ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ ক্রমাগত বেড়েই চলছে এন্ড্রু কিশোরের ক্যান্সার

ক্রমাগত বেড়েই চলছে এন্ড্রু কিশোরের ক্যান্সার

0
473

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরের কেমো আর দেওয়া যাচ্ছে না। পরিকল্পনানুযায়ী নির্ধারিত কেমোথেরাপি দেওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। এক মাস ধরে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। কেমো শেষ করে ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরার কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। বাড়ছে চিকিৎসার ব্যয়।
বর্তমান অবস্থায় কেমো নেওয়ার মতো শারীরিক শক্তি হারিয়েছেন আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এ শিল্পী। এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য কণ্ঠশিল্পী মোমিন বিশ্বাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আজ সকালেও কথা হয়েছে দাদার সঙ্গে। কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। দাদার শরীরে থেমে থেমে জ্বর আসছে। এরই মধ্যে কয়েক ব্যাগ রক্তও দিতে হয়েছে। শারীরিক নানা অসুবিধা দেখা দেওয়ায় বর্তমানে তার কেমোথেরাপি সাময়িক বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকেরা। শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠলে পুনরায় তাঁর কেমোথেরাপি দেওয়া হবে।’
এন্ড্রু কিশোর বর্তমানে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা ধরা পড়ে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লিম সুন থাইয়ের অধীনে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। গত তিন মাস একনাগাড়ে তাঁর চিকিৎসা চলে। চিকিৎসার শুরুতে জানানো হয়েছিল, এন্ড্রু কিশোরকে ৬টি ধাপে ২৪টি কেমো দিতে হবে। ইতিমধ্যে ৪টি ধাপে তার ১৭টি কেমো সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম ধাপে প্রথম কেমোথেরাপির প্রস্তুতি চলছিল। তবে তা শুরু করা যায়নি। এখনো ৭টি কেমো দেওয়া বাকি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে মূলত বাসায় থেকে চিকিৎসা চলছিল। কেমো দেওয়ার সময় বা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হতো গুণী এ শিল্পীকে। দু-এক দিন থাকতেন। তারপর আবার বাসায় চলে যেতেন। কিন্তু এক মাস ধরে সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি হাসপাতালেই ভর্তি আছেন। বাসায় থাকার মতো অবস্থায় নেই। মোমিন বিশ্বাস বলেন, ‘দাদার চিকিৎসার খরচও অনেক বেড়ে গেছে। সেটার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। আমরাও আশা করেছিলাম ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দাদাকে দেশে নিয়ে আসতে পারব। আর তা সম্ভব হচ্ছে না। সবাই দাদার জন্য দোয়া করবেন। শিগগিরই যেন সুস্থ হয়ে তিনি নিজের দেশে ফিরতে পারেন। আগের মতো যেন গাইতে পারেন।’
এন্ড্রু কিশোরের রোগ ‘নন-হজকিন লিম্ফোমা’ প্রসঙ্গে কথা হয় দেশের প্রখ্যাত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুর মোরশেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে জানান, সহজ কথায় নন-হজকিন লিম্ফোমা একটি ক্যানসার, যা শুরু হয় লিম্ফোসাইট নামক সেল বা কোষ থেকে। লিম্ফোসাইট শরীরের রোগ প্রতিরোধ-ব্যবস্থার অংশ। লিম্ফোসাইট থাকে লিম্ফোনোড এবং অন্যান্য লিম্ফোয়েড টিস্যুকে যেমন প্লীহা এবং অস্থিমজ্জায়। এ রোগে জ্বর, রাতে ঘাম দেওয়া, ওজন কমে যাওয়া, খাওয়ায় অরুচি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত রোগীরা মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ, মুখ ফুলে যাওয়া, চোয়াল খোলার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, মুখের সংক্রমণ, অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা প্রভৃতি উপসর্গ থাকে। এ রোগের চিকিৎসা আছে, তবে সারা পৃথিবীতে এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
সংগীতজীবনের শুরুতে আবদুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীত চর্চা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্রে তাঁর প্লে-ব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর খুব জয়প্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি নয়’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’ প্রভৃতি। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদান রাখার জন্য তিনি কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।