ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং উপার্জনহীন সদস্যদের মূল্যছাড়ে পণ্য বিতরণ করেছে ঢাকা ক্রেডিট

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং উপার্জনহীন সদস্যদের মূল্যছাড়ে পণ্য বিতরণ করেছে ঢাকা ক্রেডিট

0
1472

সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা

অদৃশ্য এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে গোটা বিশ্ব। সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে থমকে গেছে মানুষের আয় রোজগার। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও উপার্জনহীন সদস্যদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ক্রেডিট।
৮ মে থেকে ঢাকা ক্রেডিটের কর্ম এলাকাভুক্ত চারটি জেলার বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়েছে মূল্যছাড়ে পণ্য। মূল্যছাড়ে পণ্যের প্যাকেজে ছিলো ২০ কেজি চাল, ৩ কেজি ডাল, ১০ কেজি আটা, ৩ লিটার তেল, ৫ কেজি পিঁয়াজ, ৭ কেজি আলু, ২ কেজি লবণ, ২ কেজি চিনি, ২০০ গ্রাম চা-পাতা, ২৫০ এমএল সরিষার তেল, গাঁয়ে মাখার সবান, কাপড় কাচার সাবান, ভীমবার ও মসলা। এই প্যাকেটের মোট মূল্য ৩৪০০ টাকা যার ৫০% মূল্যছাড়ে অর্থাৎ ১৭০০ টাকায় ঢাকা ক্রেডিট থেকে প্রদান করা হয়।
২১ এপ্রিল মূল্যছাড়ের পণ্যের জন্য ঢাকা ক্রেডিটের ফেসবুক পেজ, ওয়েব সাইট ও নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নির্ধারিত হটলাইনে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও উপার্জনহীনসদস্য মূল্যছাড়ে পণ্যের জন্য নাম লিপিবদ্ধ করেন। পরে তা যাচাই বাছাই করে প্রায় ১৪০০ জন ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যকে এই পণ্য দেওয়া হয়। মূল্যছাড়ে পণ্য পেয়ে খুশি হয়েছেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও উপার্জনহীন সদস্যরা।


নদ্দার বিনিতা রিছিল কাজ করতেন গুলশানে এক হাউজে। করোনার কারণে তার দুই মাস ধরে চাকরি নাই। তিনি ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমি খুব অভাবের মধ্যে আছি। ঢাকা ক্রেডিট হতে মূল্যছাড়ে পণ্য পেয়ে আমার অনেক উপকার হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ধন্যবাদ দেই দুর্যোগের সময় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়াার জন্য।’
মিরপুরের সুদর্শন হালদারের গল্পটাও কিছুটা একই রকম। তাঁর চাকরি যায়নি কিন্তু তিনি যে ক্লিনিকে কাজ করতেন সেটি বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই মাস ধরে। এই দুই মাস তিনি বেতন পাননি। তিনি দুঃখের সাথে বলেন, ‘স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চারজনের পরিবারে খুব সমস্যার মধ্যে আছি। কোথাও থেকে কোনো সাহায্য পাইনি।’
হালদার আরো বলেন, ‘এই খারাপ সময়ে যখনই শুনেছি ঢাকা ক্রেডিট মূল্যছাড়ে পণ্য দিবে, তখনই আমি নাম নিবন্ধন করি। আজ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পেলাম। এগুলো আমার পরিবারে এক মাস খাবারের সংস্থান হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিটের এই মূল্যছাড়ের পণ্য দেওয়ার উদ্যোগ আমার জন্য আশীর্বাদের হয়েছে।’


একই এলাকার ইস্টের রাণী দাশ চাকরি করেন একটি স্কুলে। কিন্তু সেখান থেকে তিনি বেতন পাচ্ছেন না। তিনিও জানান, তিনি মূল্যছাড়ে যে পণ্য পেয়েছেন, তা দিয়ে এক মাস নিশ্চিন্তে চলতে পারবেন। এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানান ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাদের।
জাকারিয়াস ক্রুশ চাকরি করেন সাভারে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। কিন্তু সেটি বন্ধ। তার দুই মেয়ে থাকতেন হোস্টেলে। করোনার মহামারি দেখা দেওয়ার পর মেয়েদের বাসায় ফেরত আনতে হয়। স্ত্রী ও চার সদস্যের পরিবার নিয়ে জাকারিয়াস পড়েন আর্থিক কষ্টে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট থেকে মূল্যছাড়ে পণ্য পেয়ে অন্তত মাস খানেক নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো। এরপর হোটেল না খুললে কী হবে জানি না।’
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ডিসিনিউজকে বলেন, বিশ্বব্যাপি করোনার মহামারিতে অনেক মানুষ চাকরিহারা হচ্ছেন। বাংলাদেশও এই সমস্যার বাইরে না। এদেশে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকে বেতন পাচ্ছেন না। যারা ছোট ছোট ব্যবসায়ী, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। যারা ক্ষুদ্র যানবাহন চালাতেন, তাদেরও সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ। এই জন্য আমরা ঢাকা ক্রেডিট বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা হত দরিদ্র, যাদের এই মুহূর্তে কোনো কাজ নাই, তাদেরকে মূল্যছাড়ে কিছু পণ্য দেওয়ার।’


মি. প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘এখানে আমরা মোট ৩৪০০ টাকার পণ্য দিচ্ছি, যার মধ্যে ঢাকা ক্রেডিট থেকে আমরা ১৭০০ ঢাকা মূল্যছাড় দিচ্ছি। ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য দিবেন ১৭০০ টাকা। মোট ৫৫ কেজি পণ্য রয়েছে। সদস্যগণ এই ১৭০০ টাকা আগামী এক বছরের মধ্যে বিনা সুদে কিস্তিতে পরিশোধ করবেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের উদ্যোগের মধ্য দিয়ে অনেক সদস্য উপকৃত হবেন।
প্রেসিডেন্ট কস্তা আরো বলেন, মূল্যছাড়ের পণ্যের অর্থায়ন করা হয়েছে বিভিন্ন খাতের খরচ কমিয়ে। এ ছাড়া ঢাকা ক্রেডিটের কর্মীগণ তাঁদের একদিনের বেতন প্রদান করেছেন এবং ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণ তাদের এক মাসের সম্মানী ছাড় দিয়েছেন।


ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া জানান, করোনার মহামারিতে ঢাকা ক্রেডিটের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে মূল্যছাড়ের পণ্যের জন্য ঘোষণা দিলে সাড়ে চার হাজার সদস্য হটলাইনে মূল্যছাড়ের পণ্যের জন্য নিবন্ধন করেন। নিবন্ধত নামগুলো যাচাই বাছাই করে, যারা উপার্জনহীন, খুবই দরিদ্র এমন ১৪০০ সদস্যকে মূল্যছাড়ে পণ্য দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সদস্যদের সাথে ছিলো। এই সমিতির ৪৩ হাজার সদস্যের মধ্যে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও ধনী সদস্য রয়েছেন। আমরা ঢাকা ক্রেডিটের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য করোনা কালে প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যেমন- দরিদ্র সদস্যদের জন্য মূল্যছাড়ে পণ্য এবং মধ্যবিত্তদের জন্য কমোডিটি ঋণ।’
মি. সেক্রেটারি বলেন, হটলাইনের মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র অনেকেই মূল্যছাড়ে পণ্যের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে সবাইকে মূল্যছাড়ে পণ্য দিতে পারি নাই। সেজন্য আমরা দুঃখিত। তবে যারা মধ্যবিত্ত তারা কমোডিটি ঋণ নিতে পারেন।
প্রসঙ্গত, করোনায় লকডাইনের ফলে মধ্যবিত্ত ও সাময়িকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত সদস্যদের আর্থিক সমস্যা কিছুটা নিরসন কল্পে সমিতির সদস্যদের সীমিত পর্যায়ে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় এবং অত্যাবশকীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য কমোডিটি ঋণ প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অফিস থেকে এই ঋণের জন্য ফরম দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ঋণ থাকা অবস্থায়ও এই ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা।

ছবির গ্যালারি:

[wp1s id=”12471″]