শিরোনাম :
নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ঢাকা ক্রেডিটের পিটার ভবন উদ্বোধন
ডিসিনিউজ:
আজ নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ঢাকা ক্রেডিটের পিটার ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ভবনে পরিচালিত হবে মদনপুর বহুমুখী প্রকল্প। ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ডিরেক্টর পিটার পিউরীফিকেশনের নামে নামকরণ করা হয়েছে ভবনটি। এতে রয়েছে ঢাকা ক্রেডিটের কালেকশন বুথ, প্রাথমিক স্কুল ও চ্যাপেল (প্রার্থনা গৃহ)।
পিটার ভবন উদ্বোধন করেছেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ। তাঁর সাথে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার এলিয়াস হেম্ব্রম, সিএসসি, পিটার পিউরীফিকেশনের সহধর্মীণী রেবেকা কস্তা, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, নারায়ণগঞ্জের ঢাকা ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ।
অনুষ্ঠানে বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, মদনপুর বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ক্রেডিট সদস্যদের গুণগত মান পরিবর্তনে কাজ করবে। এখানে ভবিষ্যতে প্রাথমিক স্কুলের কার্যক্রম হবে। পিটার ভবন এই এলাকায় বসবাসকারী খ্রিষ্টভক্তরা মিলন মেলার কেন্দ্রস্থল হিসাবে ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি এই ভবনে ঢাকা ক্রেডিটের কার্যক্রমও চলবে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে পিটার পিউরীফিকেশন নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য তৈরি করেছেন। এ সমিতিতে তাঁর রয়েছে অনেক অবদান। অনেক ত্যাগস্বীকার করেছেন তিনি সমাজের জন্য। তাই তাঁর অবদানের চিহ্ন হিসাবে এই ভবনের নামকরণ করা হয়েছে ‘পিটার ভবন’।
পিটার পিউরীফিকেশনের সহধর্মীণী রেবেকা কস্তা অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে ভবন নির্মাণ করার, তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমি ঢাকা ক্রেডিটকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মদনপুর বহুমুখী প্রকল্পের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান ফাদার এলিয়াস হেম্ব্রম, সিএসসি। তিনি বলেন, ‘মদনপুরে প্রার্থনার জন্য চ্যাপেল তৈরি করার জন্য ‘ঢাকা ক্রেডিকটে কৃতজ্ঞতা জানাই। মদনপুর বহুমুখী প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের খ্রিষ্টবিশ^াসীদের জন্য আর্শিবাদস্বরূপ হবে বলে আমি মনে করি। এই সেন্টারে আভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারবেন। তারা সপ্তাহে মিলিত হতে পারবেন। সুন্দর এই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য ঢাকা ক্রেডিটকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
পংকজ গিলবার্ট কস্তা উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘মদনপুর বহুমুখী প্রকল্পের মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এখানে যে স্থাপনা তৈরি হয়েছে এটি নিজের মনে করে আপনারা দেখে রাখবেন, যতœ নিবেন। এখানে যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে এটি জাতি-ধর্ম-বর্ণের সব মানুষ সুবিধা নিতে পারবেন।’
নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি উত্তম দিন। এখানে পিটার পিউরীফিকেশনের চার জেনারেশন উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর নামে একটি ভবন নির্মাণ করেছে ঢাকা ক্রেডিট। তাঁর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর আত্মার কল্যাণ কামনা করি।’
[wp1s id=”10671″]
‘আর্থিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নে কাজ করবে মদনপুর বহুমুখী প্রকল্প,’ যোগ করে বলেন নির্মল রোজারিও।
তিনি যোগ করে বলেন, ‘পিটার পিউরীফিকেশন কর্মজীবনে খুবই সৎ ছিলেন। তাঁর আদর্শ ধরে রেখেছেন তার সন্তানরা। তাদের সাধুবাদ জানাই।’
হেমন্ত আই কোড়াইয়া বলেন, আমরা আশা করি ঢাকা ক্রেডিটের মধ্য দিয়ে মদনপুরে ভবিষ্যতে একটি ভাল স্কুল হবে। এখানে যারা বসবাস করছেন তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করতে পারবেন।
পিটার পিউরীফিকেশনের মেয়ে আশা মেরিলিন পিউরীফিকেশন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার বাবার নিকট আমি ছিলাম ‘মা’। তিনি আমাকে মা বলে ডাকতেন। আমি ছিলাম তাঁর খুব আদরের। আমার পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাবা আমাকে ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়ে যেতেন। বাবা বলতেন, একদিন দেখবে ঢাকা ক্রেডিট হবে ‘বট গাছ’। আজ সত্যি দেখলাম ঢাকা ক্রেডিট কত বড় হয়েছে। এর কার্যক্রম কত বিস্তৃত। বাবা এক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য তৈরি করেছেন। সমিতিতে সেবা দেওয়ার কারণে বাবা আমাদের পরিবারে সময় কম দিতেন।’
পিটার পিউরীফিকেশনের ছেলে মিল্টন পিউরীফিকেশন চাকরিগত কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার মেয়ে অর্পা পিউরীফিকেশন।
পিটার পিউরীফিকেশনের ছেলে পিন্টু পিউরীফিকেশন বলেন, আজ আমি খুবই গর্ববোধ করছি কারণ আমার বাবার নামে পিটার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। কৃতজ্ঞতা জানাই ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ ও সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তাসহ ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাদের, যারা আমার বাবার নামে ভবন নাম করেছেন।
ঢাকা ক্রেডিটের সিইও লিটন টমাস রোজারিও বলেন, অতীতে অনেক নিবেদিত প্রাণ মানুষ সেবা দেয়াতে ঢাকা ক্রেডিট আজ এত দূর আসতে পেরেছে। ভবিষ্যতে আমরা মদনপুরে ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে একটি স্কুল পরিচালনা করতে চাই। যারা এখনো ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হননি তারা সদস্য হবেন এবং আমাদের সেবা নিবেন।
স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার হোসনে আরা বেগম বলেন, এখানে যদি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন আমি মনে করি ভালই হবে। আমার আপনাদের কার্যক্রমের প্রতি সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থন থাকবে।
পিটার পিউরীফিকেশন ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে নারায়ণগঞ্জে আসেন জীবনের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তিনি নারায়ণগঞ্জে চাকরি করার পাশাপাশি ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং, সিএসসি এর সাথে ১৯৫৫ সন থেকে নারায়ণগঞ্জে সমিতির সদস্য বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন। ১৯৬২ সন থেকে মোট ছয় দফায় ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের ডিরেক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সেবা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর পিটার রতন কোড়াইয়া, আলবার্ট আশিস বিশ^াস, সিইও লিটন টমাস রোজারিও, সিও সুদান গাইন, সিও জোনাস গমেজ, সিও মার্ক খোকন কস্তা, নারায়ণগঞ্জের খ্রিষ্টান কমিউনিটির সমবায়ী নেতা সৌরভ দেউরী, রবি পালমা, রঞ্জিত হালদারসহ প্রায় দুই শতাধিক খ্রিষ্টভক্ত।