শিরোনাম :
সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) এর ৫৭তম বার্ষিক সাধারণ সভা-২০১৭।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) তেজতুরীবাজার ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান কার্যালয়ের বিকে গুড কনফারেন্স হলে ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজের সভাপতিত্বে এবং পরিবার ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপির প্রধান আতিথ্যে এই বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও কাক্কোর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, কালিগঞ্জ থানার চেয়ারম্যান জনাব মোয়াজ্জেন হোসেন পলাশ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি তথা ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিউবার্ট গমেজ, খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল হেমন্ত আই. কোড়াইয়াসহ ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তা এবং এজিএমের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বার্ষিক সাধারণ সভা সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল করতে ঢাকা ক্রেডিটের কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
সভার শুরতে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা, সমবায়ী পতাকা, এবং ঢাকা ক্রেডিটের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ এবং মৃত কর্মকর্তা ও সদস্যদের অত্মার কল্যাণে নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট গমেজ বলেন, ‘আশা করি আজকের সাধারণ সভার আলোচনা ও দিকনির্দেশনা ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘ আজকের এই সুন্দর দিনে বেদনা ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে চাই, ঢাকা ক্রেডিটের প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের বার্ষিক সাধারণ সভা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে করতে হচ্ছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, আদালতের রায় মোতাবেক ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ঢাকা ক্রেডিটের ৬২ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল- ডেভিড কোড়াইয়া, সুজন ডেনিস কোড়াইয়া, গাব্রিয়েল রোজারিও গংদের মামলার কারণে ৬ জানুয়ারি নির্ধারিত নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এর পর সুজন ডেনিস কোড়াইয়ার রীট থেকে উদ্ভুত আপীল মামলা সিএমপি ০৮/২০১৭ এর শুনানীঅন্তে সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সমবায় বিধিমালা ২০০৪ এর ২১ বিধি মোতাবেক ১৫ জানুয়ারি প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করার আদেশ প্রদান করেন। এতে সাধারণ সদস্যরা দারুণভাবে আহত হন এবং তাদের সরিসরি ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় প্রচন্ডভাবে ক্ষুদ্ধ হন।
তিনি জানান, একটি বিশেষ মহলের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের নীল নকশা অব্যাহত রয়েছে।
ষড়যন্ত্রকারীরা ফেইসবুকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অপ্রচার এবং খ্রিষ্টান সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার কাজ করে যাচ্ছে তা ইতিহাসের একটি কলঙ্কের রেকর্ড বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট গমেজ।
এ সময় তিনি ক্রেডিটের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন।
সাধারণ সভায় কালীগঞ্জের চেয়ারম্যান পলাশ বলেন, ‘ক্রেডিট ই্উনিয়নের মাধ্যম্যেই প্রাশ্চাত্যে উন্নয়ন এসেছে। বাংলাদেশেও তাই করতে হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নশীল দেশ গড়ার জন্য যে সহযোগিতা তার প্রতিটি পদক্ষেপ এই ক্রেডিট ইউনিয়নের কার্যক্রমে রয়েছে। আপনারা সরকারের মিশনের পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সকল প্রকার উন্নয়ন করবেন বলে আমরা আশা করছি।’
এ দিন হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান পিউরীফিকেশন বলেন, আমরা একটি নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আজ বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত হয়েছি। আইনের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই আজ প্রতিনিধিদের নিয়ে সাধারণ সভা করতে হচ্ছে। আপনারা জানেন কী কারণে এভাবে প্রতিনিধিদের নিয়ে এজিএম করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বোর্ড নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা এবং কর্মকৌশল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন মহলেও তার প্রশংসা পাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি।’
এদিন কাককোর চেয়ারম্যান রোজারিও বলেন, ‘আমরা সকলেই জানি কিসের প্রেক্ষাপটে এভাবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ সভা করতে হয়েছে। সুজন ডেনিস কোড়াইয়া, ডেভিড কোড়াইয়া এবং গাব্রিয়েল গংদের ষড়যন্ত্রের কারণে আমরা আইনের বেড়াজালে আটকা পড়ে গিয়েছি, যে কারণে সবাইকে নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পারছি না।’
তিনি উপস্থিত প্রতিমন্ত্রী চুমকীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মন্ত্রীপরিষদ সমবায় সমিতিতে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন এবং সাধারণ সভা করার ধারাটি পরিবর্তন করবে বলে আশা রাখছি।
বর্তমান বোর্ডের কোনো অভিপ্রায় নেই বা এই বোর্ড চায়ও না প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন এবং সাধারণ সভা হোক। শুধু মাত্র ডেভিড, সুজন কোড়াইয়া এবং গাব্রিয়েল রোজারিও, আব্রাহাম গোমেজ, দীপক পিরিছদের কারণে এভাবে আজ সদস্যদের বাদ দিয়ে নির্বাচন ও সাধারণ সভা করতে হচ্ছে।
তিনি সোচ্চার হয়ে বলেন, ‘মুষ্ঠিমেয় কয়েকটি মানুষের কারণে সদস্যদের স্বার্থ এবং সমাজের সুনাম নষ্ট হতে পারে না। আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী চুমকী বলেন, ‘আইনের একটা মারপ্যাচে আজকের এই প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন হচ্ছে। ভালকিছু করতে চাইলে, মানুষ পেছনের লাগবেই। মানুষও মিথ্যায় কান দেয়, আর সত্যি জেনে ফিরেও আসে। ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যা বলে উন্নয়নকে ব্যাবহত করবেই। তবে আমি সমবায় মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন ও সাধারণ সভা করার ধারাটি পরিবর্তনের বিষয়ে কী করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সমবায়ের বিষয়ে আপনাদের কাছ থেকে অন্যান্য ক্রেডিটের অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। আপনাদের অনুষ্ঠানগুলোতে আসতে আমি পছন্দ করি।’
তিনি সাধারণ সভায় আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনাদের এখানে নিমন্ত্রেণ জন্য ধন্যবাদ জানাই। সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাই, দেশের নারী ও শিশুদের আপনারা অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমরা সবাই মিলে এই দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ সকল প্রকার বাধা, সকল প্রকার সমালোচনা পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হলো নেতৃত্ব। আর এভাবেই সকল বাধা ভেঙে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
এ দিন প্রতিনিধিরা যাদের কারণে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং যারা এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাজের কুৎসা রটায় এবং সমাজকে নিচে নামিয়ে আনে তাদের ধিক্কার জানায়।
তারা বলেন, ‘এক জন ভাল মানুষ কখনো সমবায়ের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র করতে পারেন না। তারা যদি সত্যিকার ক্রেডিটের মঙ্গল চায় এবং সামাজিক মানুষ হয়, তাহলে তারা এ সমস্ত নোংরা কাজ করবে না।’
বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচ্যসূচি অনুাসারে ৫৬তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী পাঠ, ৫৬তম বার্ষিক সাধারণ সভার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি, ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক বার্ষিক কার্যক্রম প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, বার্ষিক হিসাব বিবরণী পেশ ও অনুমোদন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদন, প্রস্তাবিত আয় বন্টন হিসাব উপস্থাপন ও লভ্যাংশ ঘোষণা, প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন, ক্রেডিট কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন, উপ-বিধি সংশোধনী পেশ ও অনুমোদন, নতুন প্রস্তাবনা পেশ ও অনুমোদন আলোচনা করা হয়।
এছাড়াও সাধারণ সভায় বিবিধে নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন আলোচ্যসূচিতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং প্রস্তাবনা রাখেন। উক্ত বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে একটি অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ গড়ে ওঠে।
এ দিন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে লটারী ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা ক্রেডিটের ৫৭তম বার্ষিক সাধারণ সভার সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আরবি/আরপি/১৭ নভেম্বর, ২০১৭