শিরোনাম :
সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিলে তাদের মাথা গুড়িয়ে দেওয়া হবে: মনিরুল ইসলাম
ডিসিনিউজ || ঢাকা
আজ দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) বিজয় দিবস ও প্রাক্-বড়দিন উদযাপন করেছে। এই সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান জনাব মনিরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক বছর ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ খ্রিষ্টাব্দে ধর্ম ব্যবসায়ীরা জঙ্গিবাদে মেতে উঠে। তারা ধর্মের নামে নাশকতা করে। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত করে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের দমন করতে। হলি আর্টিজানে হামলার পর যারা সম্প্রদায়িকতা ছড়ায় তাদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তাদের দমন করা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনুরোধ করি, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যেন নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবেন। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের ভয় পাওয়ার কারণ নাই। সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিলে তাদের মাথা গুড়িয়ে দেওয়া হবে।’
মনিরুল ইসলাম ঢাকা ক্রেডিটের প্রশংসা করে বলেন, আমি জানতাম না ঢাকা ক্রেডিট এত কার্যক্রম করে। ঢাকা ক্রেডিট মহান যিশুর বাণী অনুসরণ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাই এই সমিতিকে অভিনন্দন জানাই। এই সমিতির কাজ আরো প্রসারিত হবে এই আশাবাদ করছি।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন মহাপরিচালক (আইসিটি ও প্রশিক্ষণ) জনাব এ কে এম সোহেল, বিশেষ অতিথি মেট্রোপলিটান মেজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের বিপুল লরেন্স গমেজ, সমিতির সদস্য, কর্মকর্তা, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
বাবু মার্কুজ গমেজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের যে কর্মযজ্ঞ তা সম্ভব হচ্ছে সদস্যদের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য। আমাদের স্কুল, জীম, সমবায় বাজার, হাসপাতাল জাতি-ধর্ম-বর্ণ সব মানুষ পেতে পারে। আমি অনুরোধ করি আগামী দিনে যে বোর্ড দায়িত্ব নিবে, তাদেরও আপনারা সহযোগিতা ও সমর্থন করবেন।’
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই দেশে উৎকৃষ্টমানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে, আর তাই আমরা আমরা ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল করতে যাচ্ছি। আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি, যাঁরা দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন, ত্যাগ করেছেন। বিজয়ের এই দিনে তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করছি।’
[wp1s id=”10988″]
নির্মল রোজারিও বলেন, আজ আমরা দুইজন ব্যক্তিকে অতিথি হিসেবে পেয়েছি, যাঁরা দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তার মধ্যে মনিরুল ইসলাম একজন। তিনি জঙ্গি নির্মূল করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সংখ্যালঘুদের পক্ষে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি মনিরুল ইসলামকে অনুরোধ করে বলেন, আপনি দয়া করে দেখবেন সংখ্যালঘুরা যেন টার্গেট কিলিং এর শিকার না হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আরেকজন অতিথি এ কে এম সোহেল যিনি দেশের দুর্নীতি দমনে ভূমিকা পালন করছেন, তাঁকেও অভিনন্দন জানাই।’
নির্মল রোজারিও তাঁর বক্তব্যে বাবু মার্কুজ গমেজের প্রশংসা করে বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ঢাকা ক্রেডিটকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। আগামী যে বোড নির্বাচিত হয়েছে, আমি অনুরোধ করবো তাঁদেরকেও আমরা সহযোগিতা করবো।
‘বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনাময় এক দেশ। আগামীদিনে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদ দেশের উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত করে। তাই এগুলোর জায়গা বাংলাদেশে হবে না,’ বলেন এ কে এম সোহেল।
মেট্রোপলিটান মেজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, জাতির পিতা অসম্প্রাদায়িক দেশে চেয়ে ছিলেন, আমরা যেন সেই অসম্প্রাদায়িক চেতনার একটি দেশ গড়তে পারি- আজকের দিনে আমার এটাই কাম্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রার্থনা করেন তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার রিপন রোজারিও। এরপর ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল বন্ড লটারী ড্র অনুষ্ঠিত হয়। লটারীতে ১ম, ২য় ও ৩য় পুরস্কার প্রাপ্ত বিজয়ী বন্ড নম্বর যথাক্রমে: ৩৩৪৪, ১৮৬৫ ও ৩৬৩৯। সকালে ছিলো কীর্তন ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। বিকালে অতিথিদের নিয়ে বড়দিনের কেক কাটেন সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ। বাবু মার্কুজ গমেজের নেতৃত্বে সমিতির উন্নয়ন বিষয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়।
কীর্তন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে তুমিলিয়া ধর্মপল্লী কীর্তন দল, দ্বিতীয় হয়েছে ধারাবাশাইল খ্রীষ্টান যুব সংঘ কীর্তন দল ও তৃতীয় হয়েছে দক্ষিণ ভাদাত্তি দিশারী সংঘ কীর্তন দল। শ্রেষ্ঠ গায়ক- সবুজ বাংলা তরুণ সংঘের শার্লি রোজারিও, শ্রীখোল বাদক- দড়িপাড়া মিশন কীর্তন দল ।
অতিথিদের ক্রেষ্ট প্রদান করেন সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ। ২০ জন কৃতি ছাত্র-ছাত্রী ও ৬ জন বিসিএস ক্যাডারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া অতিথিরা বিদায়ী বোর্ড কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে ক্রেষ্ট প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, বিকালের অনুষ্ঠানে পাঁচ সহ¯্রাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও মেহেদী লেপন করা হয়।
ঢাকা ক্রেডিটের কালচারাল একাডেমির নেতৃত্বে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস ও প্রাক-বড়দিনের সমাপ্ত হয়।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়েছে
ক- বিভাগ
১. প্রথম পুরস্কার: জয়ীতা জিয়ানা যোসেফ
২. দ্বিতীয় পুরস্কার: আবৃত্তি ফ্লোরেন্স গমেজ
৩. তৃতীয় পুরস্কার: সাজ নিকোলাস রোজারিও
খ- বিভাগ
১. প্রথম পুরস্কার: জয়িতা আগ্নেশ রড্রিক্স
২. দ্বিতীয় পুরস্কার: ন¤্রতা ক্যাথরিনা গমেজ
৩. তৃতীয় পুরস্কার: মিশেল সিসিলিয়া রোজারিও
গ– বিভাগ
১. প্রথম পুরস্কার: অনন্যা ম্যারেলিন গমেজ
২. দ্বিতীয় পুরস্কার: মাইকেল হ্যামিলটন গমেজ
৩. তৃতীয় পুরস্কার: এ্যাশলী ম্যাগডেলিন কস্তা
পরিশেষে ধন্যবাদ দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ।