শিরোনাম :
সমবায় খাতেও প্রণোদনা অত্যাবশ্যকীয়: দেশের সমবায় নেতৃবৃন্দের বিবৃতি
|| রাফায়েল পালমা ||
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘোষণা দিয়েছেন যে, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপের কারণে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তায় জড়িত মানুষকে ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আক্রান্তদের দিনরাত সেবাদান করছেন যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী তাদের প্রতি বাড়িওয়ালাসহ যেকোনো মানুষকে তাদের প্রতি সদয় আচরণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাদের জন্য প্রনোদনাও ঘোষণা করেছেন। সরকার প্রধান তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সহায়তায় মমতার হাত প্রসারিত করেছেন। তিনি এও বলেছেন, প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্পের বাজেট থেকে হলেও বর্তমান জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হবে। তিনি আরো বলেছেন, সরকারের প্রদত্ত সাহায্য কোনো ব্যক্তি বা মহল অবৈধভাবে তসরুফ করলে তার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারের উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো দেশের ক্রান্তিলগ্নে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। সাহসী এসব পদক্ষেপের জন্য বর্তমান সরকার প্রধান যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কেননা, যেকোনো দেশের মহামারির মতো এমন দুর্যোগের সময়ই সত্যিকারের জনদরদী নেতৃত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। নিশ্চয়ই এই দুর্যোগ চিরদিন স্থায়ী থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থ সাহায্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে করেছেন শক্তিশালী। সাধুবাদ জানাই এসকল উদার উদ্যোমী পদক্ষেপের জন্য।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালির জন্য ছিল এক মহাপ্রলয়ের সময়। ১৯৭১ সালের নয় মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ দিয়েছেন সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যেমনভাবে বাঙালি এক হয়েছিল তার নজির আর দেখা যায়নি। যুদ্ধের পর দেশের সকল উন্নয়নকামী মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বিভিন্ন দরদী দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি- তাদের নৈতিক ও বৈষয়িক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ আশার আলো দেখতে পেয়েছিল, বর্তমানে হতে চলেছে মধ্যম আয়ের দেশ।
দেশের এই অগ্রগতির পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের সমবায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশ স্বাধীনের পরপরই তিনি যে কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন তা হলো সমবায়ের কথা। সমবায়ের মাধ্যমে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সমবায়কে দেশের পুনগর্ঠন ও উন্নয়নের দ্বিতীয় খাত হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি স্বাধীনতাত্তোর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘আমাদের সংঘবদ্ধ জনশক্তির সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে সোনার বাংলা। এ দায়িত্ব সমগ্র জাতির, প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের এবং তাদের প্রতিনিধিদের। তবেই আমাদের স্বপ্ন সার্থক হবে, সার্থক হবে শহীদদের আত্মত্যাগ, স্বার্থক হবে মাতার অশ্রু। রাজনৈতিক স্বাধীনতা তার সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদে, অপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নে। তবেই গণতান্ত্রিক নীতির এবং সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাবো সমবায়ের মাধ্যমে।
বঙ্গবন্ধুর সেই অমিয় বাণীর আলোকে পর্যায় ক্রমে শ্রমজীবী মানুষ সামর্থ্য অর্জন করেছে সমবায় গঠন করতে। উল্লেখ্য যে, তারও আগে পূর্ববঙ্গে (তৎকালীন পাকিস্তানে ১৯৫৫ সালে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ঢাকা নামে সমবায়ের গোড়াপত্তন করেন বিদেশি এক পাদ্রী (ফাদার) চার্লস জে ইয়াং। এর প্রতিষ্ঠাকালীণ সদস্য ছিলেন ৫০ জন এবং মূলধন ছিলো ২৫ টাকা। সেই পাদ্রী পাকিস্তানি কাবুলীওয়ালাদের চড়াসুদে ঋণ দিয়ে বাঙালিদের ওপর নির্যাতনকে প্রত্যেক্ষ করে তাদের রক্ষার জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে সেই সমবায় সমিতি গঠন করেছিলেন। সেটিই ছিল এই বঙ্গে সর্বপ্রথম ক্রেডিট ইউনিয়ন। প্রথমে ঢাকার খ্রিষ্টানদের মাধ্যমে সমিতি শুরু হলেও পরে পর্যায়ক্রমে দেশের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রতিটি চার্চে এর ব্যপ্তি ঘটে। পরে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে এই সমবায় আন্দোলনটি ছড়িয়ে পড়ে। প্রয়োজন হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের।
অনেক উত্থানপতনের পর যখন বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আন্দোলন আরো বেশি বেগবান হয়। দেশের আনাচেকানাচে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে গড়ে ওঠে সমবায় সমিতি। বর্তমানে জেলে, দিনমজুর, তাঁতী পরিবহন শ্রমিক, চাকরিজীবী, আইনজীবীসহ নানা শ্রেণির মানুষের সহযোগিতা ও একতার ফলে সমিতিগুলো পূর্ণরূপ লাভ করেছে। ইতিমধ্যে যদিও কিছু তথাকথিত সমিতি ধূমকেতুর মতো অবির্ভাব হয়ে অনেক মানুুষকে নিঃস্ব করেছে, তা কিন্তু সমবায়ের সত্যিকারের রূপ নয়। যে সকল সমিতি সত্যিকারের সমিতির নির্দেশ মেনে যুগ যুগ ধরে সদস্যসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে অবদান রেখে চলেছে এমন সমিতির অভাব নেই। সংশ্লিষ্ট সমবায় অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এসব সমিতি সমবায় মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি ও আইন মেনে দুর্বার গতিতে উন্নয়নের সাক্ষর রেখে চলেছে।
বর্তমানে সারাদেশে প্রাথমিত সমিতি রয়েছে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৯৭টি, জাতীয় সমিতি ২২টি এবং কেন্দ্রীয় সমিতি ১ হাজার ১৯১টি। এই হিসাবে মোট সমিতির সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩১০টি এবং মোট সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ৯ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৩২ জন। তাঁদের মধ্যে ৮৫ লক্ষ ৯ হাজার ৩১ জন পুরুষ এবং ২৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪০১ জন নারী।
এসব সমিতির মাধ্যমে সদস্যরা সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের সন্তানদের শিক্ষাসহ জীবনমান উন্নয়নে ব্রতী। এরই মাঝে করোনাভাইরাসের হিংস্র থাবায় স্তম্ভিত দেশে সমবায় সেক্টর। সদস্যরা তাদের ঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। কারণ, দীর্ঘদিন যাবত তাদের আয়ের পথ রুদ্ধ হয়েছে। আবার ঋণ-নেওয়ার সক্ষমতাও হারিয়েছেন তারা। সদস্যদের মধ্যে অনেকেই অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৯২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার অংশ সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেওয়া হলে সমিতিগুলো দেশের অথনৈতিক বুনিয়াদ পুনগঠনে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে বলে সমবায় বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা। তাঁরা মনে করেন, তৃণমূল পর্যায়ে অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে সমবায়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই সমবায়কে প্রণোদনার অর্থ দাঁড়াবে তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক পুনগর্ঠন না করতে পারলে দেশে বৈষম্য সৃষ্টি হতেই থাকবে। এই বৈষম্য সৃষ্টি করবে আরো হাজারো সমস্যা।
দেশের বা দেশের বাইরের বিশ্লেষকগণ মনে করেন, এই মহাদুর্যোগের ফলশ্রুতিতে আরো অনেক মানুষের মৃত্যু হবে। যারা শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে, তাদের মধ্যে চিন্তার গভীরতা বৃদ্ধি পাবে, মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ জাগাবে এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের বৈষম্য কমবে। মরণব্যধি অবহেলা নয়। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি সেই অনুভূতিতে চলতে পারি, তবে বৈষম্য বিলোপে আমরাও সবাই সংঘবদ্ধভাবে অবদান রাখতে পারি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত ৫০ বছর। এই অর্ধশত বছরে অনেক প্রচেষ্টার ফল দেশের এগিয়ে যাওয়া। এর মাঝেও হয়েছে ১৯৮৮ সালের বন্যা, ১৯৯১ সালে ঘূণিঝড়সহ, পরে সিডোর-আইলা বার বার দেশের উন্নয়নকে করেছে ব্যাহত। তবুও সরকারের উন্নয়ন কৌশলপত্রের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পথে দেখা দিল মহামারি করোনাভাইরাসের তান্ডব। এতে এত মানুষের প্রাণহানিসহ জীবনের অনিশ্চয়তার সাথে চলতে হচ্ছে আমাদের। ২০৪১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সরকারের যে পথ চলা তা-ও থমকে দাঁড়াল। এই পরিস্থিতিতে যদি তৃণমূলের মানুষ মুখ থুবড়ে পড়ে, তবে কোনোভাবেই লক্ষিত সময়ে মধ্যম আয়ের ও পর্যায়ক্রমে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারব না আমরা।
দেশের আপামর জনগণের পক্ষে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ বিষয়টি ভাবতে পারেন। একটি বিষয় নিশ্চিত হয়ে ভাবতে হবে যে সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করে, উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় তাদের সম্পৃক্ত না করে দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এতে উন্নয়নের পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে বৈষম্য ও বিভেদ।
তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানের যে প্রত্যয় বর্তমান সরকার ধারণ করে, তার প্রতিফলন বাস্তবে ঘটাতে হবে। মানব-সম্পদ উন্নয়ন ব্যতিরেখে দেশ উন্নয়ন হতে পারে না।
এই প্রবন্ধের সাথে যারা সংহতি প্রকাশ করেন তারা হলেন:
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে সরকার সমবায়ের কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিলে প্রান্তিক ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি সত্যিকার উপকারভোগী হবে। ব্যাংক বা সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩ থেকে ৫ শতাংশ সুদের মাধ্যমে অর্থ যোগান দেওয়া, সমবায় সমিতির আয়ের উপর সরকারের নির্ধারিত ১৫ শতাংশ ট্যাক্স রহিত করা এবং হত দরিদ্র সমবায়ীদের সরকারী খাদ্য কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা।
তিনি আরো বলেন, দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠির মধ্যে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক শ্রেণির মানুষই সমবায় সমিতির সদস্য। সুতরাং সমবায় এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে সরকারের করোনাকালীন সংকটের কারণে প্রদেয় প্রণোদনা প্রান্তিক মানুষের কাছে স্বচ্ছ ও সহজে পৌঁছে যাবে। তাই সমবায় সেক্টরই হতে পারে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস্ (কাক্কো) ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, করোনার আঘাতে অন্যান্য সেক্টরের মতো সমবায় সেক্টরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা সমবায় সমিতি করে তারা সবাই মধ্যবিত্ত ও নিম্ন বিত্ত।করোনা সংকটের কারণে অনেকেরই চাকরী চলে গেছে সেই সাথে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। যারা সমবায়ের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছে, তারা ঋণ ফেরৎ দিতে পারবে না। তাছাড়া সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ও কমে গেছে, সুতরাং যাদের ঋণ প্রয়োজন তাদেরও ঋণ দেওয়া যাবে না। তাই সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে প্রণোদনা প্রদান করছে, সমবায়কেও সেই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজন। আমরা ইতিমধ্যে সমবায় অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করেছি যেন তারা ব্যবস্থ্যা নেয়, সেই সাথে আমাদের কিছু নির্দেশনা দেয়। সমবায় অধিদপ্তরকে এই বিষয়ে কাজ করতে হবে। সরকার করোনা সংকট ও পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় দারিদ্র বিমোচনের জন্য যে প্রণোদনার পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু সমবায় সেক্টরকে প্রণোদনা থেকে বাদ দিলে অনেকাংশেই তা সফল হবে না। কারণ দেশের প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ মানুষ সমবায়ের সাথে জড়িত এবং অর্থণীতি প্রবৃদ্ধির ২ শতাংশ অবদান সমবায় সমিতির। তাই সমবায় একটি উত্তম মাধ্যম হতে পারে দারিদ্র বিমোচনে।
তিনি আরো বলেন, সমবায় অধিদপ্তরে প্রেরিত আবেদনের মধ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সমবায় সমিতির আয়ের ১৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি। কেননা সমবায় হলো প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নের জন্য। সরকার এই ট্যাক্স প্রত্যাহার করলে সমবায়ীরা উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী কৃর্তক ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকেও আমাদের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে বিভিন্ন সমবায় সমিতির চাহিদানুসারে সরকার কর্তৃক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায়ী পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘মূলত যারা ব্যাংকিন করার সুযোগ পায় না, সেই সকল প্রান্তিক ও মধ্যবিত্তরাই সমবায়ের সদস্য। সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু করোনার এই মহামারীর সময়ে সেই সকল প্রান্তিক মানুষগুলো আয় উপার্জন করতে পারছে না, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই সরকার সমবায়েও প্রণোদনার ব্যবস্থা না করলে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচানো যাবে না এবং সদস্যরাও জীবন ধারণে সংকটে পড়বে। ইতিমধ্যে সরকার কৃষিখাতে ও সমাজকল্যাণে ১৫শ কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন, সমবায় অধিদপ্তর সেখান থেকে সহযোগিতার আবেদন করেছে। মাননীয় সরকার যেন সমবায় সেক্টরকেও সেই সুবিধার আওতায় নিয়ে আসে সেই আশা করবো। সেই সাথে সদস্যদেরও ধৈর্য ধরতে হবে এই সংকট মোকাবেলা করার জন্য।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সমবায়ের মাধ্যমে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাই তিনি সমবায়কে আর্থিক মালিকানার দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে সমবায়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসবেন।
‘ঢাকা ক্রেডিট সবচেয়ে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ সমবায়ী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এর বিভিন্ন প্রকল্প, ঋণ দেওয়া-নেওয়া ও লেন-দেন বন্ধ, তাই সমিতির আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে অন্যান্য সমিতির কার্যক্রমও বন্ধ, তাই সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার যেন স্বপ্ল সময়ের জন্য হলেও অফিসের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দেন। দিনে ২ ঘন্টার জন্য হলেও লেন-দেন করার সুযোগ পেলে সদস্য ও সমিতি উপকৃত হবে’ বলেন বাবু মার্কুজ।
এ ছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, সমিতি এমনিতেই চলছে না। ১৫ শতাংশ ট্যাক্স সমবায় সমিতির জন্য বোঝা ছিল, তার উপর বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে, তাই সরকারের পক্ষ থেকে যেন সেই ট্যাক্স রহিত করা হয় সেই আবেদন করছি। পাশাপাশি আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা সমবায় নিয়ে কাজ করছি, আমাদেরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু বর্তমানে সবাই বাস্তবিক একসাথে হওয়া সম্ভব নয়, তাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হলেও সমবায় অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও লিডিং সমবায় সমিতির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা সভা করা উচিত। কীভাবে সমিতিগুলো টিকে থাকবে, সদস্যদের প্রতি করোনা সংকট ও পরবর্তী সময়ের সংকট কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তার নির্দেশনা, অর্থনৈতিক মন্দার মোকাবেলা করার নির্দেশনাসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা জরুরী। সেই সাথে আমাদের উচিত কিছু পরিকল্পনা করার। স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে আমাদের এখনই এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
সম্প্রীতি সমিতির সিইও এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, অন্যান্য সেক্টরের মতো সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রণোদনা পাওয়ার যৌক্তিক দাবি রাখে। সমবায়ে বেশির ভাগই নি¤œ আয়ের মানুষ। বেশির ভাগেরই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে ঋণ ফেরৎ পাওয়া ও অন্যকে ঋণ প্রদান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পাশাপাশি সমবায়ের মাধ্যমে পরিবারের যে উন্নয়ন শুরু হয়েছিল, তা-ও সম্ভব নয়, যদি না সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকে। সেই জন্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় সমবায়কে রাখা উচিত। সেই সাথে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সমবায়ের আয়ের ১৫ শতাংশ ট্যাক্সের বিষয়টা মরার উপর খরার ঘায়ের মতো। তাই অর্থমন্ত্রী ও সরকার যেন সেই ট্যাক্সও প্রত্যাহার করে নেন সেই আবেদন করছি।
বারিধারা মহিলা সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান সেরা সমবায়ী ও বেগম রোকেয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত গোলাপ বানু বলেন, ‘সমবায় সেক্টর অনেক বড়। কোটিরও বেশি মানুষ সমবায়ের সাথে জড়িত। আমরা যারা সমবায় করি, তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের নিয়েও ভাবতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমাদের জন্যও সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন।’
‘আয় না থাকলে সমবায়ীদের কীভাবে সহযোগিতা দিতে পারবো? সেই সাথে সরকারকে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাই সরকার যেন সেই ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেনদ, তিনি যেন আমাদের সমবায়ীদের জন্যও ভাবেন’ বলেন গোলাপ বানু।
লেখাটি প্রস্তুত করতে সাহায্য করেছেন রবীন ভাবুক