শিরোনাম :
সমবায়ের অগ্রপথিক ও ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ফাদার চার্লস জে. ইয়ং সিএসসি’র ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
পালন করা হলো সমবায়ের অগ্রপথিক ও ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ফাদার চার্লস জে. ইয়ং সিএসসি’র ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি দেশসেরা সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের যাত্রা শুরু করেন।
১৪ নভেম্বর, ঢাকার তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে ফাদার ইয়াং-এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রার্থনানুষ্ঠান, র্যালি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) এবং ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন। এ দিন ফাদার ইয়াং-এর সমাধীতে বিভিন্ন সংগঠন, অঙ্গ-সংগঠন, বিভিন্ন সমিতি ও ব্যক্তি পর্যায়ে ফুলের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ফাদার ইয়াং-এর আত্মার কল্যাণার্থে এদিন সকাল ৮টায় খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন তেজগাঁয়ের সহকারী পাল-পুরোহিত ঝলক দেশাই। এরপরই সমবায়ীদের নিয়ে একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালি শেষে ফাদার ইয়াং-এর সমাধীতে প্রার্থণা এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া।
এ সময় ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা ফাদার ইয়াং-এর জীবনী স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘ফাদার ইয়াং বিদেশী মিশনারী হয়েও বাংলাদেশে দরিদ্র-ক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট অনুভব করে এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি সমবায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন করার প্রয়াস নিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রথম ক্রেডিট ইউনিয়ন ‘ঢাকা ক্রেডিট’ বর্তমানে বাংলাদেশে দেশসেরা অনুসরণীয় একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান। আজকের দিনে ফাদার ইয়াং-এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, সেই সাথে তাঁর আত্মার চিরকল্যাণ কামনা করি।’
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি লিটন টমাস রোজারিও, কালব’র জেনারেল ম্যানেজার পিটার পালমা এবং ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন।
আলোচনা সভা শেষে ঢাকা ক্রেডিট, ফাউন্ডেশন, কাককো লি:; কালব লি:সহ বিভিন্ন সমিতি ও সংগঠন ফাদারে সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ফাদার ইয়াং ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই তিনি ৫০ জন সদস্য নিয়ে পুরান ঢাকা লক্ষ্মীবাজারে মাত্র ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠন করেন। যা বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ক্রেডিটের এখন মূলধন প্রায় ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সমবায়ের ডিজিটালাইজেশনের কৃতিত্বে ঢাকা ক্রেডিটের নিজস্ব সফট্ওয়্যার ব্যবস্থাপনা (নিজ সমিতি এবং অন্যান্য সমবায় সমিতির ব্যবহার করার সুযোগ), এটিএম সার্ভিস, স্মার্টসেবাসহ বিভিন্ন ডিজিটাল পরিসেবা, নিজস্ব নির্মিয়মান ৩০০ বেডে ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল, রিসোর্ট, ট্রেনিং সেন্টার, আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, সমবায় বাজারসহ নানামুখী জনহিতৈষি প্রকল্প রয়েছে। যার একমাত্র ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এরই রোপিত বৃক্ষের ফসল।
ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠার পরপরই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে। যা এখনো সমাজ উন্নয়নে ভ‚মিকা রেখে যাচ্ছে।
মহৎপ্রাণ ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ৩ মে, ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক রাজ্যের রচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ডানিয়েল ইয়াং এবং মা মেরী জেনিংস। তিন ভাইবোনের মধ্যে ফাদার ইয়াং দ্বিতীয়। তিনি স্কুল জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ফাদার চার্লস নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি সেখানকার মাইনর সেমিনারীতে থাকতেন। এরপরই তিনি নভিসিয়েটে যোগ দেন। ২ জুলাই, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায় থেকে প্রথম ব্রত গ্রহণ করেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাটিনে বিএ পাস করেন। একই বছর ফাদার ইয়াং ওয়াশিংটনের ফরেন সেমিনারীতে যোগ দেন।
২৪ জুন, ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সহপাঠীদের সাথে যাজক পদ লাভ করেন। একই বছর তিনি ঢাকায় আসেন। ফাদার ইয়াং ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কানাডায় যান এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বয়স্ক এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন শিক্ষার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন।
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের ১৪ তারিখ ঢাকার প্রেস ক্লাবের সামনে একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি পড়ে যান এবং মাথায় বড় ধরনের আঘাত পান। তখনই তিনি জ্ঞান হারান। এরপর আর জ্ঞান ফিরে আসেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১১.০৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৬ নভেম্বর ফাদার ইয়াংকে তেজগাঁও চার্চের সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়।