন। ভয়াবহতা প্রথম সাধারণ মানুষ বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছেন।
কোভিড-১৯ বা করোনা জ্বরে আক্রান্ত গরিব, ধনী সব দেশের মানুষ। মারা গেছেন প্রায় ৮৮ হাজারের বেশি মানুষ। এই মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে কেউ জানে না। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এই রোগে আক্রান্ত। বস্তির শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রনায়ক সবাই আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে। কাউকে ছাড় দিচ্ছে না নতুন এই রোগ।
পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস মহোদয় বাড়িতে বসে পুণ্য সপ্তাহে প্রার্থনা করতে বলেছেন। ডিজিটাল যুগে অনেকে ফেসবুকে সরাসরি পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিসের দেওয়া উপাসনায় অংশ নিচ্ছেন। তবে মোটা দাগে বলতে হচ্ছে, এবার ঘরে বসেই প্রার্থনা করে বা অনলাইনে খ্রিষ্টযাগে অংশ নিয়ে যিশুর পুনরুত্থান উৎসব বা পাস্কা পর্ব উদযাপন করতে হবে। ইতিমধ্যে তালপত্র রোববার আমরা পার করেছি। আজ পুণ্য বৃহস্পতিবার। যিশুর শেষ ভোজ, যেখানে যিশু তাঁর বারজন শিষ্যকে পা ধোয়ে দিয়েছিলেন। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে, খ্রিষ্ট মন্ডলীর স্মরণকালে এবারই প্রথম যাজকগণ পা না ধোয়ে প্রভুর শেষ ভোজ অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন।
এবারই প্রথম কাথলিক খ্রিষ্টভক্তরা যাজকের নিকট ‘পাপস্বীকার’ না করে বড় কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছেন।
ইস্টারের আগে আমরা কী কিছুটা অন্যরকম অনুভব করছি? নিশ্চয়। অদ্ভুত এক ইস্টার সানডে হতে যাচ্ছে এবার। করোনার জন্য আমরা সবাই আতংকে আছি। এক অজানা আশংকা কাজ করছে আমাদের মাঝে।
স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া যাবে না ইস্টারের আনন্দ উদযাপনের জন্য। থাকতে হচ্ছে গৃহের মধ্যে বন্দি হয়ে।
যাঁরা আমরা কখনো মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করি নাই, তাঁরাও মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করছি। চিন্তা করছি উত্তর প্রজন্মের জন্য। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে কী হবে তা আমাদের গভীরভাবে ভাবিত করছে।
আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি পুনরুত্থান রোববারের। বাজ্যিকভাবে আমরা নতুর কাপড় পরে, দই-মিষ্টি-চিড়া, সুস্বাদু খাবার খেয়ে ইস্টারের উৎসব উদযাপন করি। আধ্যাত্মিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করি। এবারও হয়তো করবো। তবে আগের বছরগুলোর মতো হয়তো হবে না। মনে ভেতর চাপা কষ্ট, প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, আমরা কোনো দিকে যাচ্ছি? আমরা কী বড়দিনের আগেও এরকম কিছু হবে এটা ভেবেছিলাম?
ভাবি নাই। করোনা আমাদের সামনে যুদ্ধের ডামাডোল নিয়ে এসেছে। এই যুদ্ধে নেই গোলাগুলি, বোমা বর্ষণ। আফ্রিকাতে চলছিলো বিভিন্ন গোষ্ঠির সাথে সংঘর্ষ। করোনার কারণে সেই সংঘর্ষও বন্ধ। এখন আমাদের যুদ্ধ করোনার সাথে। একটি ক্ষুদ্র ভাইরাসের সাথে। যা খালি চোখে দেখা যায় না। সরকার প্রতিনিয়ত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, করোনা থেকে বাঁচর পথ বাতলে দিচ্ছেন। যুদ্ধে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আসুন আমরা সেগুলো মেনে চলি।
আসুন আমাদের অপরাধের জন্য ইস্টারের আগে ঈশ্বরের নিকট প্রাণপ্রণে ক্ষমা চাই। নিজেদের পাপের পথগুলো বন্ধ করি। নম্র হই ঈশ্বরের নিকট। নম্র হই অন্যের নিকট। হই পরিশুদ্ধ। আশীর্বাদ চাই গোটা মানব জাতির জন্য। এই করোনা থেকে নিজেদেরকে যেন রক্ষা করতে পারি।
আসুন ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করি, কোভিড-১৯ এর মহামারী যেন দ্রুত শেষ হয়। এই রোগের জন্য যাঁরা প্রতিষেধক, ওষুধ তৈরির জন্য কাজ করছেন, ঈশ্বর যেন তাঁদের প্রজ্ঞা দান করে। তাঁরা যেন দ্রুত সফল হন। আসুন আমরা সকলে হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার নিকট আকুল আবেদন করি, তিনি যেন আমাদের রক্ষা করেন।
সকলের ইস্টার শুভ হোক। শুভ পাস্কা!