শিরোনাম :
জনপ্রিয় খ্রিষ্টান গারো নারী ইউটিউবারের গল্প
সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা
নেত্রকোনার বিরিশিরির মেয়ে নীল নন্দিতা রিছিল। তাঁর বেড়ে উঠা ও এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা বিরিশিরিতেই। ২০১৩ সনে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন ইডেন কলেজে।
কলেজ জীবন্ েতাঁর ফটোগ্রাফি ভালো লাগতো। সেই সময় একদিন তিনি আচিক ভাষায় (গারো ভাষায়) ইউটিউবে কনটেন্ট সার্চ দিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের গারোদের গারো ভাষায় তৈরি কোনো কনটেন্ট পাওয়া গেল না। তখন তিনি আবিষ্কার করলেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের গারোদের আচিক ভাষায় অনেক কনটেন্ট ইউটিউবে রয়েছে। অবশেষে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন বিডি গারো প্রোডাকশন নামে একটি চ্যানেল খুলবেন।
২০১৮ সনের ১৩ সেপ্টেম্বরে তিনি এই ইউটিউব চ্যানেল খুলেন। দুই বছরের কম সময়ে তাঁর চ্যানেলের সাবসক্রাইবার হয়েছে ৫২ হাজারের বেশি। তাঁর চ্যানেলের ৯০ ভাগ দর্শক ভারতের মেঘালয়ের গারো সম্প্রদায়ের মানুষ।
সম্প্রতি তিনি ডিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম, আমাদের বাংলাদেশে গারোদের গারো ভাষায় কোনো ইউটিউব চ্যানেল নাই, তাই আমি একটা চ্যানেল খুলবো। সেখানে গারো ভাষায় কনটেন্ট দিবো।’ নীল তার বান্ধবীদের সাথে কথা বলে তাঁর নিজের ইচ্ছার কথা জানান। বান্ধবীরাও তাঁকে উৎসাহ দিলেন।
তিনি শুরু থেকেই গারো ভাষায় শর্ট ফ্লিম, মিউজিক ভিডিও দেওয়া শুরু করেন তার এই চ্যানেলে। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাঁর তৈরি করা মিউজিক ভিডিও ও ব্লগ ভিডিওগুলোর ভিউ (দর্শন) বেশি হয়। ভারতের গারো ছাড়াও বাংলাদেশের গারো সম্প্রদায়ের মানুষ তার ভিডিও উপভোগ করেন।
তাঁর মতে, ভারতের গারোরা গারো ইউটিউবারদের অনেক সমর্থন করে থাকেন। তাঁরাও নীলকে সমর্থন করেন। ভিডিওর কমেন্টে দর্শকরা আরো নতুন ভিডিও তৈরি কারর জন্য অনুরোধ জানান।
নীল জানান, তাঁরা যেহেতু ভারতে থাকে, তাঁরা বাংলাদেশের গারোদের জীবন-যাত্রা সম্পর্কে জানতে চান। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের গারোদের অনেকের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক খোঁজে পাওয়া যায়। ভারতের গারোরা অনুরোধ করেন, বাংলাদেশে রেখে যাওয়া গারোদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করা যায় কিনা। তাঁরা গারো অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা দেখতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমার ভিডিও চ্যানেলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু গারোদের অবস্থাসহ তাঁদের জীবন-যাপনের অবস্থা তুলে ধরা হচ্ছে। আমার ভিডিওর মাধ্যমে ভারতের গারোরাও বুঝতে পারছে এদেশের গারোরা তাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চর্চা করছে।’
নীলকে নারী ইউটিউবার হিসেবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমি মোবাইল দিয়ে ভিডিও এডিটিং করি। মেয়ে হিসেবে এই সব খুটিনাটি প্রথম শেখা একটু কঠিন ছিল। তবে সেটা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখার মাধ্যমে অতিক্রম করেছি।
পোশাকের কারণে প্রশ্ন শুনতে হয় নীলকে। ইউটিউবের কমেন্টে অনেকে বলেন, আপনি সেলোয়ার কামিজ পরে ভিডিওতে আসতে পারেন না? নীলের উত্তর: ‘আমি পোশাক দেখানোর জন্য ভিডিওতে আসি না। আমি চাই আমার গারো সম্প্রদায়ের সার্বিক অবস্থাকে ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরতে।’
যাঁরা নতুন ইউটিউবার হতে চান তাঁদের প্রতি নীলের পরামর্শ, ইউটিউবে শর্টকাট করে সাবসক্রাইব লাভ করার অনেক উপায় আছে। কিন্তু নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে সাবসক্রাইবার লাভ করার অন্য রকম আনন্দ রয়েছে। সততা, পরিশ্রম দিয়ে কাজ করলে একদিন দেরিতে হলেও সাফল্য আসবেই। আর সেজন্য কাজ করার কোনো বিকল্প নাই। ইউটিউবার এমন একটা প্লাটফরম যে আপনি বলতে পারবেন না যে আপনার এই ভিডিওটা বেশি ভিউ হবে বা ভাইরাল হবে। ইউটিউবের প্রতি প্যাশন থাকতে হবে।
ইউটিউব চ্যানেল থেকে তিনি আয়ও করছেন।
শেষে গারো ভাষাভাষীদের প্রতি নীলের অনুরোধ, ‘যারা ইউটিউবার হতে চায় তাদেরকে সমর্থন দিতে হবে’।
নীল নন্দিতা রিছিলের সাক্ষাৎকারের অডিও শুনুন: