শিরোনাম :
কেন করোনা বাংলাদেশে ব্যাপক আঘাত হানবে না!
লরেন্স রানা || গাজীপুর
পৃথিবীর যে সব দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারী আকার নিয়েছে তার সমাজ ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো না। সেখানে বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থা। যেমন বহু চাইনিজ যারা দ্বৈত নাগরিক হয়ে ছড়িয়ে আছে ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রলিয়াতে। তারা টাকা পয়সা নিয়ে এই সব দেশে ব্যবসা করছে। চাইনিজ নিউইয়ার উপলক্ষে তারা ডিসেম্বর/জানুয়ারিতে চায়না গিয়ে আবার ফিরে আসে। গোপনে তাদের অনেকের মাঝে করোনা জীবাণু বাসা বাধে যা তারা কেউ জানে না। এর পর বিভিন্ন ক্লাব/বার/ স্টেডিয়াম/খাবারের দোকানে তারা অবাধে বিচরণ করায় রোগটি ছড়িয়ে দেয় নিজের অজান্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের মাঝে। আর এভাবেই বিদেশি এই রোগটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠে।
শুরুতে বেশী মাত্রায় আক্রান্ত দেশগুলো বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেয়নি। যখন তাঁরা বুঝতে পারে ততদিনে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে কমিউনিটিতে। আর যেহেতু শ্বাস-কষ্ট এর প্রধান সমস্যা তাই বহু লোকের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ শ্বাস কষ্ট নিয়ে ৭০০ রোগী এলে আমার যদি ৫০ টির বেশি ভেন্টিলেটর না থাকে তবে তো ৬৫০ জনকে এই সেবা দেওয়া যাবে না। এবং ৫০ টি ভেন্টিলেটর প্রতিদিন খালি হয় না। তো ঐ দিন মারা যেতে পারে ৬৫০ এবং পরের দিন ৭০০। এর জন্যেই করোনাতে এত মৃত্যু।
বাংলাদেশের মানুষ ৫০ পার হলেই কাজ ছেড়ে ঝাড়া হাত পা হয়ে যায়। কিন্তু আক্রান্ত দেশগুলোতে ৬২ বা অবসর এর পরে শুরু হয় আসল জীবন। সরকারি পেনশন এর টাকা দিয়ে এরা বের হয় বিশ্বভ্রমণে। বিমান নয় বরং প্রমোদতরী তাঁদের প্রথম পছন্দ। তাইতো চায়না বা জাপানের বিভিন্ন প্রমোদতরীতে কানাডা/আমেরিকার আটকে পরা নাগরিকদের নিয়ে তারা রোগটিকে নিজের দেশে আমন্ত্রণ করে। পরে এই সব লোকের মাধ্যম রেস্টুরেন্টেগুলো ব্যাপক ভাবে আক্রান্ত হয় আমেরিকা বা কানাডা বা ইউরোপে। নয়তো নিউইয়র্কে এত বেশি বাংলাদেশি আক্রান্ত হতো না।
এবার আসি বাংলাদেশে কেন করোনা মহামারী ব্যাপক হবে না এই প্রসঙ্গে। চায়নাতে জানুয়ারী/ফেব্রুয়ারীতে যখন রোগটি ব্যাপক আকারে ছিল তখনও বাংলাদেশ করোনা মুক্তছিল। এর পর সরকার ৩০০ র বেশি বাংলাদেশীকে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় এনে হজ্বক্যাম্পে রাখে ১৪ দিন। তাঁরা তা মেনে নেয়। তার মধ্যে সবায় ছিলেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তাই রোগটির ভয়ানক অবস্থা জেনে দেশকে বিপদ এ না ফেলে তারা সকল সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়।
কিন্তু ইতালি থেকে যারা আসলো তাঁরা অনেকটা হঠাৎ করেই চলে আসে যে তথ্য সরকারের কাছে ছিল না। যখন সরকার জানতে পারলো ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাই তাঁদের যখন আসকোনা নেওয়া হলো সামগ্রিক অবস্থা দেখে তাঁরা হতাশ হয়ে মারমুখী হয়ে বাসায় চলে যেতে চায়। এখানে বিদেশ ফেরতদের ইউরোপ এর শিক্ষা কোনো কাজে দেয়নি। বরং তাঁরা বাজে ব্যবহার করে সরকারকে বিব্রত করে। অশিক্ষা/ইউরোপ এ সামাজিক মর্যাদার অভাব থেকেই এমনটা হয়েছে।
এটা সত্য ইউরোপ থেকে কেউ আক্রান্ত হয়ে দেশের বিমান ধরেনি। তাঁরা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয় পথে বা বিমানে। ধরুন করোনা আক্রান্ত কোন রোগী বিমানের টয়লেট ব্যবহার করলে পরবর্তীতে যাঁরা ঐ টয়লেটে যাবে তাঁরা সকলে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। বা দীর্ঘপথে যারা বিমানের সিটে বা রিমোট ব্যবহার করে টিভি দেখেছেন সেখান থেকে নীরবে ভাইরাসটি নিয়ে দেশে এসেছেন। এরপর পরিবার কে ফেলেছেন মারাত্মক ঝুঁকিতে।
এখনো যা অবস্থা মনে হচ্ছে আক্রান্ত সবাই কন্টাক্ট। বাংলাদেশ এ এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা কোনো গ্রাম বা শহরে কোনো বাড়ি বা বাসায় কেউ আক্রান্ত হলে লোকমুখে তা দূরদূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। এবং এটাই হচ্ছে সুবিধা। তখন মানুষ ঐ সব এলাকা এড়িয়ে যাবে। এবং ব্যপক সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকবে। কারণ আমাদের বারে/ক্লাবে বা রেস্টুরেন্টে যাবার সংস্কৃতি খুবই সামান্য।
যদিও বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিন অনেক আগেই শেষ। তাই তাঁদের কাছ থেকে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হবার সম্ভবনা নেই। তাই তাঁদের পরিবার যদি আরো ১০ দিন করোনা মুক্ত থাকে তবে আমার বিশ্বাস করোনা বাংলাদেশ এ মহামারী আকারে দেখা দিবে না।
সবায় ভাল থাকবেন।