শিরোনাম :
|| স্বপন রোজারিও ||
মধ্য ডিসেম্বর (২০১৯) চীনের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয়। এর পর মানুষের মাধ্যমে এ ভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশেও হয়েছে। এ যাবত আমাদের দেশে ৪৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে এবং ৫ জন আক্রান্ত ব্যক্তি ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখের বেশী এবং ২৪ হাজারের বেশী মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এই ভাইরাস সংক্রামিত হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। বলতে হবে করোন ভাইরাস, আর না, আর না। এ সময় আমাদের নিজেদের বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে যাতে এ ভাইরাস আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। বিশেষ করে যারা ইতালী ও চীনসহ এ ভাইরাসে আক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে তাদেরকে অবশ্যই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হতো। বিদেশে যারা থাকেন তাদের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী থাকে। তাই প্রবাসীদের এ দেশে আসার পর কোয়ারেন্টাইনে রাখা বাধ্যতামূলক ছিলো বা এয়ারপোর্ট থেকে তাদের সোজা সরকারিভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা প্রয়োজন ছিলো। শুধু এ ছোট কাজটি করতে পারলে আমরা আরও বেশী নিরাপদ থাকতে পারতাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল- এই ছোট কাজটি আমরা সঠিকভাবে করতে সক্ষম হয়নি এবং প্রবাসীরা কোয়ারেন্টাইন মানেনি। এমনও দেখা গেছে, কেউ কেউ বিদেশ থেকে এসে বিয়ে পর্যন্ত করে ফেলেছেন। কেউ কেউ শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন। যার ফলে এ ভাইরাসের প্রদুর্ভাব আমাদের দেশে দেখা দিয়েছে। আমরা একটু সচেতন হলে আমাদের দেশে এ ভাইরাস সংক্রামকের সুযোগ খুবই কম ছিলো। যাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে তাদেরকে হাসপাতালে ১৪ দিনের আইসোলেশনে রাখা অত্যাবশ্যক। বিদেশ থেকে ফিরে এসে যারা ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে যান নি তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসন আর্থিক জরিমানা করেছে। সরকারের এই শুভ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর অনেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে গেছেন এবং সরকারী ছুটি দেয়ার পর অনেকে গ্রামের বাড়ি গেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ দেয়া বা সরকারী ছুটি দেয়া হয়েছিলো বাড়িতে থাকার জন্য। কিন্তু আমরা তা মানিনি। যারা কক্সবাজার বা গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন তাদেরও ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া উচিত।
এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে হলে নিজেদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে হাত পরিস্কার করতে হবে, ৪ ঘন্টা পর পর। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। হাঁচি-কাশি মানুষের সামনে দেয়া যাবে না, আর যদি দিতে হয় তবে মুখ-নাক কনুই দিয়ে ঢেকে বা রুমাল বা টিস্যু দিয়ে ঢেকে হাঁচি-কাশি দিতে হবে, তবে হাত ব্যবহার করা যাবে না। বড় বড় জমায়েত, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, সভা, সেমিনার, আড্ডা এ সময় এড়িয়ে চলতে হবে। এ সময় দেশ বিদেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুয়ের সাথে হ্যান্ডশেক বা কোলাকোলি করা যাবে না। হ্যান্ডশেকের পরিবর্তে সালাম দেয়া যেতে পারে বা দু’হাত জোর করে নমস্কার দেয়া যেতে পারেহ। সকল খাবার (মাছ, মাংস বা সবজি) ভালভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। মরা পশু-পাখির সংস্পর্শে আসা যাবে না। ঘন ঘন গরম পানি বা শরবত খাওয়া যেতে পারে। হাত ভাল করে পরিস্কার না করে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ করা যাবে না। কারণ এ তিনটি অঙ্গ দিয়ে এ ভাইরাস দেহে প্রবেশ করতে পারে। এ সময় কাজ না ছাড়া ঘরে অবস্থান করাই ভালো এবং স্বাস্থ্য বিধি পরিপালন করতে হবে। তবে যারা দিন আনে দিন খায় তাদের প্রতি আমাদের সদয় দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এ সংকটকালে সম্ভব হলে সরকার তাদের আর্থিক সহযোগিতা করতে পারে। বাড়িওয়ালারা তাদের এক মাসের বাড়িভাড়া মওকুফ করতে পারেন। একটি সুখের সংবাদ এই যে, কয়েকজন বাড়িওয়ালা ইতোমধ্যে বাড়িভাড়া মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁকে সাধুবাদ জানাই। এরুপভাবে আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে আমরা এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারবো। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি বা নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকতে হবে এবং ডাক্তারের পরমর্শ অনুসারে চলতে হবে। প্রবাসীদের সংস্পর্শ পরিত্যাগ করতে হবে এবং যে এলাকায় এ রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে সেই এলাকা পরিহার করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা আইইডিসিআর এর সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
আমাদের একটি বদ্ধমূল ধারনা রয়েছে যে, আমাকে বা আমার পরিবারকে এ ভাইরাস স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের এ ধারনা একেবারেই ভুল। চীনের মত দেশে, ইতালীর মত দেশে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাস ভয়াবহভাবে সংক্রামিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের মত দেশে এ ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে সহজেই।
তবে করোনা প্রতিরোধে ভয়ের বা আতংকের কোন কারণ নাই। আমরা নিজেরা সচেতন থাকলে করোনা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না, এই বিশ্বাস আমাদের আছে। তবে এজন্য আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। আমরা বীরের জাতি, যুদ্ধ করে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি অর্জন করেছি। আশা করি, আমরা এ যুদ্ধেও চীনের মত জয় লাভ করবো।