শিরোনাম :
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ মারা গেছেন
নিজস্ব সংবাদদাতা:
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আজ রবিবার সকাল পৌনে ৮টায় মারা গেছেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকা অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
অসুস্থবোধ করলে ২৭ জুন সকালে তাঁকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। তিনি রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। অবশেষে তিনি লাইফ সাপোর্ট ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
জাতীয় পার্টির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ। তবে কোন কোন গণমাধ্যমে উল্লেখ আছে, ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় তাঁর জন্ম। তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন রংপুরে। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ খ্রিষ্টাব্দে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।
আরো পড়ুন: ডাউনলোড করুন ঢাকা ক্রেডিট অ্যাপ, সুবিধা নিন
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে তিনি বিগ্রেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
পোপ দ্বিতীয় জন পলের সফর
এরশাদের আমন্ত্রণে পোপ দ্বিতীয় জন পল (যিনি পরে সাধু শ্রেণিভুক্ত হয়েছেন) বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ নভেম্বর। আর্মি স্টেডিয়ামে পোপ দ্বিতীয় জন পল ১৯ জন ডিকনকে যাজক পদে অভিষিক্ত করেছিলেন। পোপ মহোদয় বাংলাদেশে এসেই এদেশের মাটি চুম্বন করেছিলেন।
আরো পড়ুন: ২৪ জন যুবক পেলেন ড্রাইভিং লাইন্সেস
উল্লেখযোগ্য অবদান
‘পল্লীবন্ধু’ এরশাদের শাসনকালীন বড় সাফল্য হচ্ছে থানা পর্যাযয়ে দেশব্যাপী উপজেলা স্থানীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন। প্রেসিডেন্ট এরশাদ স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রশাসন ও পরিকল্পনায় তাদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তাই উপজেলাগুলোকে উন্নয়ন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উন্নীত করার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণের এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০টি ধাপে ৪৬০টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
তাঁর শাসনকালে জেলা পরিষদসমূহ সক্রিয় ও কার্যকর করার জন্যও এরশাদকে সাধুবাদ দেওয়া হয়। এরশাদের আরেকটি বড় সাফল্য ছিল দক্ষিণ এশীয় সহযোগীতা সংস্থা (সার্ক) গঠনের উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নেওয়া। ১৯৮৫ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদের আমন্ত্রণে এ অঞ্চলের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা ঢাকায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। এই প্রথম শীর্ষ সম্মেলনেই দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা সার্ক গঠনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ।
প্রেসিডেন্ট এরশাদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পের বিরাষ্ট্রীয়করণ এবং দেশে ব্যক্তিখাতের বিকাশে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল সরকারি মালিকানাধীন উত্তরা, পুবালী ও রূপালী ব্যাংকের বিরাষ্ট্রীয়করণ। এসময়ে দেশে প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি বেসরকারি বাণ্যিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিকে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি প্রদান করা হয়। দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও সংস্কারেও এরশাদ সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করার মাধ্যমে দেশে জেলার সংখ্যা ৬৪ করা হয়। এগুলোর অধীনে আবার ন্যস্ত করা হয় ৪৬০টি উপজেলাকে।
১৯৮২ সালে ঘোষিত নতুন শিল্পনীতিকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য আরো উদার করে এরশাদ ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি শিল্পনীতি ঘোষণা করেন। বিশেষত উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকার কারণে এরশাদের অনুসারীরা তাঁকে ‘পল্লীবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেন।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের অব্যবহিত পর ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এরশাদ। স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন। তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের সংসদ নির্বাচনে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন তিনি। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে খ্রিষ্টান কিশোরীর ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে জীবননাশের হুমকি
বিশ্বে যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভাল ইংরেজি জানা
ঢাকার ক্রেডিটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি