ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় সবুজ ভাইয়ের চলে যাওয়া…

সবুজ ভাইয়ের চলে যাওয়া…

0
1368

সুমন কোড়াইয়া:
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা গেছেন সাইফুদ্দিন সবুজ। ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি ছিলেন একজন রেডিও সাংবাদিক। এশিয়ার বিশপদের প্রতিষ্ঠান রেডিও ভেরিতাস এশিয়ার ঢাকাস্থ বাংলা বিভাগের প্রযোজক ছিলেন তিনি। বিশ বছর তিনি এই রেডিও ষ্টেশনে কাজ করেছেন। রেডিও ভেরিতাস মূলত খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের একটি বিভাগ। সেই সংযোগে, তিনি সাপ্তাহিক প্রতিবেশীতে প্রচুর লিখতেন। দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত তাঁর লেখা পড়েই তাঁকে চিনতেন।
পরিচালকদের বন্ধু
সাইফুদ্দিন সবুজ ভাই খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালকদের সব সময় বন্ধুর মতোন ছিলেন। আমি সবুজ ভাইয়ের নিকট গল্প শুনেছি ফাদার জ্যোতি এফ গমেজ, ফাদার সুনীল ডানিয়েল রোজারিও ও ফাদার সুব্রত বনিফাস টলেন্টিনুর কথা। সবুজ ভাই সবার বিষয়ে খুব প্রশংসা করতেন। তাঁর জ্ঞানের পরিধি ছিলো অনেক। আমি যখন তাঁর সহকর্মী ছিলাম, খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার কমল কোড়াইয়া তাঁর নিকট হতে আমাকে শিখতে বলতেন। ফাদার কমল কোড়াইয়াসহ ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ এবং ফাদার বুলবুল রিবেরুর সাথেও তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো।
আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তার সাথে সবুজ ভাইয়ের এত সখ্যতা ছিলো যা ছিলো হিংসা করার মতো। একবার বিদেশ থেকে আর্চবিশপ পৌলিনুস কস্তা সবুজ ভাইকে একটি ক্যামেরা কিনে উপহার দিয়েছিলেন। সবুক ভাই এতে খুব সম্মানিত বোধ করেছিলেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি খুব বেশি দিতেন, কিন্তু অল্প পেলেই খুব খুশি হতেন।
ছিলেন যুবক-যুবতীদের মেন্টর (পরামর্শদাতা)
সবুজ ভাইয়ের মৃত্যুতে ফেসবুকে নিজেদের ওয়ালে লিখেছেন সাংবাদিক পরিমল পালমা, ভিক্টর কে রোজারিও, বিপুল এলিট গনছালভেস ও সুমন ফ্রান্সিস গমেজ। ভবিষ্যতে সবুজ ভাইকে নিয়ে আশা করি লিখবেন করবী জয়ধর, লিপি রড্রিক্স, ইভা মারাক। রবিন ভাবুক ও আমিসহ উল্লেখিত ব্যক্তিরা সকলেই মিডিয়া বা কমিউনিকেশনের সাথে জড়িত। আমাদের লেখালেখি শিখিয়েছেন সবুজ ভাই। যদিও তিনি রেডিওতে কাজ করতেন, কিন্তু খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের নতুন কর্মীরা কীভাবে লিখছেন তা লক্ষ্য করতেন, তিনি তাঁদের নির্দেশনা দিতেন। তিনি এত সুন্দর করে বলতেন যে আমরা মুগ্ধ হয়ে তাঁর উপদেশ মেনে নিতাম। অনেকে বেশি পারে বা জানে বলে যিনি জানেন না বা কম জানেন তাকে হেয় করে শিক্ষা দেন। বা শিক্ষা দেওয়ার মধ্যে একটা অহংকার ভাব থাকে কিন্তু সবুজ ভাইয়ের শিক্ষাটা ছিলো উপভোগ্য। তাঁর সান্নিধ্যটা ছিলো উপভোগ্য। ফলে সবুজ ভাই আজ নেই কিন্তু তাঁর নিকট হতে এক দল যুবক-যুবতী পেয়েছেন তাঁর দীক্ষা। যাঁরা তাদের কর্মক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
ছিলেন ভালো প্রশিক্ষক
খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র হলো বিশপীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের প্রতিষ্ঠান। এই কমিশনের অনেকগুলো দায়িত্বের মধ্যে একটি দায়িত্ব হলো দেশে বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশে গিয়ে লেখক-সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। তৎকালীন খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ফাদার কমল কোড়াইয়া রাজশাহী, খুলনা ও দিনাজপুরসহ বেশ কয়েকটি কাথলিক ধর্মপ্রদেশে যাই সবুজ ভাইসহ। লেখালেখি বিষয়ে আমরা সবাই ক্লাশ দিতাম। কিন্তু বরাবরই সবুজ ভাইয়ের ক্লাশে প্রশিক্ষণার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো প্রশিক্ষণ উপভোগ করতেন।
তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন। সেখানকার সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিতেন।
তাঁর আরো অন্যান্য গুণ ছিলো। তিনি প্রর্কীতি নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এখনো মাঝে মধ্যে প্রকাশ হয়ে থাকে। সম্প্রতি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন রেডিও ‘রেডিও বাংলা ওয়েভ’, যা অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
পুণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাংলাদেশে আসেন তখন সবুজ ভাই মিডিয়া ও প্রকাশনা উপ-কমিটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
তাঁর সাথে কাজ করে কখনো মনে হয়নি তিনি ভিন্ন কোন ধর্মের মানুষ। সব ধর্মের বিশ^াসকে তিনি অনেক বেশি মূল্য দিতেন, সম্মান করতেন।
সবুজ ভাইয়ের আত্মার চির শান্তি কামনা করি।