শিরোনাম :
সাক্ষাৎকার: ডিসি চাইল্ড কেয়ারে শিশু-উন্নয়ন সম্বন্ধে মা-বাবা যা বলেন
স্বামীর বাড়ি ঢাকার মানিকগঞ্জ। স্ত্রীর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুর। তাদের বিয়ে হয় ২০১২ সালে। বিয়ের আগে থেকেই দুজনার চাকরি। স্ত্রী অশ্রু রাণী সাহা একটি আন্তর্জাতিক এনজিওতে ছিলেন, এখনও ফাইন্যান্স ম্যনেজার হিসেবে চাকরিরত। বিয়ের পরেও চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
স্বামী পংকজ কান্তি সাহা ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ঔষধ কম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ফাইন্যান্স ডিভিশনে সিনিয়র এডিশনাল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। চাকরির পাশাপাশি তারা দুজনেই চার্টার্ড একাউটেন্সিতে পড়াশোনা করছেন।
পরিকল্পিত তাদের সংসার। বিয়ের আড়াই বছর পর তাদের কোলজুড়ে আসে ছেলে সন্তান। নানী নাতির নাম রাখেন অর্পন। তার দু-বছর পর আরেক ছেলে সন্তান। বাবা তার নাম রাখেন আদিত্য।
আর্থিক স্বচ্ছলতার কমতি নেই তাদের। এখন চ্যালেঞ্জ হলো সন্তানদের মানুষ করার। ক্ষুদ্র এই পরিবারে শ্বাশুরি-মায়ের উপস্থিতি থাকলেও তাঁকে দেখাশোনার জন্য প্রয়োজন অন্য আরেকজনের। ছুটা কাজের মানুষ দিয়ে সন্তানের যত্ন নেওয়াও বিপদজনক।
তাই তাদের সন্তানদের দেখাশোনা নিয়ে দেখা দিয়েছে মহা বিপত্তি। সন্তানের যত্ন নেওয়ার আস্থার জায়গাটির অভাব ছিল তাদের পরিবারে। তাই প্রথম প্রথম বড় সন্তানকে নিয়ে মা যেতেন অফিসে। অফিসে শিশুদুগ্ধদায়ী মায়েদের সন্তানদের থাকার একটু ব্যবস্থা ছিল। পরে সে-ও পর্যাপ্ত হয়ে উঠল না।
এক সময়কার অর্পনের মায়ের এক্সকোলিগ ঢাকা ক্রেডিটের একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন মনিপুরীপাড়া ৪ নম্বর গেইটের এই আন্তর্জাতিক মানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টারের কথা। ওই কর্মকর্তার পরামর্শ মতো তিনি এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হয়ে প্রথম জানতে পারেন বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষিত টিচার দ্বারা এর পরিচালনার কথা। পরে কয়েকবার তার স্বামীকে নিয়ে সেন্টারের প্রিন্সিপাল ডালিয়া রড্রিগসের-এর সাথে দেখা করেন। সম্প্রতি এই স্বামী-স্ত্রী সাক্ষাৎকার দেন সমবার্তার সাথে। সাক্ষাৎকার নেন ঢাকা ক্রেডিট পরিচালিত মাসিক প্রকাশনা সমবার্তার নির্বাহী সম্পাদক রাফায়েল পালমা।
সমবার্তা : কখন, কী মনে করে প্রথম আপনার ছেলেকে এই সেন্টারে ভর্তি করেন?
অশ্রু রাণী সাহা (মা) : ২০১৮-এর মার্চ থেকে ওকে এই সেন্টারে দিয়েছি। এই ভেবে দিয়েছি যে, এটা অন্যান্য চাইল্ড কেয়ার থেকে আলাদা। এখানকার শিক্ষাপদ্ধতিসহ মাতৃসুলভ কেয়ার শিশুদের অনেকটাই মা-বাবার অনুপস্থিতিকে পূরণ করে। ডালিয়া মেডাম (প্রিন্সিপাল) শিশুদের মায়ের মতোই কাছে টেনে নেন। এখানে এমন কিছু শিশুদের দেওয়া হয়, যা বাসা-বাড়িতে সম্ভব নয়। সকল শিক্ষক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত।
সমবার্তা : কী কী পরিবর্তন আপনার শিশুর মধ্যে ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছেন?
পংকজ কান্তি সাহা (বাবা) : ডিসি চাইল্ড কেয়ারে সে ইতিমধ্যে অনেকগুলো বিষয় পিকআপ করেছে। যেমন, সে এখান থেকে কীভাবে মানুষের দেহে রোগ ছড়ায়, সে সম্বন্ধে শিখেছে। তা রোধ করার জন্য যে হাত ধোয়া দরকার, হাত ধোয়ার যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আছে- তাও সে শিখেছে। বাসায় গিয়ে আমাকে সে শিক্ষা দেয় সেই পদ্ধতি। এটা আমাকে সে দেখিয়েছে। এটা একটি উদাহরণ মাত্র। এমন অনেককিছু সে প্রতিনিয়স শিখছে।
সমবার্তা : এই সেন্টারে থাকার কারণে আপনার দৃষ্টিতে আপনার শিশুর মধ্যে আচরণগত কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে?
অশ্রু রাণী সাহা : এখানে থাকার পর তার মধ্যে দৃশ্যমান যে বিষয়টি আমারা লক্ষ করেছি, সেটা হলো সে অনেক সোশাল হয়েছে। এখানে অনেক শিশুর সাথে থেকে বিষয়টি রপ্ত করেছে। এটা এই সেন্টারের ক্রেডিট। আমার বাসায় মানুষ আসলে জড়তাহীনভাবে এখন সবার সাথে কথা বলে, প্রশ্নের উত্তর দেয়, যা আগে দেখা যায়নি।
সমবার্তা : তার মধ্যে বড় ধরনের কোনো পরিবর্ত দেখেন কি? সেটা কী?
পংকজ কান্তি সাহা : এখানে বিভিন্ন রঙের ব্লক দিয়ে নানা জিনিস তৈরি করা শিখেছে। তা দেখে আমি বাসায় গিয়ে এসব ধরনের ব্লক কিনে দিয়েছি। ব্লকের কালার মিলিয়ে এমন এমন জিনিস সে বাসায় তৈরি করে যে, আমাদের অবাক লাগে। তার সৃষ্টিশীলতার মেধা যথেষ্ঠ বৃদ্ধি পেয়েছে। সত্যিকার অর্থে এই সেন্টারে বিভিন্ন কৌশলে শিশুদের মেধার অনুশীলন করা হয়।
সমবার্তা : বুঝতে পারলাম, আপনারা সেন্টারের সেবায় অনেক খুশি। কিন্তু আপনাদের এই সেন্টারের প্রতি কোনো প্রত্যাশ আছে কি? কোনো প্রস্তাবনা আছে?
অশ্রু রাণী সাহা : অবশ্যই খুশি। বাড়িতে আমার ননদেরাও খুশি। কিন্তু তারাই আমাকে নানা কথা বলে প্রথমে ভয় দিয়েছিল যে, এসব চাইল্ড কেয়ারে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শিশুদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। বিষয়টি এই সেন্টারের জন্য মোটেই প্রযোজ্য নয়। এখানে সারাদিনের খাবারের, অনুশীলনের, পড়ার নিত্যদিনের রুটিন রয়েছে। ওদের হাতে-কলমে অনেককিছুই শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে একটি প্রস্তাব আছে। যেহেতু এখানে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা সংরক্ষিত, আর ইন্টারনেটও আছে, আমারা যেন প্রয়োজনবোধে বা মন চাইলে আমাদের মোবাইলে আমাদের ছেলেকে দেখতে পেতাম সেই ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হতো।
সমবার্তা : আরো এমন কিছু কি আছে, যার জন্য এই সেন্টার আলাদা?
পংকজ কান্তি সাহা : এই সেন্টারের একটি বিশেষ দিক হলো এই যে, এখানে জাতীয় দিবসগুলো যেমন- শহীদ দিবস, একুশে ফেব্রুায়ারি, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। নানা ধর্মীয় চেতনার উৎসব পালন যেমন-ঈদ, ক্রিসমাস, পূজা, বুদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি উদযাপনের মাধ্যমে শিশুদের জ্ঞান দেওয়া হয়। তাতে ওরা একে অন্যের ধর্ম সম্বন্ধে কিছু শিখছে এবং সকলের প্রতি সকলের সহনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে জীবনের এই ঊষালগ্ন থেকেই।
সমবার্তা : আপনাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
বাবা-মা : আপনাকেও ধন্যবাদ।
ডিসি চাইল্ড কেয়ার বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন: চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার
[wp1s id=”11500″]