ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় হতে পারে অনেক কিছুই: করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি

হতে পারে অনেক কিছুই: করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি

0
961

|| রবীন ভাবুক ||

নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বে যে মহামারী ডেকে এনেছে, এর পরবর্তী সময়ে হতে পারে অনেক কিছুই। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ও বিশ্লেষণ প্রচুর রয়েছে। আলোচনাও হচ্ছে বিস্তর। ‘মানবতার হোক জয়: করোনা নিয়ে নয় কোনো ভয়’ শিরোনামে লেখাটিতে প্রাকৃতিক বিষয়ে বলেছিলাম। প্রকৃতিকে আঘাত করলে, প্রকৃতি তার প্রতি উত্তর খুব খারাপভাবেই দেয়, তার একটি ভয়ানক উদাহরণ হলো এই করোনাভাইরাস। প্রকৃতির পর সবচেয়ে বড় আঘাতটি আসেত যাচ্ছে অর্থনীতির ওপর। বিশ্ব অর্থনীতি ইতিমধ্যে ভয়ানক দিন পার করছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের ধরন-ধারণাও পাল্টে যাচ্ছে। তেল বাণিজ্য বিগত বছরগুলোতে যেভাবে আগুন ছড়িয়েছিল, বর্তমানে সেই তেল পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। এরকম দেখলে, আরো অনেককিছুতেই বেসামাল ঝাকুনি দিয়েছে করোনাভাইরাস। বৈশ্বিক অর্থনীতি যেখানে মুখ থুবরে পড়ার যোগার, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কোনো পর্যায়ে যাবে, তা বলা মুশকিল।

ইতিমধ্যে মার্চ মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে লক-ডাউন শুরু হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান। প্রথমত বন্ধ হয়েছে উৎপাদন, দ্বিতীয় রপ্তানী, তৃতীয়ত বন্ধ সাধারণ মানুষের আয়। করোনার কারণে মূলত আর্থিকভাবে এই তিনটি বিষয়ই বাংলাদেশের উপর আঘাত করেছে। উৎপাদন না থাকায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সংকট তো দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বস্ত্রশিল্পসহ বিভিন্ন রপ্তানীমুখী পণ্যের উৎপাদন না থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানীখাত মুখ থুবরে পড়েছে। শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দেশে ছোট আকারের দুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছে। সুতরাং করোনার প্রকোবে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ভয়ানক অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। যদিও, মাননীয় সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকছি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে শিল্প-উদ্যোক্তা, কৃষিখাতসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

করোনা পরবর্তী সময়ে অনেকক্ষেত্রেই সংকট আসবে বাংলাদেশের জন্য। তার মধ্যে আরেকটি সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে সকলেই ধারণা করছে, তা হলো আর্থিকভাবে টিকে থাকার জন্য চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরণের অপরাধ। ভেঙ্গে পড়তে পারে শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। কিন্তু হতে পারে এর উল্টাও। সকলের পারস্পরিক সহযোগিতা আর সহাবস্থান এনে দিতে পারে একটি সুন্দর এবং আরো উন্নত বাংলাদেশ।

এরপরও রয়েছে অসংখ্য আশা জাগানিয়া বিষয়। করোনার ভয়ানক থাবার হাত থেকে বাঁচতে শিল্পকারখানা, ভারী যান-বাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কমেছে পরিবেশ দূষণ। কালো ধোঁয়ার ছিটে ফোটাও নেই ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলাসদরগুলোতে। কারখানার বজ্রগুলো পানিতে না থাকায় পানিও কিছুটা পরিশোধিত হয়েছে। উর্বতাও বেড়ে মাটিতে। নাতি-শীতোষ্ণ বাংলাদেশের বুকে যেন সেই ভাবটাও ফিরে এসে তা কয়েকদিনের নির্মল বৃষ্টি ও পরিবেশে দেখেই বোঝা যায়। যদিও বর্তমানে জমির ধান ও ফসল কাটার লোকের অভাব রয়েছে করোনা সংকটের কারণে, তাও সমাধান হবে বলে আশা করি। কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে ফসলের ফলন আরো বাড়বে এটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সুতরাং করোনা সংকট মানুষকে যেমন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি একটু নতুন ও অনেকটাই পরিবর্তিত পৃথিবীও বানিয়ে যাবে। হয়তো বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের একচেটিয়া বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন এনে একটি সহজ ও সহযোগিতামূলক বাণিজ্য নীতিই প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ মহামারী করোনা সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী দেশগুলোতেই প্রথম ও সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে। এটাও হতে পারে সেই সব দেশের জন্য একটি বড় শিক্ষা।