শিরোনাম :
দাম্পত্য জীবন ও পরিবার
|| পলিন ফ্রান্সিস ||
দাম্পত্য জীবন ও পরিবার শব্দ দু’টো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব চিন্তই করা যায় না। কেননা এই দাম্পত্য জীবনই পরিবারের সূতিকাগার। দম্পতিগণ যখন পরস্পরকে। ভালবেসে সৃষ্টিকাজে সহায়তা করে সন্তান লাভ করে তার মধ্যে দিয়েই গড়ে ওঠে পরিবার।
ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে যারা থাকে সম্পূর্ণ আলাদা, ভিন্ন জায়গায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা, ভিন্ন পরিবেশে, বহুদূরে থাকে অনেকের অবস্থান অনেকের ক্ষেত্রে জানা শোনা দেখা সাক্ষাৎ কিছুই হয় না। সেই তারাই একদিন বিবাহ সংস্কারের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর, যাজক ও মন্ডলীর জনগণকে সাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞা করে হয়ে ওঠে দম্পত্তি। বিয়ের দিন থেকেই এই দম্পতি চেষ্টা করে প্রকৃত স্বামী ও প্রকৃত স্ত্রী হতে। বিবাহিত জীবনে প্রথম ও প্রধান কর্তব্যই হলো প্রকৃত স্বামী ও প্রকৃত স্ত্রী হতে শেখা। তবে এটা একদিনের কাজ নয়। এটা প্রতিদিনের ও সারা জীবনের সাধনা। এই সাধনা যত সচল ও সক্রিয় থাকে দাম্পত্য জীবন তত সুখের ও শক্তিশালী হয়, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক হয় গভীর যার স্থায়ীত্বকাল থাকে মৃত্যু পর্যন্ত। এই দম্পতি দ্বারাই গড়ে ওঠে শক্তিশালী পরিবারও।
আমাদের মাঝে বিভিন্ন বয়সের দম্পতি রয়েছে। অনেকে অতিবাহিত করেছেন ৫০/৬০ বৎসরের মতো দীর্ঘ সময়। করো করো পঁচিশ। অনেকের হয়তোবা দশ কিংবা তারও চেয়ে কম, অনেকেই আবার নব বিবাহিত। সে যাই হোক না কেন, যে প্রতিজ্ঞার মধ্যদিয়ে দাম্পত্য জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল “আজ হতে সুখে-দুঃখে, ধনে দারিদ্রে, স্বাস্থ্যে-অস্বাস্থ্যে আমি আজীবন তোমাকে ভালোবাসব, তোমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব, সেই প্রতিজ্ঞা পালনে দম্পতিগণ কতটুকু বিশ্বস্ত ছিল বা আছে? কেন আছে দম্পতিরা?
আপাতদৃষ্টিতে অনেক পরিবারেই দেখা যায় আহ্ কি মধুর এদের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে একজন অন্যজনের সঙ্গে কথাই বলে না। পরস্পরের সঙ্গে কোন মতামত বিনিময় হচ্ছে না। এক ঘরে থেকেও পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে লক্ষ যোজন দূরে। পরস্পর পরস্পরের সেবা যত্ম থেকে বিরত থাকছে। কখনও দেখা যায় একজন অন্যজনকে ভীষণ ভয় পায়। কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত স্বার্থপর। কেউ কেউ হয়তো হুকুমের দাস বা দাসী। অনেকের স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। নিজ নিজ গুণের বিকাশ বা ব্যবহার করতে পারছে না কোনো ক্রমে। পরিবারে পছন্দ অপছন্দের কোন দাম নেই। রুক্ষ ব্যবহার, ধমকের সুরে কথা বলে দাম্পত্য সম্পক্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। অনেক পরিবারে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও আছে কঠিন বিধিনিষেধ। টাকা পয়সা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহারে আছে নানা অশান্তি। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে রয়েছে আপত্তি। এছাড়াও আরও হরেক রকম প্রতিবন্ধকতা নিয়তই দাম্পত্য জীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। যা প্রথম দিনের প্রতিজ্ঞার পরিপন্থি। বিচ্ছেদও হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের দম্পতিদের মধ্য।
এ অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্য কী করতে পারি?
দাম্পত্য জীবন মূলত ভালবাসার জীবন। প্রেমের জীবন। দম্পতি যদি পরস্পরকে গভীর প্রেমে প্রেম করে তাহলে উল্লিখিত বিষয়গুলো দাম্পত্য জীবরে কোনো অশান্তি বা বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে না। ভালোবাসা সম্বন্ধে শাস্ত্র তো বলে ভালোবাসা নিত্য সহিষ্ণু, ভালোবাসা স্নেহকোমল। তার মধ্যে নেই কোন ঈর্ষা, ভালোবাসা কখনও বড়াই করে না, উদ্ধতও হয় না, রুক্ষ্মও হয় না। সে স্বার্থপর নয়, বদমেজাজীও নয়, পরের অপরাধ সে কখনও ধরেই না। অধর্মে সে আনন্দ পায় না। বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ। ভালোবাসা সমস্তই ক্ষমার চোখে দেখে, তার বিশ্বাস সীমাহীন, সীমাহীন তার আশা ও ধৈর্য। ভালোবাসার মৃত্যু নেই (১ম করি: ৪-৮)। সুতরাং দাম্পত্য জীবনের ভালোবাসাতো এমনই হওয়া চাই। কেননা বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সম্পর্কটাকে ভাল রাখতে চাইলে, টিকিয়ে রাখতে চাইলে উক্ত শাস্ত্রবাণী নিয়ত অনুশীলন করা প্রয়োজন। সেই সাথে দম্পতিগণ প্রার্থনার মাধ্যমে খ্রিষ্টের সঙ্গে সংলাপ করতে এবং নিজেদের জীবন তাঁর কাছে উৎসর্গ করতে আহুত।
এই শাস্ত্রবাণী অনুসারে যদি জীবন তথা আদর্শ পরিবার গড়তে চাই, তাহলে কিছু নীতি সূত্র মেনে চলতে হয়। আর সেগুলো হলো:-
পরস্পরকে প্রফুল্ল রাখুন আদর/ব্যবহার চান তেমন আদর/ব্যবহার নিজেও করুন।
বন্ধু ও সহভাগী হোন/সহভাগিতা নিয়ে যে পরিবার সেটাই হয় সুখি পরিবার।
পরস্পরের প্রতি খোলা-মেলা হোন
পরস্পরের কথা মন দিয়ে শুনুন
পরস্পরের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।
পরস্পরকে সমর্থন করুন।
পরস্পরের প্রতি ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখুন।
পরস্পরকে ভালোবাসুন।
ঈশ্বরের ভালোবাসায় নিত্য অবগাহন করুন।
আরও কিছু টিপস্:
স্বামী স্ত্রী দু’জনেই নিঃস্বার্থ হোন।
দু’জনে একই সময়ে রাগ থেকে বিরত থাকুন।
একজন অন্যজনের প্রয়োজন দেখুন।
অতীতের ভুলত্রুটির জন্য খোঁচা দিয়ে কথা বলা বন্ধ রাখুন।
পরস্পরকে মূল্য দিন।
প্রথম প্রেমের সুখের দিনগুলো সর্বদা স্মরণে রাখুন। স্মরণে রাখুন দাম্পত্য বন্ধন ঈশ্বর প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর আশীর্বাদ ছাড়া এ জীবন সফল হতে পারে না।
মিষ্টি করে কথা বলুন।
সূর্য ডোবার আগেই রাগ মিটিয়ে ফেলুন।
এই নীতি তথা টিপস্গুলো অনুশীলন করে প্রত্যেক দম্পতির অন্তর ও প্রতিটি পরিবার হয়ে উঠুক যীশুর প্রকৃত জন্মস্থান; এই প্রত্যাশা রাখি।
(লেখাটি মনিকন্ঠ থেকে সংগৃহীত)