শিরোনাম :
গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হলো ডক্টর ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসিকে (ছবি)
ব্রাদার উজ্জ্বল প্লাডিস পেরেরা, সিএসসি || ঢাকা
আধ্যাত্মিকতায় বলীয়ান ও নিবেদিত সন্ন্যাসব্রতী শ্রদ্ধেয় ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি হাজারো মানুষকে কাঁদিয়ে চিরতরে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি গত ২৩ মে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ সকাল ১১:১৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
তিনি গত প্রায় নয় মাস যাবৎ অগ্নাশয় ও যকৃত ক্যান্সার (Carcinoma of Head of Pancreas with Liver Metastasis), উচ্চ রক্তচাপ (HTN), প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি (BEP) এবং কিডনিতে সিস্ট (Renal Cysts) ইত্যাদি শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এবং ভারতের দিল্লী এ্যাপেলো হাসপাতালে ও বাংলাদেশে দক্ষিণ ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুর প্রায় তিন সপ্তাহ পূর্বে তিনি বেশ অসুস্থ বোধ করছিলেন ফলে তাকে দ্রুত আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ক্রমশ তার অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে এবং পরিশেষে সবার মনের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জয় করে তিনি চলে গেলেন পরপারে। তার চিরপ্রস্থানে গোটা পবিত্র ক্রুশ সংঘ তথা সমগ্র বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীতে নেমে এসেছে স্তব্ধতা ও শোকের ছায়া।
ভাতিকানের রাষ্ট্রদূতের শোক: প্রয়াত ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি’র আত্মার চিরশান্তি কামনা করে বিশেষ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী। তিনি পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিসের নামে এবং বাংলাদেশে ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পবিত্র ক্রুশ সংঘের সকল ফাদার, সিস্টার, ব্রাদার বিজয়ের পরিবার বর্গ এবং বিশেষ করে পবিত্র ক্রুশ সংঘের ব্রাদারদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন। ‘আমি তোমাকে মনোনীত করেছি আর নিযুক্তও করেছি যাতে তুমি ফলবান হও’ যীশুর এই কথাটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে ব্রাদার বিজয়ের জীবনে। তিনি আরো বলেন, ‘মঙ্গলবাণী প্রচারে, যুব গঠন কাজে, ব্রাদারদের আহ্বান বৃদ্ধিতে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানে ব্রাদার বিজয় অসাধারণ কাজ করে গেছেন। তার হৃদয় ছিল ভালবাসা পূর্ণ, সহযোগিতা পূর্ণ এবং যে কোন পর্যায়ের মানুষের জন্য সহজলভ্য। ব্রাদার বিজয় যখন বাংলাদেশে হলিক্রশ ব্রাদারদের প্রভিন্সিয়াল ছিলেন এবং বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রেলিজিয়াস (বিসিআর) এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন বিভিন্ন সময়ে তার সাথে আমার নানা বিষয়ে অনেক আলোচনা হতো। যখন আমি বাংলাদেশে ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নতুন এসেছি তখন তিনি আমার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে আমাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী উপদেশ দিতেন।’ আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী আরো বলেন, ‘একটি বিষয় না বললেই নয়; ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে পুণ্যপিতা পোপ ফ্রান্সিস যখন তার পালকীয় সফরে আসনে তখন তার প্রস্তুতিস্বরূপ প্রজেক্ট লেখা, সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরে যোগাযোগ এবং তাদের নানা কূটনীতিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর বুদ্ধিমত্তার সাথে দিয়েছেন। সেসাথে মাণ্ডলীক অন্যান্য কাজ বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ তৈরির কাজ নিপুণভাবে করেছেন। এক কথায় ব্রাদার বিজয় ছিলেন একজন জিনিয়াস এবং কাথলিক মণ্ডলীর জন্য সম্পদ স্বরূপ। তার আত্মার চির শান্তি কামনা করি।’
মহামান্য কার্ডিনালের শোক: প্রয়াত ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি’র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি, আর্চবিশপ, ঢাকা মহা-ধর্মপ্রদেশ। তিনি বলেন, ‘যীশুর স্বর্গারোহন পর্ব দিনে ব্রাদার বিজয় যীশুর সাথে স্বর্গে যাত্রা করলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্রাদার বিজয়ের জীবনটা যীশুকে নিয়ে, যীশুকে ঘিরে অনেক গল্পের সমাহারে এক বিরাট গল্প যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তিনি পরিবার থেকে পেয়েছেন খ্রিষ্টীয় গঠন। সন্ন্যাসব্রতী ব্রাদার হিসেবে মণ্ডলীতে ব্রাদারদের অবস্থান, সম্মান ও আহ্বান বৃদ্ধিতে দৃঢ়তার সাথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গেছেন এবং অনেক চ্যালেঞ্জও দিয়ে গেছেন। ব্রাদার বিজয় সাধু যোসেফ সংঘ প্রদেশের ভাইস প্রভিন্সিয়াল ও প্রভিন্সিয়াল হিসেবে, বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রেলেজিয়াস এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নানা কমিটির সদস্যা হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সন্ন্যাসব্রতী ধর্মসংঘগুলোকে সঠিক নির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমনকি ক্ষুদ্র ও নতুন ধর্মসংঘগুলোও তার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়নি। তাছাড়া শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছেন; গবেষক হিসেবে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন মণ্ডলীর কিছু মূল প্রকাশনা; শিক্ষাবিদ হিসেবে, বাংলাদেশ কাথলিক শিক্ষাবোর্ডের সেক্রেটারি হিসেবে এবং বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ প্রিন্সিপাল, ম্যানেজিং কমিটির ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করে শিক্ষাক্ষেত্রে রেখেছেন অসামান্য অবদান। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী, কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রতি তার ছিলো বিশেষ চিন্তা ও অগ্রাধিকার।’ মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি আরো বলেন, ‘তিনি একজন সুদক্ষ প্রশাসক ও পালক হিসেবে তিনি মানুষকে পরিচালনা ও বিভিন্ন শিক্ষা দিয়েছেন। বাংলাদেশ কাথলিক মণ্ডলীর পালক হিসেবে আমার প্রতি দেখিয়েছেন যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং গভীর ভালবাসা। ব্রাদার বিজয় ছিলেন সাধু যোসেফের আদর্শে একজন সেবক যিনি বিভিন্ন আসক্তি পূণর্বাসন কেন্দ্রে (বারাকা, আপন), বিভিন্ন কারিগরি বা ট্রেড স্কুলে এবং কারিতাসের মধ্যে দিয়ে সামজের অবহেলিত মানুষদের ভালবেসে সেবা করে গেছেন। ঈশ্বর ব্রাদার বিজয়কে চির শান্তিতে পুরস্কৃত করুক খ্রিষ্ট যীশুর আপন মহিমায়।’
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্মৃতিচারণ: প্রয়াত ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি’র শেষকৃত্যানুষ্টানে অনেক বিশিষ্ট্য ব্যক্তিবর্গ ও তার কাছের মানুষেরা তার বিষয়ে অনেক স্মৃতিচারণ করেন।
* বট্মলী হোম অর্ফানেঞ্জ ট্রেড স্কুলের প্রিন্সিপাল ব্রাদার যোয়াকিম রতন গমেজ, সিএসসি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় যদিও মাত্র ৬২ বছর বেঁচেছেন কিন্তু কাজ করে গেছেন ১০০ বছরের। তিনি তৃণমূল থেকে শুরুকরে একদম উচু পযার্য়ের মানুষের সাথে সমানভাবে মিশতে পারতেন।’
* সিস্টার পলিন গমেজ, সিএসসি বলেন, ‘কর্মজীবনে ব্রাদার বিজয়ের সাথে অনেক পথ একসাথে অতিক্রম করেছি। তিনি ছিলেন, আধ্যাত্মিক, মানসিক, বৌদ্ধিক, আবেগিক ও শারীরিক দিকে দিয়ে বলীয়ান ও সমন্বিত একজন ব্যক্তি এবং অনেক প্রতিভাবান।’
* হলিক্রশ স্কুলের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক মি. এলেবার্ট পিনারু বলেন, ‘প্রয়াত ব্রাদার বিজয় ছিলেন আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ছিলেন খুব ভাল, দায়িত্ববান, স্বতন্ত্র, সহমর্মী ও একজন আকাঙ্খিত ব্যক্তি। অনেক বড় মাপের মানুষ হয়েও তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন।’
* ব্রাদার বিজয়ের বড় ভাই মি. অতুল প্যাট্রিক রড্রিকস ব্রাদার বিজয়ের বাল্যকালের অনেক কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সে ছিল একটু আলাদা ও তীক্ষ্ন বুদ্ধি সম্পন্ন। যেকোন কাজ খুব সহজে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারতেন।’
* সেন্ট গ্রেগরীজ্ স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গমেজ, সিএসসি বলেন, ব্রাদার বিজয় ছিলেন পবিত্র ক্রুশ সন্ন্যাস সংঘ তথা বাংলাদেশ মণ্ডলীর জন্য বিরাট আশীর্বাদ ও অমূল্যবান সম্পদ স্বরূপ। তার মতো এমন বহু প্রতিভাবান ব্রাদারকে হারিয়ে আমরা অনেক শোকাহত।’
* বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রেলিজিয়াস (বিসিআর) এর প্রাক্তন সেক্রেটারি সিস্টার তাপসী গমেজ, সিএসসি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয়ের সাথে আমি ৪ বছর কাজ করেছি। বিসিআর সেন্টার ব্রাদার বিজয়ের হাতেই গড়া। বিসিআর এর যে কোন সংকটকালে বা প্রয়োজনে ব্রাদার বিজয় পাশে থাকতেন।’
* হলিক্রশ কলেজের প্রিন্সিপাল সিস্টার শিখা লেটেশিয়া গমেজ, সিএসসি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় মায়ের দিক থেকে সম্পর্কে আমার মামা হন। তিনি ছিলেন আমার অভিভাবক। যেকোন সময়ে যেকোন প্রয়োজনে ব্রাদারের কাছে সাহায্য চাইলে তিনি সবর্দা হাত বাড়িয়ে দিতেন।’ সিস্টার শিখা ব্রাদার বিজয়ের উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠিতে ব্রাদার বিজয়ের অনেক গুণের কথা তুলে ধরেন আর বলেন, ‘ব্রাদার বিজয়কে কোন বিশেষণেই বিষেশায়িত করা সম্ভাব নয়।’
* যীশু হৃদয় সংঘ প্রদেশের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জেমস্ ক্রুশ, সিএসসি, শ্রদ্ধেয় ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি’র এর মৃত্যুতে হলিক্রশ ফাদারদের পক্ষ থেকে সকল হলিক্রশ ব্রাদারদের ও ব্রাদার বিজয়ের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘হলিক্রশ ফাদারদের প্রভিন্সিয়াল হিসেবে ব্রাদার বিজয়ের সাথে আমার বিভিন্ন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ছিলেন খুব ভাল মানুষ, আদর্শ ব্রতধারী, ভাল খ্রিস্টবিশ্বাসী, আপনগুণে ও আপনজ্ঞানে গৌরবে মহিয়ান এবং অতুলনীয়।’
* সিস্টার অব দ্যা হলিক্রশ এশিয়ার এরিয়া কোর্ডিনেটর সিস্টার ভায়োলেট রড্রিকস, সিএসসি হলিক্রশ সিস্টারদের পক্ষ থেকে হলিক্রশ ব্রাদারদের ও ব্রাদার বিজয়ের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় ছিলেন সবার অতিপ্রিয়, শ্রদ্ধেয় ও নম্রভাষী শিক্ষক, গুরু ও অনন্য অভিভাবক। আমরা তার ভালবাসার স্পর্শ পেয়েছি। তিনি তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা অভিজ্ঞতা, ধারণা, সুপরামর্শ আমাদের সাথে সহভাগিতা করেছেন। আমরা তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।’
* কারিতাস বাংলাদেশ -এর নির্বাহী পরিচালক মি. অতুল ফ্রান্সিস সরকার কারিতাস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সকল হলিক্রশ ব্রাদারদের ও ব্রাদার বিজয়ের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা, বিনীত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় বেশ দীর্ঘ সময় কারিতাসের সাথে সম্পৃক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন। তার মধ্যে নিরপেক্ষতা, সত্যনিষ্ঠতা ও ন্যায়পরায়নতা।’
* বাংলাদেশ কনফারেন্স অব রেলিজিয়াস (বিসিআর) এর সেক্রেটারি সিস্টার এডলিন পিরিচ, সিআইসি বলেন, ‘ব্রাদার বিজয়ের ব্যক্তিত্ব ছিল খুবই আকর্ষনীয়। বিসিআর এর প্রতি তার ভালবাসা ছিল প্রগাঢ়। ব্রাদার বিজয়কে আর বিসিআর সেন্টারকে আদালা করে দেখা যায় না।’ বিসিআর এর পক্ষ থেকে তিনি পবিত্র ক্রুশ সংঘের প্রতি ও ব্রাদার বিজয়ের শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রভাষক ডক্টর ফাদার তপন ডি’কস্তা বলেন, ব্রাদার বিজয়ের সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন কমিটিতে আমরা একসাথে অনেক কাজ করেছি। ব্রাদার বিজয় স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশে হলিক্রশ ব্রাদারদেরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।’
* প্রাক্তন গ্রেগরীয়ান মি. পলাশ বায়োজিত ব্রাদার বিজয় অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক দেশে বিদেশে তার পাশে থেকে নিরলস সেবা ও শ্রম দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানিনা কীভাবে ব্রাদার বিজয়ের সাথে এতো সম্পৃক্ত হয়ে গেলাম। মনে হয় ব্রাদার বিজয় বলেই তা করতে পেরেছি। আমাদের পরিবারের সাথে ব্রাদার বিজয়ের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। যেকোন সমস্যায় আমরা ব্রাদার বিজয়ের কাছে পরামর্শ চাইতাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্রাদার বিজয়ের সুস্থতার জন্য হলিক্রশ ব্রাদারগণ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কোনভাবে অবহেলা করেন নি। তবে সৃষ্টিকর্তা তার পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ করছেন।’
ধন্যবাদ জ্ঞাপন: সাধু যোসেফের ভ্রাতৃ-সমাজের প্রভিন্সিয়াল ব্রাদার সুবল লরেন্স রোজারিও, সিএসসি তার সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত মহামান্য কার্ডিনাল, সকল যাজক, ব্রাদার, সিস্টার, আত্মীয় পরিজনদের অসংখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশেষ করে যারা ব্রাদার বিজয়ের খুব পাশে থেকে নিরসল চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে গেছেন, নিরন্তন প্রার্থনা করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। অতপর, ব্রাদার বিজয়ের মহাপ্রয়াণে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশের বিশপগণ ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ধর্মসংঘের প্রধানগণ যে শোকবাণী প্রেরণ করেছেন তার কয়েটি তিনি সংক্ষিপ্তারে পাঠ করেন। ব্রাদার সুবল বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় ঈশ্বরের কাছ থেকে যে দেহ-মনের মন্দির পেয়েছিলেন তা তিনি পবিত্র রেখেছেন। এতো বড় মাপের ব্যক্তি হয়েও তিনি খুব সাধারণ ও দরিদ্রতার জীবন যাপন করেছেন, তার মধ্যে কোন অহংকার, ঈর্ষা বা দাম্ভিকতা ছিল না, বড় পদের জন্য মোহ ছিল না, তিনি কারো কোন পরচর্চা বা হেয় করেননি, অলসতা করেননি, সুবিধাবাদী বা আরামপ্রিয় ছিলেন না, তিনি কাউকে বিচার করেননি ও প্রতিশোধ পরায়ন ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন বই প্রেমী, কঠোর পরিশ্রমি ও পবিত্র একজন মানুষ।’ ব্রাদার সুবল আরো বলেন, ‘ব্রাদার বিজয় ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান যার কোন পরিসীমা নেই। তিনি লবণের মতো সবার সাথে মিশে গিয়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসেন। আমার হলিক্রশ ব্রাদারগণ তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি, হাত তুলে অভিবাদন জানাই। ঈশ্বর তার আত্মাকে চিরশান্তি দান করুন।’
প্রয়াত ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি মানব সেবায় পরিপূর্ণভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন সুদক্ষ প্রশাসক, দূরদর্শী নেতা, চিন্তাশীল লেখক, অনুবাদক, বই প্রেমী, জ্ঞানের সাধক, গবেষক, উত্তম শিক্ষক, স্পষ্টভাষী, সৃজনশীল, অত্যন্ত মেধাবী, কঠোর পরিশ্রমী, প্রত্যুৎপন্নমতি, সংস্কৃতিমনা, ক্রীড়ানুরাগী এবং বন্ধু-বৎসল একজন ধর্মপ্রাণ সন্ন্যাসব্রতী ব্রাদার। তিনি তার প্রশাসনিক দক্ষতা, সৃজনশীল শক্তি, প্রগতিশীল চিন্তা, গভীর জ্ঞান, অক্লান্ত পরিশ্রম ও সঠিক পথনির্দেশনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে খ্রিস্টান সমাজে, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে, পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায়ে তথা বিভিন্ন ধর্মসংঘে রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। তার নামের সার্থকতা তিনি পেয়েছেন তার কাজের মধ্যে দিয়েই। তার অনন্তযাত্রা বাংলাদেশ খ্রিস্টান সম্প্রদায় তথা গোটা জাতির জন্য যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়।
ফটো গ্যালারি:
[wp1s id=”12563″]
সমাধি: অবশেষে, ২৪ মে ২০২০ খ্রিস্টাব্দে দুপুর ১:৩০ মিনিটে দক্ষিণ ঢাকার ওয়ারী কবরস্থানে প্রয়াত ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি এর মরদেহ সমাহিত করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি। তার বেদনাবিধুর প্রয়াণে হলিক্রশ ব্রাদারগণ তথা গোটা পবিত্র ক্রুশ সংঘ গভীরভাবে শোকাহত। করুণাময় ঈশ্বর শ্রদ্ধেয় ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি কে অনন্ত শান্তি দান করুন।
প্রয়াত ডক্টর ব্রাদার হ্যারোল্ড বিজয় রড্রিকস্, সিএসসি’র সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত
জন্ম: ৭ জুলাই, ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ (নাগরী ধর্মপল্লী)
মৃত্যু: ২৩ মে, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ
পিতা: (স্বর্গীয়) নাইট ভিনসেন্ট রড্রিকস্
মাতা: এমিলিয়া রোজারিও
ভাই-বোন: ৬ ভাই, ৫ বোন
লেখাপড়া জীবন:
এস.এস.সি. ১৯৭৪ – সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়, নাগরী
এইচ.এস.সি. ১৯৭৬ – নটর ডেম কলেজ, ঢাকা
বি.এস.সি. ১৯৮০ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
বি.এড. ১৯৮৪ – শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, ঢাকা
ধর্মতত্ত্ব প্রশিক্ষণ ১৯৮৩ – ন্যাশনাল মেজর সেমিনারী, বনানী, ঢাকা
এম.এস.এ. ২০০৫ – নটর ডেম ইউনিভারসিটি, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র
পি.এইচ.ডি. ২০০৯ – ইউনিভারসিটি অব ইনকার্নেট ওয়ার্ড, টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র
সন্নাসব্রতী জীবন:
পবিত্র ক্রুশ কিশোরালয়ে প্রবেশ: ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ
নব্যাশ্রমে প্রবশে: ১৭ জানুয়ারি, ১৯৭৭
প্রথম ব্রতগ্রহণ: ২০ জানুুয়ারি, ১৯৭৮
আজীবন ব্রতগ্রহণ: ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৪
ব্রতীয় জীবনে রজত জয়ন্তী পালন: ২০০৩
কর্মময় জীবন:
সাধু যোসেফের কারিগরি বিদ্যালয়, নারিন্দ, ঢাকা (১৯৮৩ – ১৯৯৪)
ভাইস প্রভিন্সিয়াল, সাধু যোসেফ সংঘ প্রদেশ, বাংলাদেশ (১৯৯৪ – ১৯৯৮)
এক্টিং হেডমাস্টার, সেন্ট গ্রেগরীজ্ হাই স্কুল, ঢাকা (১৯৯৫)
প্রভিন্সিয়াল, সাধু যোসেফ সংঘ প্রদেশ, বাংলাদেশ (১৯৯৮ – ২০০৩ ও ২০১২ – ২০১৮)
মেম্বার, কনগ্রিগেশনাল ফাইন্যান্স কমিটি, রোম, ইতালি (১৯৯৮ – ২০০৪)
চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং কমিটি, সেন্ট গ্রেগরীজ্ হাই স্কুল, ঢাকা (২০০১ – ২০০৪ ও ২০১০ – ২০১৬)
প্রিন্সিপাল, সাধু যোসেফের কারিগরি বিদ্যালয়, নারিন্দা, ঢাকা (২০০৩ – ২০০৪ ও ২০১৮ – আমৃত্যু)
জেনারেল কাউন্সিল মেম্বার: কনগ্রিগেশন অব হলিক্রশ, রোম, ইতালি (২০০৪ – ২০১০)
ভাইস প্রিন্সিপাল, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা (২০১০)
প্রিন্সিপাল, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা (২০১১ – ২০১২)
চেয়ারম্যান, গভর্নিং বডি, সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা (২০১২ – আমৃতু)
মেম্বার, গভর্নিং বডি, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা (২০১৮ – আমৃতু)
প্রিন্সিপাল, ডন বস্কো কলেজ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ (২০১৯ – আমৃত্যু)
ডিরেক্টর, (BARACA) Bangladesh Rehabilitation and Assistance Center for Addicts (১৯৯৪ – ২০০৪)
চেয়ারম্যান, (BARACA) Bangladesh Rehabilitation and Assistance Center for Addicts (২০১০ – আমৃত্যু)
চেয়ারম্যান, (APON) Addiction Rehabilitation Residence (২০১৯ – আমৃত্যু)
প্রেসিডেন্ট, Bangladesh Conference of Religious (BCR) (৫ বছর)
চ্যাপ্লেইন, Young Christian Workers’ Movement (YCW), বাংলাদেশ
সেক্রেটারি জেনারেল, গভর্নিং বডি, কারিতাস বাংলাদেশ (২০১০ – ২০১৯)
সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ কাথলিক শিক্ষা বোর্ড ট্রাস্ট, সিবিসিবি (২০১১ – ২০১৬)