শিরোনাম :
সভারে ভূমি ও পরিবেশ রক্ষায় হাজারো মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ
ডিসিনিউজ, সাভার:
আজ সভারে ভূমি ও পরিবেশ রক্ষায় হাজারো মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে তারা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের হয়রানি, পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত শহরায়ন বন্ধের দাবী জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি ও পরিবেশ রক্ষা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক এবং সাভার-বিরুলিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, পৈত্রিক জমি রক্ষা করার জন্য আমরা বার বার সমাবেশ করছি। তথাকথিত কোর্ড অব ওয়ার্ডসের কারণে ভূমি অফিস আমাদের জমির খাজনা নিচ্ছে না। আমাদেরকে হয়রানী করছে। ভূমিদস্যুরা জমি দখলের চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা তৎকালীন ঢাকার নওয়াব এষ্টেট থেকে পত্তননামা, পাট্টানামা, বন্দোবস্তীনামা, কবুলিয়তনামা, নিলাম খরিদ ইত্যাদি মূলে জমির মালিক হয়েছেন। অতপর নিয়মিতভাবে খাজনা দিয়েছেন, খারিজ করিয়েছেন, জমি কেনা-বেচা করেছেন। সেমতে আমরা তার পরবর্তী বংশধর হিসেবে জমির মালিক হয়েছি। সিএস, এসএ, আরএস-এ নাম অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কেউ কেউ পত্তননামা, পাট্টানামা, বন্দোবস্তীনামা, কবুলিয়তনাম, নিলাম খরিদমূলে মালিক হয়ে এসএ, আরএস-এ নাম রেকর্ডভুক্ত করিয়েছেন। বিএস রেকর্ডেও মাঠ পর্যায়ে জড়িপ করিয়ে মাঠ পর্চা লাভ করেছেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল তথাকথিত কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর নামে ভূমি সংস্কার কমিশন আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির বিএস রেকর্ড প্রদানের বাধা সৃষ্টি করছেন; জমির খাজনা-খারিজ বন্ধ রেখেছেন। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিভিন্ন ভূমিদস্যু, ভূইফোর প্রতিষ্ঠান ও স্বার্থানেষী মহলকে লিজ প্রদানের পায়তারা করছেন। একটি কুচক্রী মহল এই অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে নব্বই দশকের শুরু থেকে এই অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। এলাকার মিটন, দক্ষিণ কৃষ্ণপুর, কাঠগড়া, কালিয়াকৈর, কমলাপুরের চাপ এলাকা, কুমারখোদা, শ্যামপুর, বাঘনীবাড়ী, মইস্তাপাড়া এলাকায় ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে এ যাবৎ ভুমিদস্যুরা হামলা করে জমি দখলের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এলাকার গনগণ সংঘবদ্ধভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছিল। অনেককে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আর এ সকল ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি, ভুলে যেতেও পারি না।
নির্মল রোজারিও যোগ করে বলেন, এই মাটি আমাদের মাটি। এটি কাউকে দখল করতে দিবো। আমরা প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করি কোর্ড অব ওয়ার্ডসের ফলে যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা যেন সমাধান করা হয়। আমরা একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত সাভার চাই। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে স্বগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ রক্ষা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব এবং সাভার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাভার নাগরীক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন খান নাইম, অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল, সামাদ মোল্লা, অধ্যাপক আলি হোসেন, সাভার ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দীলিফ মার্টিন গমেজ, সাভার ওয়াইএমসিএ’র সভাপতি তপন টমাস রোজারিও প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন খয়েরউদ্দিন ও ডা. মার্সেল পেরেরা।
নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মোল্লা (ঠান্ডু) অনুষ্ঠানে বলেন, সাভারের মানুষের ন্যায়ের জন্য তিনি সব সময় পাশে থাকবেন।
নাগরিক সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে সাভার ওয়াইএমসিএ।
সাভার ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন মেম্বার দীলিপ মার্টিন গমেজ ডিসিনিউজকে বলেন, কোর্ড অব ওয়ার্ডসের কারণে সরকার আমাদের জমির খাজনা নিচ্ছে না। আমাদের জমি অবৈধ না। যে জমি ৮০-৯০ বছর ধরে আমরা ভোগ দখল করছি। এই জমি আমাদের। সন্ত্রাসীরা আমাদের জমি দখল করতে আসে। লাঠি-সোঠা নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের মতো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আমরা অশান্তি চাই না, শান্তি চাই। আমরা আমাদের পৈত্রিক জমি বিক্রি করতে পারছি না। আমরা চাই সরকার এই সমস্যার সমাধান করুক।
স্থানীয় অধিবাসী বলু খান বলেন, আমরা ভূমি দস্যুদের কারণে ভালো নাই। যেখানে জমির কাগজ আছে, সেখানে কীভাবে ভূমি দস্যুরা আমাদের উচ্ছেদ করতে আসে?
কমলাপুরের অধিবাসী তপন ডি’রোজারিও বলেন, ‘আমরা প্রায় এক শ বছর ধরে সাভারে আছি। তারপরও আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, শিল্পায়নের কারণে সাভারের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নারিকেল গাছ মরে যাচ্ছে। আমরা জমিতে চাষ করতে পারছি না। পরিকল্পিত নগরায়ন করার আহ্বান জানাই।
স্থানীয় অধিবাসী আলি হোসেন বলেন, একটি কথাই হলো, কুচক্রি মহলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, একতা বদ্ধ হয়ে আমরা আমাদের ন্যায্য আদায়ের জন্য কাজ করি।
বিরুলিয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সামাদ মোল্লা বলেন, মা-বাবা, দাদা-দাদীর ধন সম্পদ করেছেন কিন্তু তারা তা ভোগ দখল করতে পারেন না। তবে আমরা আন্দোলন করবো, আমাদের সম্পত্তি যেন কেউ অন্যায়ভাবে দখল করতে না পারে। এই আন্দোলনের ফল আমাদের সন্তানেরা ভোগ করবে।
অনুষ্ঠানে সাভার ও বিরুলিয়া থেকে সহস্রাধিক কোর্ট অব ওয়ার্ডসের হয়রানির শিকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।