শিরোনাম :
শেষ হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা
শেষের পথে বাংলা একাডেমির বাঙালির প্রাণের একুশের গ্রন্থ মেলা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর বাংলা একাডেমির সামনে আয়োজন করা হয় এই গ্রন্থমেলার। ফেব্রুয়ারি মাসে লেখক এবং পাঠকের একটি মিলন স্থান হয়ে ওঠে বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত একুশে গ্রন্থমেলা।
একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ এর শেষের দিকেও মেলায় রয়েছে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীর। ডিসিনিউজের প্রতিবেদকের ক্যামেরা এবং তথ্যের ভিত্তিতে এবারের একুশে গ্রন্থমেলার শেষ পর্যায়ের চিত্র নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
ঢাকার বাংলা একাডেমির চত্বরে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মোট বরাদ্দ হয়েছে ৭১৯টি স্টল। তন্মধ্যে বাংলা একাডেমি বরাদ্দ নিয়েছে ১৩৬টি, যেখানে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯২টি। অপর দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে ৫৮৩টি স্টল, সেখানে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩৩৬টি। মূলত এরাই ছিল ২০১৮ সালের বইমেলার আয়োজক। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮-এর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির পরিচালক তথা সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ ডিসিনিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এই বইমেলার আয়োজন করি শুধু বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশের জন্যই নয় বরং সবাই যেন বই মনষ্ক হয়ে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্র্চা বৃদ্ধি করে। কারণ আমাদের বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে আরো অনেক সংস্কৃতি প্রবেশ করেছে।’
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে তরুণদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাই বেশি। বইগুলো তরুণদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গ্রন্থমেলায় বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে, বলেন ড. জালাল আহমেদ।
নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, অন্যান্য বছরের চেয়ে নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর লোক এবার ছিল তুলনামূলক বেশি। মেলার শেষদিন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
অমর একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১৭৩, ১৭৪ নম্বর ‘বেহুলা বাংলা’ স্টলের ম্যানেজার ভিক্টরের সাথে কথা বলে জানা গেল যে, বেহুলা বাংলা প্রকাশনী নতুন লেখকদের উদ্বুদ্ধ করে থাকে। নতুনদের বেশি সুযোগ দিয়ে থাকে। এ বছর তারা চল্লিশের অধিক নতুন লেখকের বই প্রকাশ করেছেন। আরেকটি বিষয় যা প্রশংসার দাবিদার ‘বেহুলা বাংলা’ ৭১টি বই প্রকাশ করেছে যা সবই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক। একে ৭১ সিরিজ বলা হয়।
অপর দিকে বাংলার নন্দিত কথা সাহিত্যিক এবং কিংবদন্তি এবং তরুণদের প্রাণপ্রিয় লেখক হুমায়ন আহমেদের বইগুলো সংস্করণ করে যাচ্ছে ‘অন্য প্রকাশ’ প্রকাশনী। সেখানে সারা মাসব্যাপী বইপ্রেমীদের ভিড় ছিল। কেউ কেউ দাবি করেন, ‘অন্য প্রকাশ’ প্রকাশনী এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বই বিক্রয় করেছে।
এবারের বইমেলায় যে ধরনের বইগুলো নতুন প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গল্প ৬১৪টি, উপন্যাস ৫৮৭টি, প্রবন্ধ ২৩২টি, কবিতা ১,৩৩৫টি, গবেষণা ১০৯টি, ছড়া ৯৯টি, শিশু সাহিত্য ১৪৪টি, জীবনী ৯৫টি, রচনাবলী ১৫টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৮২টি, নাটক ২২টি, বিজ্ঞান ৬৪টি, ভ্রমণ ৮৯টি, ইতিহাস ১০৫টি, রাজনীতি ১৭টি, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ৩২টি, রম্য/ধাঁধাঁ ১৯টি, ধর্মীয় ২১টি, অনুবাদ ৪১টি, অভিধান ৭টি, সায়েন্স ফিকশন ৫০টি, অন্যান্য ৩৮৪টি। কম্পিউটার বিষয়ে কোনো বই প্রকাশ পায়নি এই বইমেলা।
১৯৫৫ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে বাংলা একাডেমি আয়োজন করে আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যেখান থেকে জ্ঞানপিপাসু বাঙালি বই ক্রয়-বিক্রয়, বই প্রকাশ, সুন্দর মনের বিকাশ, নিজেকে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, ঔপ্যনাসিক হিসেবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করছে নিজেকে এবং মানুষকে জ্ঞানপিপাসু করে তুলছে।
আরবি.আরপি.২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮