শিরোনাম :
৬৫ বছর সেবা দেওয়া ভারতীয় সিস্টার থিওনিল্লা আরাক্কাপারামবিলের চিরবিদায়
পঁয়ষট্টি বছর বাংলাদেশে সেবা দেওয়ার পর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন ভারতীয় সিস্টার সিস্টার থিওনিল্লা আরাক্কাপারামবিল। ১৯ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট ভারতের কেরেলা প্রদেশের, এরনাকোলাম ধর্মপ্রদেশের শেরতাল্লি শহরে জন্মগ্রহণ করেন সি: থিওনিল্লা আরাক্কাপারামবিল। বাবা চাক্কো আরাক্কাপারামবিল ও মা ত্রেজিয়া ভাল্লিতানাম এর ঘরে জন্মেছিলেন সি: থিওনিল্লা যাকে ভালবেসে ডাকা হতো মারিয়ানা বা মেরি বলে। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তারা ৪ বোন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ে সিস্টার ও একজন ভাই ফাদার যিনি কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরন করেছেন। ঈশ্বর ও মানুষের সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণরুপে বিলিয়ে দেওয়ার ইচ্ছায় ও আশায় ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে সি: থিওনিল্লা সিস্টারস্ অব্ চ্যারিটি ধর্মীয় পরিবারে যোগদান করেন কলকাথায় এসে। একজন মিশনারী হয়ে প্রভুর প্রেমের বাণী পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যাশায় তিনি ১৯৫৫ খ্রি: একজন নবিস হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। এখানে এসে ১৯৫৭ খ্রি: তিনি প্রথমবারের মত ব্রত বা সাময়িক ব্রত গ্রহণ করে ও থেকে যান আমাদের এই সোনার বাংলায়। ১৯৬২ খ্রি: ৫ অক্টোম্বর দিনাজপুরে চিরব্রত গ্রহণ কওে খ্রিষ্টের মঙ্গলবাণী প্রচারের বীজ বপন করতে শুরু করেন। মিশনারী উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রবল ইচ্ছাকে পাথেয় করে বাংলার আকাশে উদিত করেন খ্রিষ্ট প্রেমের জয়নিশান। দিনাজপুর শহরে শিক্ষার মশাল হাতে তার মিশনারি জীবনের অনেকটা সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে হলিক্রশ কলেজে প্রশিক্ষন গ্রহণ করে প্রেম ও দয়ার কাজের সাক্ষ্য বহন করেন। তাছাড়াও তিনি দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ প্রভিন্সিয়াল ট্রেজারারের দায়িত্ব খুব বিশ্বস্ততা, উদারতা ও দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। ১৯৭৯ থেকে ২০১১ খ্রিষ্টব্দ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রভিন্সিয়াল সুপিরিয়রের সাথে তিনি এই প্রেরণ কাজ করার সুবাদে নভিসিয়েটে প্রায় অনেক নবিসদেরও শিক্ষা দান করেছেন। তিনি দরিদ্র, অসহায়দের দেন নতুন জীবনের ¯ন্ধান, বিশেষ করে বিভিন্ন সেমিনারীতে অধ্যয়নরত সেমিনারীয়ানদের সাহায্য করেছেন। খ্রিষ্টান, হিন্দু মুসলিম কেউই তার আর্থিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়নি। সিস্টারস্ অব্ চ্যারিটি ধর্মীয় পরিবারের একজন নির্ভীক ব্রতধারী রুপে সি: থিওনিল্লা বাংলাদেশ প্রভিন্সের দিনাজপুর, ও ঢাকা ধর্মপ্রদেশে নিষ্ঠা ও ভালবাসার সাথে তার প্রেরণ কাজ করে গেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে মিশনারী জীবনে স্বার্থে তিনি নিজের দেশের সব পরিচয়কে তুচ্ছ করে বাংলাদেশ নাগরিকত্বকে বেছে নেন।
৮৪ বছর বয়সী সি: থিওনিল্লার অভয়ব ছিল কৃপাপূর্ণ ও আশীষ ধন্য। সি: থিওনিল্লা বাংলাদেশ মন্ডলীতে এক বিরাট অবদান রেখে গেছেন। দরিদ্র, অসহায়, এতিম, স্বজনহারা, অনাথ ও অসুস্থদের পাশে তার উদার ভালবাসা ছিল প্রশংসনীয়। এদেশের মানুষের আধ্যাত্নিক, আর্থিক প্রয়োজন সহ সব ধরনের সাহায্যদানে তিনি ছিলেন স্নেহময়ী মা জননী। একজন ব্রতধারিণী হিসেবে তিনি ছিলেন প্রার্থনাশীল, আত্নত্যাগী, কঠোর পরিশ্রমী, কৃচ্ছ সাধনায় মনোযোগী, আনন্দিত। তার পরার্থপরতা প্রশংসনীয় ।
বাংলাদেশ মন্ডলী তার ৬৫ বছরের মিশনারী জীবনের স্বার্থক ফসল হিসেবে পেয়েছে অনেক যাজক, ব্রতধারী ব্রতধারিণী। আজ শ্রদ্ধাভরে স্নরণ করছে দিনাজপুর শহরের আপামর জনসাধারণ যাদের অন্তরে সি; থিওনিল্লা জ্বেলেছেন শিক্ষার দীপশিখা। দিনাজপুরের সেন্ট যোসেফস্ স্কুলে সিস্টার পিয়া ফারনানদেসের সাথে সাথে সি: থিওনিল্লার অবদানের কমতি ছিলনা। অনেক বছর তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে সেবা দান করে অনেক শিক্ষার্থীদের জীবনে আজও স্নরনীয় হয়ে আছেন। বাংলাদেশ প্রভিন্সও তার কাছে আজ কৃতজ্ঞ তার সকল ভালবাসা ও পরিশ্রমের জন্য। আজ, এই মূহূর্তে যারা শেষবারের মত সি: থিওনিল্লাকে শ্রদ্ধা জানাতে যারা উপস্থিত, যারা বিভিন্ন ভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ কর তার অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করছেন, আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
আমরা সবাই প্রার্থনা করি সি: থিওনিল্লার পরিবারের সকলের জন্য, যারা আজ তার কাছে নেই, শেষবারের মতো দেখতে পারছেন না, প্রভু যেন তাদের দান করেন সান্ত্বনা । স্বজন হারানোর ব্যাথায় তিনি যেন হন তাদের নিত্য সহায়। আসুন আমরা সবাই সি: থিওনিল্লার আত্নার কল্যাণ কামনায় ঈশ্বরের অনুগ্রহ কামনা করি।
গতকাল তেজগাঁও গির্জার কবরস্থানে তাঁর মর দেহ কবরস্থ করা হয়।
(বিজ্ঞপ্তি)