শিরোনাম :
বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু
ডিসি নিউজ:
বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় গতকাল (২৬ অক্টোবর) লগো উদ্বোধনের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে সমাজে ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মৌলবাদ প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত ‘বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’র উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী।
অধ্যাপক গওহর রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন যুদ্ধ হয়েছিল তখন কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান সেটা চিন্তা না করেই সকলে একযোগে যুদ্ধ করে ছিল। তখন কোন বিভাজন সৃষ্টি হয়নি। ধর্মের মধ্যে কোন বিভাজন সৃষ্টি করা যায় না। কারণ সকল ধর্মের মূল কথা শান্তি।’
প্রধান অতিথি আরো বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একত্রিত হয়ে কাজ করলেই একদিন অবশ্যই সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
‘আমাদের ফোরামের মূল উদ্দেশ্য একটি- আমরা শান্তি চাই। আমরা প্রত্যেকের আলাদা ধর্ম আছে কিন্তু আমাদের দেশ একটিই। তাই দেশ আমাদের, দেশ রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের। আজ যদি কোন মসজিদ, মন্দির, গির্জায় হামলা হয় তাহলে বুঝতে হবে আমাদের প্রত্যেকের ওপরই হামলা করা হচ্ছে’ বলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’র কো-অর্ডিনেটর এবং সেভ এন্ড সার্ভ ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ তাইবুল বাসার।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক এবং সকলে মিলে মিশে থাকবে এবং সোনার বাংলাদেশ হবে। একটি সোনার বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য সকললের সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এককভাবে কোন জাতি-ধর্ম সোনার বাংলা গড়তে পারবে না।
বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’র কো-অর্ডিনেটর এবং বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের প্রধান চারটি ধর্মের লোক বসবাস করছি। এই দেশে আমরা সকলে চাই মানব কল্যাণ। মুক্তি যুদ্ধ আমাদের ঠিকানা, বঙ্গবন্ধু আমাদের চেতনা, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রেরণা, ১৬ ডিসেম্বর এবং ২৬ মার্চ আমাদের আমাদের অর্জন, পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐতিহ্য, তাই আমরা সবাই একত্রিত হয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমাদের সবাইকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম চারটি ধর্মের লোকদের নিয়ে বাংলাদেশব্যাপী আন্তধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া হক বিশ্ব শান্তি বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
সেভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশন-সচিবালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ ইন্টার-রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস এন্ড হারমনি’ এর আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ একাত্তরের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্নকে সামনে রেখে দেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষার লক্ষে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক ও মৌলিবাদী শক্তির উত্থান এবং স্বাধীনতাবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা এবং আপামর জনসাধারণের একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ধর্ম ও সম্প্রদায়ভিত্তিক বিদ্বেষ নিরসনে আপামর জনগণ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সবার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। ইন্টাররিলিজিয়াস ফোরামের সেক্রেটারিয়েট-এর দায়িত্ব পালন করছে সেভ এন্ড সার্ভ ফাউন্ডেশন। সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আন্তঃধর্ম শান্তি ও সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করে আসছে এই ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, ক্লেমেন্ট ঢালী, ভিক্টর রেসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জনাব সৈয়দ নাজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী, এমপি, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, মাওলানা মোঃ ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, ইসলামী স্কলার, অধ্যাপক শ্রীমত তপনানন্দ গিরি মহারাজ, সীতাকুন্ডু শংকর মঠ ও মিশন, ড. জিনবোধী ভিক্ষু, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসঙ্গ এবং বিশপ পল শিশির সরকার, প্রাক্তন মর্ডারেটর, চার্চ বাংলাদেশ, প্রমুখ এই ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।