শিরোনাম :
হাজারো মানুষকে টেনে নেয় শেরে বাংলার নিজভূমি চাখারে
চাখার শেরে বাংলা একে ফজলুর হকের নিজ ভূমিতে গড়ে ওঠা জাদুঘর কাছে টানছে দর্শণার্থীদের। দিন দিন পরিচিত হয়ে উঠে চাখার শেরে বাংলার স্মৃতি বিজোরিত ভূমি।
বাংলার বাঘ (শেরে বাংলা একে ফজলুল হক) যিনি হক সাহেব হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।। তিনি বাংলার রাজনীতির ইতিহাসের একজন কিংবদন্তী ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালির কুটনীতিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পুরো নাম আবুল কাশেম ফজলুল হক। বৃটিশ শাসনামলে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরু। এরপর ধীরে ধীরে অবিভক্ত ভারতীয় রাজনীতি পরবর্তীতে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতির একজন বড় ধরণের রাজনিতীক হিসেবে আবির্ভূত হন।
এ. কে. ফজলুক হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র ছিলেন।
সবুজঘেরা গ্রামে বেড়ে ওঠে বাংলার বাঘ। গ্রামের মায়াময় জীবনধারা বার বার তাকে টানতো। তাইতো পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বার বার সময় কাটাতে যেতেন নিজ ভূমি চাখারে।
চাখার জাদুঘর নির্মাণে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেরে বাংলার বাড়ি পরিদর্শন ও সরকারী ফজলুল হক কলেজের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে শেরে বাংলার নামে যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী চাখারে শেরে বাংলার নিজ ভূমিতে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে জাদুঘরটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি কিংবা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়নি। যদিও জাদুঘরটি খুলনা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রন করছে।
স্থানীয়দের দাবি প্রতিদিন অনেক মানুষ এই জাদুঘর দেখতে আসেন। কিছুটা সময় কাটাতে আসেন ছায়াঘেরা শেরে বাংলার ভূমিতে। কিন্তু একটি জাদুঘর যতটা দৃষ্টিনন্দন এবং তথ্যবহুল থাকা প্রয়োজন, ততটা উন্নয়ন হয়নি এই জাদুঘর। স্থানীয়রা জানান সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ষৈয়দ মফিজুল ইসলাম টুকু এখনো শেরে বাংলার জাদুঘরের বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় সাবেক এই ইউপি চেয়ারশ্যানের সাথে। সাবেক এই ইউপি চেয়ারম্যান শেরে বাংলার রক্তের কেউ না হলেও তার মায়ের দিকে একজন নিকটাত্মীয়, তিনি শেরে বাংলার ফুপুর বংশধর। তিনি শেরে বাংলার জাদুঘরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছিলো। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে বাদ হওয়ার জন্য বাংলার ম্যাপ করেছিলেন শেরে বাংলা, যার বাস্তব রূপ দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। স্থানীয়দের সাথে সাথে সাবেক এই ইউপি প্রতিনিধিরও দাবি শেরে বাংলার স্মৃতি রক্ষায় জাদুঘরটি যেন আরো বেশি তথ্যবহুল করে তোলা হয়। এছাড়াও এখানে শেরে বাংলার নামে বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানান। পাশাপাশি চাখারকে পৌরসভা করারও দাবি জানান। যে মানুষ বাংলার জন্য এতকিছু করলেন, তার নিজ ভূমি এখনো পৌরসভা হবে না, তা মানতে রাজী নন স্থানীয় জনগণ।
যেভাবে যাবেন বাংলার এই কিংবদন্তী রাজনীতিক শেরে বাংলার নিজভূমিতে গড়ে ওঠা জাদুঘরে। ঢাকা বা বরিশাল দিক থেকেই যান, গড়িয়ার পাড় বাসষ্ট্যান্ডে মেনে সেখান থেকে সিএনসি বা মাহেন্দ্র নিয়ে গুলসা যেতে হবে। সেখানে থেকে ভ্যানগাড়ি বা ইজিবাইকে করে একেবারে শেরে বাংলার জাদুঘরে যাওয়া যাবে।
শেরে বাংলার জাদুঘরে দেখতে পাবেন শেরে বাংলার ব্যবহার করা জিনিসপত্র। তাঁর ব্যবহার করা চেয়ার টেবিল বিছানা, লেখা চিঠিপত্র, বিভিন্ন সময়ে ক্যামেরাবন্ধী করে রাখা ছবি, উপহার পাওয়া কুমিরের মমিসহ আরো অনেক কিছু। আরো দেখতে পাবেন তাঁর বসবাস করা ঘরটি, যেখানে বসে তিনি দেশের এবং মানুষের কথা ভাবতেন। রয়েছে ছায়াঘেরা ঘরের ব্যালকনি।
বলা হয়ে থাকে বাংলার ইতিহাসে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে শেরে বাংলা অন্যতম। বিশাল রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন মানুষের জন্য দরদী প্রাণ। তিনি আজ বাংলার ইতিহাসের সাথে মিশে একাকার। তিনি নেই, কিন্তু তার রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো এখনো বার বার হাজারো মানুষকে টেনে নেয় নিজভূমি চাখারে।
১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল এই মহৎপ্রাণ মানুষটির জীবনাবসান ঘটে।
আরবি/আরপি/এসএন, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬