ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট সমবায় সমিতিগুলো খ্রিষ্টান সমাজের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড : সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও

সমবায় সমিতিগুলো খ্রিষ্টান সমাজের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড : সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও

0
943


সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও ডিরেক্টর হিসেবে মোট আটবার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঢাকা ক্রেডিটেসহ সমবায় অঙ্গনে প্রায় ত্রিশ বছর সেবা দিয়েছেন। সমবায় সমিতি নিয়ে লিখেছেন দুইটি বই। তিনি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ হতে আমেরিকায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। কথা বলেছেন সমবায় আন্দোলন নিয়ে। তিনি বলেছেন, সমবায় সমিতিগুলো দেশের খ্রিষ্টান সমাজের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। দেশে খ্রিষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত সমবায় সমিতি রয়েছে প্রায় ২৫০টি। সমসাময়িক সমবায় অন্দোলন নিয়ে ডিসিনিউজের মুখোমুখি হন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুমন কোড়াইয়া
ডিসিনিউজ: আপনার কয়েকটি পরিচয় রয়েছে। আপনি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শিক্ষকতা করেছেন। এরপর সেবা দিয়েছেন কারিতাসে। পাশাপাশি সেবা দিয়েছেন ঢাকা ক্রেডিটসহ বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে। এখন আমেরিকা প্রবাসী। আপনার কোন কাজটি বেশি ভালো লেগেছে?
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: আমি মূলত একজন শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশা আমার পৈতৃক পেশা এবং এ পেশাকে আমি অত্যন্ত ভালবেসে গ্রহণ করেছিলাম। শিক্ষকতা করতেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
ডিসিনিউজ: আপনি সমবায় আন্দেলনের সাথে কীভাবে জড়িত হলেন?
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: ক্রেডিট ইউনিয়নের সাথে জড়িত হই আমি মেট্রিক পরীক্ষার পরপরই, ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। তখন গাজীপুরের কালীগঞ্জের তুমিলিয়া থেকে মি. টমাস পালমার নেতৃত্বে ক্রেডিট ইউনিয়ন শুরু হয় । রোববারে খ্রিষ্টযাগের পরে আমরা যুবকরা যখন মাঠে জড়ো হতাম, তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে যেতেন ক্রেডিট ইউনিয়নে। ক্রেডিটে নতুন যারা সদস্য হচ্ছে, গ্রামের অনেক লোক জানে না কীভাবে সদস্য ফরম পূরণ করতে হয়। আমি সেই ফরম পূরণ করতে সহযোগিতা করতাম। ওইখান থেকেই তিনি আমাকে কমিটিতে এবং বোর্ডের সাথে সম্পৃপ্ত করেন। আমি অল্প বয়স থেকেই মাত্র মেট্রিক পাস করে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। ওই সময় থেকেই আমি ক্রেডিট ইউনিয়নের সাথে জড়িত হয়ে পড়ি।
ডিসিনিউজ: এক সময় সমিতিগুলো শুধু ঋণ দেওয়া নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, এই বিষয়গুলো আপনি কীভাবে দেখছেন?
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: বর্তমানে সমিতিগুলো ঋণ দেওয়া-নেওয়া ছাড়াও নানামুখি কাজ করছে। এটিএম বুথ, ক্রেডিট কার্ড এই সমস্ত করতেই হবে। এগুলো সময় উপযোগী পদক্ষেপ। গত ১০-২০ বছরে যে ডেভেলপ হয়েছে, ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়নের তার চেয়ে অনেক বেশি ডাইভারসিটি হয়েছে। হাসপাতাল তৈরি করছে, এটিএম চালু করেছে। এগুলো খুবই প্রয়োজন। আজকে যদি একটি সমবায়ী ব্যাংক হতো, হাজার হাজার যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থান দেওয়া যেতো। বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন যা করে যাচ্ছে, এর সৃষ্টি থেকে শুরু করে যত কর্মকর্তা এসেছেন, এঁদের ছাপিয়ে গিয়ে পঙ্কজ গিলবার্ট কস্তা, বাবু মার্কুজ গমেজ বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে এসেছে এই সমবায় আন্দোলনকে। এদের আমি প্রসংশা করি। এরা ইনোভেটিভ, নতুন নতুন কিছু দিচ্ছে সমাজকে, ক্রেডিট ইউনিয়নের সকল সদস্যসহ তাদের পরিবারকে। এটা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে করতে হচ্ছে। আমি আমার বইয়ের ভেতর এই ব্যাপারে লিখেছি – They can renovate, innovate, replicate, create new ideas, new thoughts, new thinking, new projects that will let this credit union for the more better way in bigger way for the community. (যাঁরা ক্রেডিটে নেতৃত্ব দেন তারা একটি উত্তম সমাজের জন্য নতুন করে ভাবতে পারেন, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, অনুসরণ করে কিছু করতে পারেন, তারা নতুন ধারণা বা প্রজেক্ট তৈরি করে কাজ করতে পারেন।)

ডিসিনিউজ: বর্তমানে যারা ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তা হিসেবে সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: New blood comes with new efficiency and new ideas (নতুন নেতৃত্ব নতুন নতুন নৈপুণ্য ও নতুন ধারণা নিয়ে আসে)। তারা এটা আপ্রাণ চেষ্টা করছে কাজে লাগার জন্য এবং আমি তাদের প্রসংশা করি। ঢাকা ক্রেডিটে বাবু মার্কুজ গমেজ, পঙ্কজ গিলবার্ট কস্তা, অনান্য ক্রেডিট ইউনিয়নে আমি দেখেছি তুমিলিয়াতে এবং অন্যান্য জায়গায়, নতুন নেতৃত্ব অনেক ভালো করছে। আমি সমবায় ও হাউজিং সম্পর্কে যখন ভাল কিছু শুনি, তখন আমি অত্যন্ত আনন্দ পাই, খুশি হই। আমি সবার জন্য প্রার্থনা করি, দোয়া করি তাদের এই নতুন নেতৃত্ব যেন সঠিক পথে পরিচালনা করে। কাজেই বর্তমানে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ- তারা দয়া করে সমিতির ঐতিহ্য, আমাদের যে গৌরব, লোকেরা সৎ হিসেবে খ্রিষ্টানদের যে প্রশংসা করতো, এই সৎ নীতিটা যেন টিকে থাকে- এদিকে লক্ষ্য করবেন। আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের বাংলাদেশের বৃহৎ অংশ সৎ লোক, তারা দুর্নীতিবাজ নয়। দুর্নীতিবাজ লোক হাতে গোণা দুই-তিন জন। যে অন্যায় করে এবং যে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়, তারা সমান দোষী। কাজেই ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমান পরিচালক মন্ডলীতে যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা দয়া করে মনে রাখবেন এ কথাটি- যে অন্যায় করছে সে আমার ভাই হতে পারে, আমার বাবা হতে পারে, কিন্তু তাদের প্রশ্রয় দিব না।
ডিসিনিউজ: আপনি জানেন ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এটি কীভাবে দূর করা যায় এবং একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আনা যায়।
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব ক্রেডিট ইউনিয়ন ১১টি নীতিমালা তৈরি করেছে এবং সমস্ত বিশ্বে নীতিমালাগুলো সুন্দরভাবে প্রচলিত আছে। এই নীতিমালার ২ নম্বর নীতি হলো ‘ডেমোক্রেটিভ কন্ট্রোল’। এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, এ প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হবে। যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা নতুন সিদ্ধান্ত নয়, আমাদের সময়ও ছিল। যখন আড়াই-তিন হাজার নারী-পুরুষ সদস্য নিয়ে আমরা ক্রেডিট ইউনিয়ন করেছি, তখন বলা হয়েছিল প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনের কথা। প্রতি ৫০ জনের পক্ষে একজন প্রতিনিধি। এখন হয়তো ৪০ হাজার সদস্য, এই বিপুল পরিমান সদস্য জড়ো করে ভোট নেওয়া এবং নির্বাচন করা কষ্টকর ব্যাপার। এই নিয়মটা কিন্তু তখনো ছিল নিয়মে, সেই পাকিস্তান আমলে। সেখানে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা রয়েছে: যে একটি সমিতিতে আড়াই বা তিন হাজার সদস্য হলে, তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে যেতে পারে। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্রকে রহিত করা হয়। সে জন্য আমরা এটি করি নাই, এখন উনারা করেছেন। আমি খুশি। সমবায় সমিতিগুলো এদেশে আমাদের, বিশেষভাবে খ্রিষ্টান সামাজের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। আজ আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নত কারণ অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেছে, টাকা আয় করছে, তা ঠিক। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের ও আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রধান উপাদান ‘ক্রেডিট ইউনিয়ন’। আমি ক্রেডিট ইউনিয়ন, সমবায় সমিতি, হাউজিং সোসাইটির মঙ্গল কামনা করি। এ দ্বারা আমাদের খ্রিষ্টান সমাজ উপকৃত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও উপকৃত হবে এই আসা করি।
ডিসিনিউজ: ডিসিনিউজকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সুবাস সেলেষ্টিন রোজারিও: আপনাকেও ধন্যবাদ।