শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন আট শতাধিক মানুষ
সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা
অফিস থেকে ফিরছিলেন সঞ্চিত পিউরীফিকেশন (৪৭)। তিনি রিক্সায় ছিলেন। পেছন থেকে একটি দ্রতগামী মোটর সাইকেল রিক্সার পেছনে ধাক্কা দেয়। ছিটকে পড়নে সঞ্চিত। তিনি শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মকভাবে ব্যথা পান; ভেঙ্গে যায় তার দুইটি দাঁত। ক্রেচ দিয়ে দুই সপ্তাহ হাঁটতে হয় তাকে। কালীগঞ্জের দড়িপাড়ার অধিবাসী সঞ্চিত গতকাল ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমার শরীরের ব্যথা এখনো আছে। চারজন ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। আমি ঢাকা ক্রেডিটে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পে প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা জমা দিতাম। আমি চিকিৎসার জন্য আবেদন করি। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচের বিল অনুসারে আমি ঢাকা ক্রেডিট থেকে ৩১ হাজার টাকা পেয়েছি। এই টাকাটা পাওয়ায় আমার অনেক উপকার হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি সবার এই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের সদস্য হওয়া দরকার। এটি বিপদের বন্ধু। এই প্রকল্প সদস্যদের জন্য খুবই সহায়ক। গরীব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। তারা যদি এরকম স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধিনে থাকে, তবে তারাও এই চিকিৎসার সুবিধা পাবে।’
বরিশালের এন্ডু সি রায় ঢাকায় থাকেন। তিনি ও তার পরিাবারের সকলে ঢাকা ক্রেডিটের নিয়মিত সদস্য। পেশায় ব্যবসায়ী এন্ডু সি রায় সম্প্রতি মেয়ে ও স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ২ লাখ টাকা ঢাকা ক্রেডিটের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের মাধ্যমে পেয়েছেন। তিনি ডিসিনিউজকে গতকাল বলেন, ‘দুর্ঘটনা বা অসুখ বলে কয়ে আসে না। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তখন টাকার দরকার পড়ে। সেই টাকার সংস্থান করা কঠিন কাজ হয়ে পড়ে। আমিও সেই দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে গেছি যখন আমার স্ত্রী ও মেয়ে অসুস্থ ছিলো। কিন্তু সৌভাগ্য ক্রমে ঢাকা ক্রেডিটে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পে তারা সদস্য হওয়ায়, চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা পেয়েছি। ঢাকা ক্রেডিটের এই প্রকল্পটি সত্যি আশীর্বাদস্বরূপ। যাদের মাধ্যমে সুন্দর এই প্রকল্পের চিন্তা এসেছিলো তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’
[wp1s id=”11602″]
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের টাকা পেতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। আবেদন করার এক মাসের মধ্যে তিনি টাকা পেয়েছেন।
বান্দুরার ডলোরোজ গমেজের গল্পটাও কিছুটা এরকম। তিনি অসুস্থ হলে পরে তাঁর বড় একটি অপারেশন করাতে হয়। সেখানে চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকা ক্রেডিট থেকে ৫০ হাজার টাকা সুবিধা পেয়েছেন (ভিডিওতে তার বক্তব্য দেখুন)।
ঢাকা ক্রেডিটের হিসাব বিভাগের সিনিয়র অফিসার পরিতোষ মন্ডল ডিসিনিউজকে বলেন, ‘এই পর্যন্ত আমরা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অধীনে ৮৬৭ জনকে চিকিৎসার জন্য এই পর্যন্ত ৪ কোটি ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ১ শত ৩৬ টাকা প্রদান করেছি। এই প্রকল্পটি ঢাকা ক্রেডিটের খুবই জনকল্যাণমূলক। তাই এটির চাহিদা বাড়ছে। সদস্যরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুবই উপকৃত হচ্ছেন। ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের বাধ্যতামূলক এই প্রকল্পটি করতে হয়। কেউ যদি এই প্রকল্পের সদস্য না হয়ে থাকেন তাহলে তাকে সদস্য হওয়ার আহ্বান জানাই।’
পরিতোষ বলেন, বড় ধরনের অসুস্থতা যেমন হার্ট এ্যাটাক, ক্যান্সার, ধমনী আক্রান্ত রোগ, স্ট্রোক, রিনাল ফেইলর, অসুস্থতার কারণে অন্ধ হলে, পক্ষাঘাত, মারাত্মক পোড়া, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গস্থাপন, পিত্তথলির পাথর, অগ্নাশয়ের পাথর অপারেশন, এপেনডিক্স অপারেশন, জরায়ুর টিউমার অপরেশন, মেরুদন্ডের অপারেশন, কিডনির পাথর/টিউমার অপারেশন, থাইরয়েড অপারেশন হার্টের বাইপাস অপারেশন এবং সড়ক ও নৌ দূর্ঘটনায় এই প্রকল্পের সুবিধা সদস্য পেতে পারেন। তবে সদস্যকে এই প্রকল্পের প্রিমিয়াম নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। মাসিক প্রিমিয়াম যথা ক্রমে: ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৬০০ টাকা রয়েছে। সদস্য যদি প্রিমিয়াম নিয়মিত এক বছর পরিচালনা করেন, তবে তিনি বয়স ও প্রিমিয়াম অনুসারে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা চিকিৎসার প্রকৃত খরচ পেয়ে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচের সমস্ত বিল সংগ্রহ করতে হবে এবং মেডিকেল কাগজপত্রও সংগ্রহে রাখতে হবে। ঢাকা ক্রেডিট থেকে চিকিৎসা খরচের জন্য সেগুলো আবেদনপত্রের সাথে এক কপি ছবি দিয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার এক মাসের মধ্যে ঢাকা ক্রেডিটের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের সদস্য তাঁর দাবীকৃত টাকা পাবেন।
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য: অসুস্থকালীন সময়ে চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থের সংস্থান এবং সদস্য-সদস্যাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সদস্য-সদস্যাদের স্বাস্থ্যগত সেবা প্রদানের মাধ্যমে ইউনিয়নে সঞ্চয় আমানত বৃদ্ধি করা এছাড়া অসুস্থকালীন সময়ে চিকিৎসার অর্থের জন্য অন্যের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা হ্রাস, আর্থিকভাবে নিজে স্বাবলম্বী থাকা এবং মানসিক শক্তি জোগানো।
হিসাবের মেয়াদ : ৫ বছর মেয়াদি এবং নবায়ন যোগ্য।
হিসাব খোলার যোগ্যতা:
-হিসাব খোলা জন্য অবশ্যই সঞ্চয়ী হিসাবধারী হতে হবে এবং নিয়মিত মাসিক জমা থাকতে হবে।
-পাসপোর্ট সাইজ এর দুই কপি ফটো প্রদান করতে হবে।
-হিসাব খোলার সময় যাদের বয়স ৪৫ বছরের উর্ধ্বে তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য সনদ বা হেলথ সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
আরো বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন: ঢাকা ক্রেডিট