ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা মূল্যবোধ যিশু বলেন: “ঐশরাজ্য এখন খুব কাছেই।”

যিশু বলেন: “ঐশরাজ্য এখন খুব কাছেই।”

0
525

সাধারণকালের চতুর্দশ রবিবারের উপদেশ (১৮ জুলাই, ২০২০)
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও. সিএসসি

খ্রিষ্টেতে প্রিয়জনেরা, যিশু যখন এই জগতে আগমন ক’রে তাঁর প্রচারকাজ শুরু করেছিলেন, তখন তিনি প্রথমেই এই কথা বলেছিলেন: ‘ঐশ রাজ্য এখন খুব কাছেই! তোমরা মন ফেরাও; তোমরা মঙ্গলসমাচারে বিশ্বাস কর।’ (মার্ক ১:১৫)। এই কথা দিয়ে যিশু বলেছেন যে, তিনি এসেছেন এ জগতে ঈশ্বরের রাজ্য প্রচার করতে; আর এই রাজ্যের আগমন ঘটেছে এই জগতে যিশুর আসার মধ্য দিয়ে।

তাই তিনি আহ্বান করছেন “মন ফেরাও”, তার মানে হচ্ছে জীবন পাল্টিয়ে যিশুকে গ্রহণ কর; আর এই যিশুই হচ্ছে ঐশরাজ্যের প্রকাশ বা চিহ্ন। ঐশ রাজ্য বিষয়ে যা কিছু যিশু প্রচার করেছেন তা হচ্ছে ঐশরাজ্যের বৈশিষ্ট্য, মূল্যবোধ বা অন্য কথায়, মঙ্গলসমাচার। তাই যিশু বলছেন যে, যাকিছু তিনি শিক্ষা দিচ্ছেন তা হচ্ছে মঙ্গলসমাচার। অতএব এই মঙ্গলসমাচার গ্রহণ করো, মঙ্গলসমাচারে বিশ্বাস করো।

আরেকটা বিষয় খুবই স্পষ্টভাবে জানা উচিত যে, ঐশরাজ্য কোন মানুষের রাজ্য নয়, বরং ঈশ্বরের রাজ্য: কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠির জন্য নয় বরং সকল মানবজাতির জন্য। তবে যেহেতু যিশু ঐশরাজ্যের আগমনের চিহ্ন, সেহেতু যারা যিশুকে বিশ্বাস করে, অর্থাৎ খ্রিষ্টমন্ডলী, সেই মন্ডলী হচ্ছে ঐশরাজের চিহ্ন ও নিদর্শন; অর্থাৎ একদিকে মঙ্গলসমাচার হয়ে খ্রিষ্টমন্ডলী তার জীবনযাপন করে; অন্যদিকে যিশুর ন্যায় খ্রিষ্টবিশ্বাসীরাও সবার কাছে মঙ্গলসমাচার প্রচার করে, ঐশরাজ্যে প্রবেশ করার জন্য আহ্বান জানায়।

যিশুর মঙ্গলসমাচার ঐশরাজ্যের মর্মসত্য প্রকাশ করে। মূলতঃ ও সামগ্রিকভাবে ত্রিবিধ প্রেম হচ্ছে ঐশরাজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য বা মূল্যবোধঃ (১) ঈশ্বর-প্রেম; (২) মানব-প্রেম; (৩) প্রকৃতি-প্রেম। এই তিনটি প্রেমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে অন্যসকল ঐশ্বরিক, মানবিক ও মঙ্গলসমাচারীয় মূল্যবোধ।

(১) ঈশ্বর-প্রেমঃ এর মধ্যে আছে মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা এবং ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভালবাসা। ঈশ্বর-প্রেম প্রকাশ পায়: ঐশবাণী, প্রার্থনা ও উপবাস; মিলন, একাত্মতা ও বিশ্বস্ততা; উপাসনা, কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা; দয়া, ক্ষমা ও সুস্থতা, আত্মিক মুক্তি ও পরিত্রাণ, ইত্যাদির মাধ্যমে।

(২) মানব-প্রেম অথবা প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমঃ মানুষের প্রতি, বিশেষভাবে দীনজনদের প্রতি মানুষের প্রেম বা ভালবাসা প্রকাশ পায়, যেমন: মানবিকতা, ন্যায্যতা ও ভ্রাতৃত্ব; মিলন, একাত্মতা ও শান্তি; ক্ষমা, দয়া ও সাহায্য-সহযোগিতা; মমতা, বিন¤্রতা ও সেবা; ইত্যাদিও মধ্যে।

(৩) প্রকৃতি প্রেমঃ জগৎ ও প্রকৃতি হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টি, তিনি সৃষ্টিকর্তার এই সত্য স্বীকার করা; জগৎসৃষ্টি, প্রকৃতি ও পরিবেশকে ভালবাসার অর্থ হচ্ছেঃ ঈশ্বরের বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে সৃষ্টিকে ভালবাসা, তার যত্ন নেওয়া ও তার সুরক্ষা করা; সকল প্রকার অপব্যবহার, অপচয় ও দূষণ থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করা, ইত্যাদি।

প্রিয়জনেরা, ঐশ্বরাজ্যের স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে যিশু যে শিক্ষা-মাধ্যম ব্যবহার করেছেন তা হচ্ছে: তাঁর জীবন-দৃষ্টান্ত ও উপমা-কাহিনী বা গল্প। গত রবিবারে এবং আজকের মঙ্গলসমাচারে দেখছি যে, ঐশরাজ্যের মর্মকথা প্রকাশ করতে গিয়ে যিশু কয়েকটি উপমা-কাহিনী ব্যবহার করেছেন, যেমন:

(ক) বীজবপকের উপমা: গত রোববারে এটি ধ্যান করেছি। ঐশরাজ্যের মালিক যিনি, তিনি বীজবপকের মতো বীজ বপন করছেন। ঐশরাজ্য গ্রহণ করার জন্য চার ধরনের মাটি হতে পারে: পাথুরে মাটি, কাঁটাঝোপে আক্রান্ত মাটি, গভীরতা-শূণ্য মাটি এবং ভালো মাটি। ঐশরাজ্য গ্রহণ করার জন্য যেন আমরা সবাই ভালো মাটি হয়ে উঠি ও প্রচুর ফলে ফলবান হই।

(খ) গম ও শ্যামাঘাসের উপমা: ঐশরাজ্য এমন যেখানে ঈশ্বর নিজেই বীজবপক এবং যিনি ভাল বীজ বপন করেন। তবে এটাও স্মরণ রাখতে হবে যে, এই জগতে আছে শত্রæ বা শয়তান, যে মন্দ বীজ বপন করে, যেখান থেকে শ্যামাঘাস উৎপন্ন হয়। ভাল ও মন্দের অবস্থান, ভালো মানুষ ও মন্দ মানুষের উপস্থিতি আমাদের জগতে ও সমাজে আছে। তাছাড়া, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে দুই ধরনের শক্তি আছে, একটি শুভ শক্তি যা ভাল উদ্্পাদন করে আরেকটি মন্দ শক্তি যা মন্দতা সৃষ্টি করে। গমের মতো ভাল গাছ হয়ে আমরা আছি, আবার শ্যামাঘাসের মতো মন্দ গাছেও পরিণত হই। জীবনভর এই দুয়ের মিলনেই জীবন চলবে। এখনই তাদেরকে আলাদা করা যাবে না, জীবনের শেষে শুধু পৃথক করা হবে।

(গ) শর্ষে-বীজের উপমা: ঐশরাজ্য শর্ষে-বীজের মতো ছোট ও ক্ষুদ্র। কিন্তু পরবর্তীতে তা বিরাট বৃক্ষে পরিণত হয়। প্রথমতঃ ঐশরাজ্য শুরুতে ছোট, ক্ষুদ্র, সীমিত; ঐশরাজ্যের নিদর্শন খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা ও মন্ডলীও অল্পসংখ্যক, সংখ্যালঘু, আকারে ও পরিমাণে তারা প্রদীপ ও লবণের মতো ক্ষুদ্র; ক্ষুদ্র হলেও কিন্তু বড়োকে, বৃহৎকে, বৃহত্তর সম্প্রদায়কে প্রভাবান্বিত করতে পারে, আলো ছড়াতে পারে, স্বাদ দিতে পারে; বড়ো, প্রসারিত ও শক্তিশালী হতে পারে, চোখে পড়া ও নজর কেড়ে নেওয়ার মতো বিরাট হয়ে উঠতে পারে।

(ঘ) খামির উপমাঃ ঐশরাজ্য যেন খামির মতো। পরিমাণে অল্প হলেও রুটি বানানোর জন্য গোটা ময়দাকে গেঁজে তুলে। ঐশরাজ্য খামিরের মতো হয়ে জগত ও সমাজকে ঐশরাজ্যের বৈশিষ্ট্যে ও স্বরূপে গজিয়ে তুলে বৃদ্ধিসাধন করে।

মঙ্গলসমাচারে আরও অনেক দৃষ্টান্ত, ঘটনা ও উপমা আছে যার মাধ্যমে যিশু ঐশরাজ্যের মর্ম-রহস্য প্রকাশ করেছেন এবং সেইভাবে খ্রিষ্টবিশ্বাসে ব্যক্তিজীবন, সমষ্টিগত জীবন ও মন্ডলিক জীবন যাপন করতে যিশু শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রিয়জনেরা, পরিশেষে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। আপনারা জানেন যে, চট্টগ্রামের আর্চবিশপ মজেস কস্তা সিএসসি, বিগত ১৩ই জুলাই মৃত্যুবরণ করেন এবং চট্টগ্রামে ১৪ই জুলাই তাকে সমাহিত করা হয়। দীর্ঘ দেড় মাস ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। আপনারা সবাই অবিরত তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছেন, শেষের দিকে ঈশ্বরের কাছে তাঁর প্রাণ ফিরে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেছেন, এবং সংশ্লিষ্ট সকলে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তাঁকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু ঈশ্বর যেন সবার কাছে বলেছেন: “তোমাদের ইচ্ছা ও আমার ইচ্ছা এক নয়”। যদিও তাঁর চলে যাওয়াটা কতভাবে সবাইকে মর্মাহত করেছে, কতভাবে স্থানীয় মন্ডলীতে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এবং কতভাবে মন্ডলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে! এ সবকিছু জেনেই আমরা সবাই ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে নিয়েছি।

আজ বাংলাদেশের কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর পক্ষ হয়ে, আপনাদের সকল প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ জানাই, আপনাদের অসংখ্য শোকবার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তাঁর প্রতি যে ভক্তি-ভালবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান দিয়েছেন এবং স্থানীয় মন্ডলীর প্রতি সমবেদনা ও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং প্রয়াত আর্চবিশপের আত্মার কল্যাণ কামনা করেছেন ও ভবিষ্যতে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁর জন্য সত্যিই আমরা কৃতজ্ঞ। ঈশ্বর তাঁকে অনন্তজীবন দান করুন।।