ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা মূল্যবোধ স্বর্গারোহণ পর্ব উপলক্ষে উপদেশ

স্বর্গারোহণ পর্ব উপলক্ষে উপদেশ

0
823

কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি:

আজ প্রভু যিশুর স্বর্গারোহণের মহাপর্ব। একই দিনে কাথলিক মণ্ডলীতে ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্ব যোগাযোগ মাধ্যম দিবস পালন করা হয়। তাছাড়া এই খ্রিষ্টযাগে আমরা স্মরণ করি: পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক “প্রকৃতি ও পরিবেশ”- এর ওপর রচিত “লাউডাটো-সি”, “প্রভুর প্রশংসা হোক” নামক বিশ্বজনীন পত্রের ৫ম বার্ষিকী। এই উপদেশে এই তিনটি বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত কিছু ধ্যান রাখছি।

যিশুর পুনরুত্থানের চল্লিশ দিনের একটি কালের সমাপ্তিতে, বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে, আজ ৭ম রোববারে আমরা যিশুর স্বর্গারোহণ মহাপর্বটি উদযাপন করছি। পুনরুত্থানের পর এবং স্বর্গারোহণের পূর্বে চল্লিশ দিন ধরে পুনরুত্থিত প্রভু যিশু এই জগতে অদৃশ্যভাবে থেকেও তিনি তাঁর আপন শিষ্যদের মাঝে আবির্ভাব ক’রে শিষ্যদের দর্শন দিয়েছেন কয়েকবার। ভিন্নভিন্ন ভাবে তাঁর উপস্থিতি মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। স্বর্গারোহণের মূল অর্থ হলঃ যিনি স্বর্গ থেকে এই মর্তে অবরোহণ করেছিলেন, তিনি এই জগতে তাঁর কর্মসকল সম্পন্ন করে, যাতনাভোগ ও মৃত্যু বরণ করেছিলেন, এবং মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করে, তিনি স্বর্গে আরোহন করলেন। স্বর্গীয় পিতার কাছ থেকে তিনি এসেছিলেন, পিতার ইচ্ছা ও আদেশ অনুসারে তিনি জীবন যাপন করেছিলেন, আর স্বর্গীয় পিতা তাঁকে পুনরুত্থান করিয়ে, তাঁর স্বর্গীয় গৌরব ও মহিমায় ভূষিত করেছেন। স্বর্গে আরোহণ করে সেই মহিমায় যিশু অবস্থান করছেন পিতার দক্ষিণপার্শ্বে এবং রাজত্ব করছেন যুগ যুগ ধরে।

প্রিয়জনেরা, যিশু, পিতার কাছ থেকে এ জগতে নেমে এসেছিলেন, কিন্তু পিতাকে ত্যাগ করে নয়। ঠিক একই ভাবে যিশু এ জগত থেকে স্বর্গে আরোহণ করলেন, কিন্তু শিষ্যদের পরিত্যাগ ক’রে যান নি। তিনি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। শিষ্যদের জন্য পিতার কাছে প্রার্থনা ক’রে বলেছিলেন: “পিতা, যাদের তুমি আমার হাতে তুলে দিয়েছ, আমি চাই যেখানে আমি আছি, তারাও যেন আমার সঙ্গে সেখানেই থাকতে পারে। আমি চাই, তারা যেন আমার মহিমা উপলব্ধি করতে পারে। আমার সেই মহিমা, যা তুমি আমাকে দিয়েছ।” যোহন ১৭:২৪)

প্রিয়জনেরা, আমরাও এই জগতে থেকে যিশুর শিষ্য হয়ে তাঁর মহিমায় জীবন যাপন করি। স্বর্গারোহণ করে যিশু আমাদেরকে সেই মহিমা দিয়েছেন, আমাদের জীবনের লক্ষ্য তিনি স্থির করে রেখেছেন। সেই স্বর্গলোকের লক্ষ্যে আমরা ধাবিত। যিশু বলেছেন: “মাটি থেকে আমাকে যখন উঁচুতে তোলা হবে, তখন আমি সকলকেই আমার কাছে টেনে আনব।” (যোহন ১২:৩২)

প্রিয়জনেরা, স্বর্গারোহণ পর্বদিনে এবারে ৫৪তম বিশ্ব যোগাযোন দিবস পালন করছি। এই উপলক্ষে পোপ ফ্রান্সিস একটি বাণী দিয়েছেন। বাণীর মূল কথা হল: আমাদের জীবন একটা ইতিহাস। এই ইতিহাসে আছে অসংখ্য ঘটনা যা গল্প হয়ে প্রকাশ পায়। মানুষ নিজেই গল্পকার; সে গল্প সৃষ্টি করে, সে গল্প শোনে, এবয় সে গল্প শোনায়। গল্প শুনতে ও গল্প বলতে সবাই ভালবাসে। কিন্তু গল্প, সেতো শুধু গল্প নয়। গল্পের মধ্যে আছে বাণী যা বার্তা হয়ে মানুষের কাছে আসে। সব গল্পই আবার উত্তম গল্প নয়। তবে গল্প সর্বদাই বার্তা নিয়ে আসে কোনটা করণীয় আবার কোন্টা বর্জনীয় সেই বার্তা।

পবিত্র শাস্ত্র হচ্ছে মানুষের সেরা গল্প; ঈশ্বর ও মানুষকে নিয়ে রচিত সে গল্প। আমরা যারা খ্রিষ্টবিশ্বাসী, যিশুকে নিয়ে ও যিশুকে ঘিরে আমাদের জীবনযাত্রায় গল্প রচিত হয়। মা মারীয়ার মতো অন্তরে সবকিছু গেঁথে রেখে আমরাও যিশুর গল্প হয়ে উঠি, যিশুর গল্প শ্রবণ করি, অপরকে যিশুর গল্প শোনাই, আর এভাবে যিশুর গল্প রচনা করি। আজকের বিশ্বযোগাযোগ দিবসে, পুণ্যপিতা পোপ মহোদয়ের বাণী অনুসারে, নিজের জীবন ও অন্যের জীবন, যীশুর গল্প হয়ে প্রকাশিত হোক।

আজ “লাউডাটো সি সপ্তাহ”-এর শেষদিন। পাঁচ বছর পূর্বে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস “প্রকৃতি ও পরিবেশ”-এর উপর একটি বিশ্বজনীন পত্র লিখেছিলেন। পত্রটির নাম “লাউডাটো সি” অর্থাৎ “প্রভুর প্রশংসা হোক”। এই পত্রটি বিশ্বে একটি যুগান্তকারী ঘটনা রূপে সকল মানুষের মধ্যে বহুল স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই বার্ষিকী উদ্্যাপন উপলক্ষে পোপ মহোদয়, অতি জরুরীভাবে পৃথিবীটাকে রক্ষা করার জন্য বাস্তব কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। পৃথিবীর আর্তনাদ ও গরিবদের কান্না শ্রবণ করার জন্য, আবার তিনি আকুল আবেদন করেছেন। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য “সর্বজনের বসতবাড়ি” এই পৃথিবীটা কীভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে রেখে যাব, তা জরুরী ভাবে ভাবতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রত্যেকের কাছে পোপ মহোদয় আবেদন জানাচ্ছেন।

প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রেম আমাদের খ্রিষ্টবিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা ও যত্ন নেওয়া সম্বন্ধে আমরা আরও সচেতন হব, শিক্ষা গ্রহণ করব এবং সৃষ্টির জন্য এবং সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব। বাস্তব পদক্ষেপরূপে আমরা (১) ঘরে ও বাইরে সর্বস্থানে ও সবকিছুতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব। (২) জিনিসপত্র ও দ্রব্যসামগ্রীর অপব্যবহার ও অপচয় বর্জন করব; (৩) সকল প্রকার দূষণ Ñ শব্দ, বায়ূ, জল ও মৃত্তিকা  ইত্যাদির দূষণ থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করব; (৪) প্রয়োজন-অতিরিক্ত খরচপাতি পরিহার করব; (৫) প্রকৃতিজাত, বিশুদ্ধ ও সুষম খাদ্যাহার ও পানীয় পান করব। সর্বাঙ্গিণ মানবিক উন্নয়নে আমরা সবাই কর্তব্যনিষ্ঠ ও কর্মব্রতী হব। এভাবেই প্রভু যিশুর স্বর্গারোহণের মহিমা প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে প্রকাশিত হবে।

পরিশেষে আপনাদের সবাইকে প্রভু যিশুর স্বর্গারোহন পর্বের শুভেচ্ছা জানাই। আগামী রোববার পবিত্র আত্মার অবতরণ পর্ব। অনুরোধ করি গোটা সপ্তাহ ধরে পবিত্র আত্মার নিকট নবেনা করি এবং তাঁর আগমন প্রতীক্ষায়, মা মারীয়ার সাথে একাত্ম হয়ে প্রার্থনায় রত থাকি।