শিরোনাম :
করোনায় বেকারত্বের ঝুঁকিতে সমবায়ের ৯ লাখ শ্রমিক
রোকন মাহমুদ || কালের কন্ঠ
প্রণোদনার অর্থ চায় উদ্যোক্তারা
দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু না থাকায় সমবায় সমিতিগুলোর সঙ্গে জড়িত ৯ লক্ষাধিক শ্রমিক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এর ওপর তৈরি হয়েছে চাকরি হারানোর শঙ্কা। করোনার কারণে এ খাতে এক কোটি উদ্যোক্তা ক্ষতির মুখে পড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাভাবিক কার্যক্রমের অনুমতি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫ শতাংশ কর মওকুফের দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সমবায় সমিতিগুলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা স্কিমের আওতাভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
উদ্যোক্তারা বলছেন, সমবায় সমিতিগুলোর প্রতিবছর মুনাফা থেকে ৩ শতাংশ সমবায় উন্নয়ন তহবিলে জমা দিতে হয়। আর বার্ষিক নিরীক্ষা ফি হিসেবে জমা দিতে হয় মুনাফার ১০ শতাংশ। এই ১৩ শতাংশ প্রতিবছরেই সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। এর পরও ২০১৫ সালে সমবায় সমিতিগুলোর মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ১৩ শতাংশের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে গিয়ে সমবায় সমিতিগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এখন করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশ প্রায় দুই মাস যাবৎ সাধারণ ছুটি চলছে। এই ছুটির মধ্যে সমবায় সমিতিগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে এনজিওগুলো শর্ত সাপেক্ষে খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমবায় সমিতিগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি আদেশ দেওয়া হয়নি। এর ফলে সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের মধ্যে বিতরণকৃত ঋণ আদায়, ঋণ বিতরণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চরম আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে দেশের প্রায় ২৪ হাজার সমবায়ী প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোর শীর্ষ প্রতিষ্ঠান দ্য কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কালব) প্রেসিডেন্ট জোনাস ঢাকী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, বর্তমানে সদস্যরা কোনো সঞ্চয় করতে পারছেন না। বরং সঞ্চয়ের টাকা তুলে নিচ্ছেন। বিপরীতে সদস্যদের সঞ্চয় থেকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তা আদায় করা যাচ্ছে না। এতে তাঁরা তীব্র তারল্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন। পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য তিনি এনজিওদের মতো প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে মুনাফার আরোপিত ১৫ শতাংশ কর মওকুফের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
ঢাকা ক্রেডিটের চেয়ারম্যান পংকজ গিলবার্ট কস্তা জানিয়েছেন, সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোনো প্রণোদনা স্কিম দেওয়া হয়নি। অথচ সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় নিয়ে সদস্যদের মধ্যে কম সুদে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে এসব প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ২৪ হাজার সমবায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সঙ্গে এক কোটি সমবায়ী সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক। চলমান অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত সমবায়ীদের জন্য স্বল্প সুদে প্রণোদনা স্কিম ঘোষণার জন্য তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। এতে তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলো সদস্যদের ঋণের সুদ মওকুফের করতে পারবেন এবং নিজেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
সরকারের সাবেক সচিব ও সমবায় অধিদপ্তরের সাবেক নিবন্ধক মো. হুমায়ুন খালিদ জানিয়েছেন, দেশের সমবায়গুলো দেশের গরিব মানুষের বিকল্প ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। যারা ব্যাংকে যেতে পারে না, তারাই মূলত সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সঞ্চয় করে। কেউ বা এ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে স্বল্প পুঁজির ব্যবসা করে। আবার যথাসময়ে ফেরত দেয়। কিন্তু সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। অথচ দেশের সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রবক্তা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিল্কভিটার মতো কল্যাণময়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থেই ১৫ শতাংশ কর প্রত্যাহারসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখা উচিত।
ক্রেডিট ইউনিয়ন সম্প্রীতির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয় দেশের সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো। সাধারণ ছুটির মধ্যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এতে সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যক্রম সঞ্চয় গ্রহণ, ঋণ আদান-প্রদান বন্ধ রয়েছে। সঞ্চয় ও ঋণ আদান-প্রদান কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকলে সমবায় খাত মহাসংকটের মুখোমুখি হবে।
তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ ট্যাক্স মওকুফ করলে সরকারের বেশি ক্ষতি হবে না। বরং দেশের সমবায় সমিতিগুলোর ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমে যাবে। চাকরি হারানোর শঙ্কা থেকে মুক্ত থাকবেন ৯ লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। এতে দেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে সমবায় সমিতিগুলো।