ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ সবার চোখে বেদনার ভক্তি

সবার চোখে বেদনার ভক্তি

0
1290

ডিসিনিউজ : আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে কবর। একটি কবরের পাশে বসে নির্মল চোখে তাকিয়ে রয়েছে একজন বৃদ্ধা মা! পরম ভক্তি নিয়ে তিনি প্রার্থনা করছেন পরম পিতার চরণে। ২ রা অক্টোবর খ্রিস্টন্ডলীর জন্য একটি বিশেষ দিন। পরলগত প্রিয়জনদের জন্য এদিন খ্র্স্টিবিশ্বাসীরা প্রিয়জনদের কবরে গিয়ে প্রার্থনা করেন।

ফুল দিয়ে প্রিয়জনদের কবর সাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে এদিন সকলে তাদের প্রিয়জনদের আত্মার কলাণ্যের জন্য পিতার চরণে মিনতি জানায় যেন তার প্রিয়জন পিতার ¯েœহাশ্রয়ে স্বর্গে স্থান পায়। এদিন যাদের জন্য কেউ প্রার্থনা করার থাকে না, তাদের জন্যও সকলে মিলে প্রার্থনা করেন। শুধু তাই নয়, যারা সূচাগ্নি স্থান বা স্বর্গ-নরকের মধ্যস্থানে রয়েছে তাদের আত্মাও যেন স্বর্গে স্থান পায়, তার জন্যও প্রার্থনা করা হয়।

02২ অক্টোবর, বুধবার তেঁজগাও চার্চে গিয়ে দেখা যায়, ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো কবরাস্থান। ছোট, বড়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধায় ভরে গেছে তেজগাঁও প্রাঙ্গণ। গির্জার ঢং ঢং ঘন্টা বেজে উঠলো। কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, তেজগাঁওয়ের ফাদার কমল কোড়াইয়াসহ অন্যান্য ফাদার এবং সেমিনারিয়ানরা কবরাস্থানের রাস্তা ধরে বেদি মঞ্চে এগিয়ে যান। কবরাস্থানে সুনসান নিরবতা ভেঙ্গে বেজে ওঠে পরলাগতদের আত্মার চিরশান্তির গান। কবরাস্থানে দাঁড়ানোর সামান্য পরিমান জায়গা বাকি নেই। সবাই যার যার প্রিয়জনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে খ্রিস্টযাগে অংশ নেয়। মনে হচ্ছে কবরে শায়িত প্রিয়জনের সাথে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করতে এসেছে সবাই।

খ্রিস্টযাগ শেষে কার্ডিনাল এবং ফাদার ধূপারতি ও পবিত্র জলের মাধ্যমে কবরাস্থান সূচি¯œাত করেন। সন্ধ্যা নামার আগেই কবরাস্থানে জ্বলে ওঠে মোমবাতির আলো। একে একে মোমবাতি জ্বলে উঠে নিরব কবরাস্থান আলোয় ভরে উঠে। চারিদিকে মোমবাতির সাদা পবিত্র আলোর চ্ছ্বটা। মনে হয়, হারানো প্রিয়জনদের আত্মা আজ আবারো জেগে উঠেছে নবরুপে খ্রিস্টের পুনরুত্থানের সাক্ষি হয়ে।

01খ্রিস্টযাগ শেষেও সবাই প্রিয়জনদের কবরে বসে প্রার্থনা করেন, যেন তার প্রিয়জন পিতার কোলে স্থান পান এবং তাদের জন্যও পিতার কাছে আশির্বাদ যাঞ্চা করতে পারেন।

এরই মাঝে কয়েকজন ভক্তিপ্রাণ মানুষ কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, সত্যি আমরা পবিত্র মন নিয়ে খ্রিস্টের কাছে মিনতি জানাতে আপনজনদের কবরে এসেছি। ভক্তি, বিশ্বাস সবই নিজের ব্যাপার। কিন্তু কিছু কিছু বিরক্তি, বিশ্বাস এবং ভক্তির মনোযোগে কিছুটা বিপত্তি তৈরী করে। সবাই প্রিয়জনদের কবরে আসেন, কিন্তু কেউ কেউ আসেন মনে হয় উৎসব করতে। বিশেষ করে কিছু ছেলে-মেয়ে তাদের আধুনিক মোবাইলে সেলফি এবং আড্ডা যেন ভক্তির জায়গাটাকে কিছুটা হলেও নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু মধ্য বয়সী মায়েরাও মেতে উঠে ছবি প্রদর্শনীতে।

প্রিয়জনদের শেষ আশ্রয় কবর স্থান ঘুরে দেখাও গেল তাই। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্বামী হারানো, স্ত্রী হারানো, বাবা-মা হারানো, ভাইবোন হারানো শিশু, যুবক-যুবতী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও চোখের জলে ধুয়ে দিচ্ছে প্রিয়জনের কবর। সবার চোখে বেদনার ভক্তির ছাপ, এরই মাঝে কাউকে কাউকে দেখা গেল হাসি তামাশায় মেতে রয়েছে। এটাই কারো কাম্য ছিলো না। কেউ কেউ বলেছে, যদি তাদের কাছে হাসি-তামাশা করার ইচ্ছে থাকে, তবে তারা কেন এখানে এসে তা করছে, তারা অন্যত্র গিয়েও তো করতে পারে। তাদের মূল্যবোধ এবং মানসিকতা কি এখন প্রশ্নবিদ্ধ?

04২ রা নভেম্বর, বিশ্বজনীন কাথলিক মন্ডলী সকল পরলাগত ভক্তবৃন্দের আত্মার চিরশান্তি কামনার জন্য নির্ধারিত করে দেন। মাতা মন্ডলী এদিন সকল মৃতলোকের আত্মার জন্য প্রিয়জনদের সাথে বিশেষ প্রার্থনা করেন। এদিনকে বলা হয় ‘মৃত লোকের পর্ব’, ‘কবর আশির্বাদ’ বা ‘পরলাগত ভক্তদের আত্মার কল্যাণ’ কামনার দিন। ২রা নভেম্বর প্রার্থনা করা হলেও, পুরো নভেম্বর মাস সকলে কবরে এসে প্রার্থনা করেন। নভেম্বর মাসকে তাই বলা হয় মৃতলোকের মাস বা মৃত্যলোকে আত্মার কল্যাণ কামনার মাস। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও প্রতিটি গির্জায় সারাদিন ব্যাপী প্রার্থনা করা হয়। এদিন সকলেই যার যার আত্মিয়-স্বজনদের কবরে যান এবং বিশষে প্রার্থনা করেন।

আরবি/আরপি/ আরএসআর
২ নভেম্বর, ২০১৬