শিরোনাম :
রাজশাহীর ফাদার পৌল ডি’ রোজারিও আর নেই
ফাদার পৌল ডি’ রোজারিও ১৩ জুলাই রাত ৮.৫০ মিনিটে রাজশাহী বিশপ ভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বেশ কিছু দিন অসুস্থ থাকার পর গতকাল ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন শ্রদ্ধেয় ফাদার পৌল ডি’ রোজারিও (জয় গুরু)।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ৩ নভেম্বর, মঠবাড়ি মিশনের বাঁশবাড়ি গ্রামের “তালটিহির বড়বাড়ি ” নামক এক সম্ভ্রন্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। যখন তার বয়স পাঁচ বছর তখন তার পিতামাতা রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের অর্ন্তগত বোর্ণী ধর্মপল্লীর প্রিয়ভাগ গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।
বোর্ণীর সেন্ট মেরীস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন এবং পরে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে দিনাজপুর সেন্ট যোসেফ মাইনর সেমিনারিতে প্রবেশ করেন। মাইনর সেমিনারিতে থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে ডাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন।
নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে আইএসসি এবং ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ডাকা কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। মেজর সেমিনারিয়ান হিসেবে এক বছর ম্যাথিস হাউজে এবং পরে বনানীতে যাজকত্ব লাভের অধ্যায়ন শেষ করেন।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে ৩ জানুয়ারি নিজ ধর্মপল্লী বোর্ণীতে যাজকপদে অভিষিক্ত হন। ১৯৯২-১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আতেনিও দি ম্যানিলা ইউনিভাসিটি থেকে ম্যাজিষ্ট্রাতুম আর্তিউম মাস্টারস ডিগ্রি লাভ করেন। ৩ জানুয়ারি ২০০৭
খ্রিষ্টাব্দে তিনি যাজকত্বের ২৫ বছরের জুবিলী পালন করেন। বর্তমানে যাজকত্বের ৩৮ বছর প্লাস চলমান রয়েছে।
তিনি তার দীর্ঘ ৩৮ বছরের যাজকীয় জীবনে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে বহুবিধ সেবা দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফাদার জয়গুরু ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে সহকারি পাল-পুরোহিত ও পাল-পুরোহিত হিসেবে এবং সেই সাথে দুই বছর বনপাড়া সাধু ৬ষ্ঠ পল সেমিনারিতে অধ্যাত্মিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও কাটেখ্রিস্টদের পরিচালক, যুব পরিচালক, আর.ডি.পি.এফ. সভাপতি ও ক্ষুদ্র খ্রিষ্ট সমাজ গঠন বিষয়ক আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি অসুস্থ্য হবার আগ পর্যন্ত বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে সহকারি পাল-পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এ সমস্ত পালকীয় সেবা দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তিনি তার সুনিপুন হাতে রচনা করেছের মোট ৮টি বই এবং বহু ধরনের গান, কবিতা ও গল্প।
প্রভুর অন্তিম ভোজের স্মরণে… / আমি নিজেকে উজাড় করে তাকে ভালবাসবো… / জীবন যদি দিলে প্রভু শক্তি দাও গো তবে…. / তব আশিস দানে ধন্য কর…/ধরণীর বুকে বাজিলরে আজ মধুর রাগ-রাগিনী…/ মধুর এ-ই জয়ন্তী প্রেমের এ-ই জয়ন্তী… / পূজার বেদীতে দাও গো তুলে এ জীবন তনু মন প্রাণ, এ রকম আরও অনেক গানের রচয়িতা ফাঃ পৌল ডি রোজারিও ।
বিশপ জেভার্স রোজারিও বলেন, “আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই যে, তিনি আমাদেরকে ফাদার জয়গুরুর মত একজন দক্ষ ফাদারকে আমাদের রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের জন্য দান করেছিলেন। তিনি যে আমাদের ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধরণের পালকীয় সেবা কাজ করেছেন, তার সে সমস্ত কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই”।
ফাদার সুব্রত কস্তা বলেন, “একটি আদরের ডাক, কত ভালোবাসা মাখা- ‘ভাইটি’! আর কেউ ডাকবে না। বয়সের ব্যবধান অনেক। কিন্তু বাধা, সংকোচ নেই প্রাণ খুলে কথা বলার, আবদার জানানো কিংবা হাস্য-রহস্য করায়। শ্রদ্ধা-সম্মান, স্নেহ-ভালোবাসায় ভর করে বয়সের ব্যবধানকে তোয়াক্কা না করে যে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, সেটা অভিজ্ঞতা করেছি জয়গুরু’র সাথে। ‘ভাইটি’ ডাক মিস করবো জয়গুরু। ভালো থাকবেন পরম শান্তিতে থাকবেন”।
তার এই অকাল মৃত্যুতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সকল খ্রিষ্টভক্ত আজ শোকাহত। – ফাদার নিখিল গমেজ।
সূত্র: আরভিএ বাংলা