ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নস্যাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

0
380

পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও প্রগতিশীল লেখকদের রচনা বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় সভাপতি লাকী আখতার।

পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় ও অন্যান্য বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভূক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ ও প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়াসহ অন্যান্য অসংগতির প্রতিবাদে এবং শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থিদের ষড়যন্ত্র বিস্তারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৩১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সরিয়ে নেওয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কোন রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত কোন বক্তব্য, বিবৃতি দেয়নি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো নয়ই। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে নিরবতা পালন করছে।’ তারা কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের তদারকি বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, ‘বাহাত্তরের পর কোন শিক্ষানীতিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর বিজ্ঞানমনস্ক চেতনাকে ধারণ করেনি, মানুষের মুক্তির আন্দোলনকে শ্রদ্ধা করেনি।02যারা দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা সেই হেফাজতে ইসলামের কাঁধের ওপর ভর করে সরকার আবার মসনদে বসার জন্যে, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বই মেলা পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকীকরণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়েছে।’ তারা অবিলম্বে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও ও স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা করে। মিছিলটি প্রথমে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে। পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে প্রেসক্লাব পার হয়ে কিছুদূর যেতেই আবারও পুলিশী বাঁধার সম্মুখিন হয়। ব্যারিকেড অতিক্রম করে সামনে এগুনোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। এ সময় তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন।

নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপিতে সাম্প্রদায়িক, বৈষম্যমূলক ও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে প্রত্যাহার, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি তোষণ বন্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের আদর্শের ভিত্তিতে মানবিক মূল্যবোধ ও দেশাত্নচেতনা সমপন্ন বিশ্বজনীন মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ, সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, এস ওয়াজেদ আলী, হুমায়ুন আজাদসহ যে সকল লেখকদের লেখাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো সংযোজন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও বাংলা একাডেমির বানান বিধানের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দূর করে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি দূরীভুত করা, সৃষ্টিশীল সাহিত্য ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করে একটি স্থিতিশীল বানান কাঠামো প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তকের নির্লজ্জ দলীয়করণ, ব্যক্তিস্তুতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ, সাংবিধানিকভাবে শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত, দেশের শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে সংবিধানে উল্লেখিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী, গণমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার জন্যে উপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, পাঠ্যপুস্তক জামাতিকরণ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রেরণকারী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে চরমোনাইয়ের পীর যে হুমকি দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়।03স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, সরকার নিজেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা বিরোধী বলে ঘোষণা করলেও এবং এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বললেও পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত বিষয়ে তার স্ববিরোধিতার আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে নবীন শিক্ষার্থীদের সাম্প্রদায়িক ও কুপমন্ডুক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে আধুনিক ও মানবিক একটি রাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে তাদের শিক্ষাদান বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবী জানাচ্ছি। সমাবেশ থেকে দাবি মানা না হলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ও দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেওয়া হয়।

একই দিন একই দাবিতে দেশের সকল জেলায় প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পিগোষ্ঠীর সভাপতি ড.শফিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ছাত্র ইউনিয়ন, দেশের বুদ্ধিজীবি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, যুব সংহতি, সচেতন নাগরিক সমাজ, সাধারণ ছাত্রজনতা, প্রগতি লেখক সমাজ, কৃষক সমাজ এবং আপামর জনগন এই সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন।04পাশাপাশি দেশের ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ ও ধর্মীয় এবং অন্যান্য বৈষম্যমূলক বিষয় অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আরবি/আরপি/এসএস/ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭