ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা তন্ময় ডিব্রা (ভিডিয়ো ও ছবি)

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা তন্ময় ডিব্রা (ভিডিয়ো ও ছবি)

0
3010

|| সুমন কোড়াইয়া ||

মাশরুম এমন একটি সবজি যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন খাবার। এতে প্রোটিন, মিনারেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এতে এমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মেদ-ভুঁড়ির সৃষ্টি প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তাই সকলেরই মাশরুমকে খাবারের টেবিলে স্থান দেওয়া উচিত- কথাগুলো বলছিলেন গারো খ্রিষ্টান যুবক তন্ময় ডিব্রা (চাল্লাং)।

নিকি’স মাশরুম নামে তাঁর একটি ফেসবুক পেইজ রয়েছে। তিনি মূলত এই ফেসবুক দিয়েই তার ব্যবসার পণ্য বাজারজাত করে থাকেন। তিনি এর চাষ ও ব্যবসা নিজ জন্মস্থান ময়মনসিংহ থেকে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১৮-সালের দিকে বিদেশি একটি বেসরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চাকরি করতাম। চাকরির পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। সেই থেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিতে থাকি। এক সময় মাশরুম সম্পর্কে অনলাইনে প্রাথমিক ধারণা পাই। দেখলাম, এই পণ্যটা দেশে এতটা পরিচিত না। তবে সম্ভাবনাময় একটা পেশা হতে পারে মাশরুম চাষ। পরবর্তীতে ‘জাতীয় মাশরু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র, সাভার’ থেকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছি।’

প্রথমদিকে, তিনি সাভার থেকেই মাশরুম নিয়ে এসে ঢাকায় সরবরাহ শুরু করেন। পরবর্তীতে সাভার থেকে বীজ নিয়ে নিজ এলাকা ময়মনসিংহে তাঁর বাবার সহযোগিতায় মাশরুম উৎপাদন শুরু করেন। মূলত: এভাবেই তাঁর প্রতিষ্ঠান নিকি’স মাশরুমের যাত্রা শুরু হয়।

আপনি কী ধরনের মাশরুম উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমি ওয়েস্টার মাশরুম উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকি। কারণ, এই জাতের মাশরুম খুব সহজেই স্বল্প জায়গায় চাষ করা যায়। মাশরুম চাষের জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। তাই চাইলে যে-কেউ এই জাতের মাশরুম উৎপাদন করতে পারে।’

এই পেশার প্রতিযোগী এবং সম্ভাবনার বিষয়ে এক সন্তানের পিতা তন্ময় বলেন, অন্যান্য ব্যবসার মতো এই ব্যাবসাতেও প্রতিযোগিতা রয়েছে। তবে, তুলনামূলক কম। সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে এই ব্যবসায় অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যদি, মাশরুম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে অবগত করা যায় তাহলে এ ব্যবসা করে দ্রুত লাভবান হওয়াসহ জীবনমানকে উন্নত করা যায়।

তিনি জানান যে, বর্তমানে তিনি নিকি’স মাশরুম নামে একটি ফেইসবুক পেইজ পরিচালনা করছেন। মূলত এই পেইজ থেকে মাশরুমের অর্ডারগুলো পেয়ে থাকেন এবং সেই অর্ডারকৃত মাশরুম হোম ডেলিভারি করে থাকেন।

তিনি জানান, অন্যান্য ব্যবসার মতো মাশরুম ব্যবসায়ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাশরুমের ব্যবসায় সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। আমি মনে করি, এই ব্যবসার সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, মাশরুম সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার বিষয়টি। কারণ, আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষেরই মাশরুম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। আমরা মাশরুমকে ছোটবেলা থেকে ব্যাঙের ছাতা হিসেবেই জেনে এসেছি। যার কারণে অধিকাংশ মানুষের মাশরুম খাওয়ার কোনো আগ্রহ থাকে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাশরুম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আমাদের দেশের মানুষ মাশরুম খাওয়ার প্রতি আগ্রহী হবে। যা মাশরুম ব্যবসা এবং দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

যারা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের জন্য তাঁর পরামর্শ হলো, যেকোনো কাজ শুরু করতে গেলে আগ্রহ এবং ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। মাশরুম উৎপাদন এবং বিক্রয় এমন একটি পেশা যেখানে আগ্রহ এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে খুবই কম বিনিয়োগে এই কাজ শুরু করা সম্ভব। তবে, যিনি এই পেশার সাথে যুক্ত হতে চান, তাকে অবশ্যই মাশরুম উৎপাদন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করতে হবে, যা সাভারে জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে।

তাঁর ব্যবসার মার্কেটিং বিষয়ে বলেন যে, প্রথমদিকে তিনি তাঁর পরিচিত মানুষদের জানিয়ে প্রচার শুরু করেন। পরবর্তীতে নিকি’স মাশরুম নামে ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলে মার্কেটিং করতে থাকেন এবং সেটা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এই ডিজিটাল মার্কেটিং তাঁর ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সাহায্য করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মাশরুম চাষের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এ সকল প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলা এবং মানুষের হাতে স্বাস্থ্যকর মাশরুম তুলে দেওয়াই তাঁর লক্ষ্য।

ময়মনসিংহ ক্যাথলিক ধর্মপ্রদেশের ধাইরপাড়া ধর্মপল্লীর সন্তান তন্ময় মাশরুমের দাম সম্পর্কে বলেন, গরমকালে প্রতি কেজি মাশরুম তিনি ৪৪০ টাকা এবং শীতকালে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে থাকেন। শীতকালে মূল্য কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, শীতকালে মূলত মাশরুম বেশি উৎপাদন হয়। তাই মূল্যও কম থাকে। বাসা বাড়ি ছাড়াও তিনি বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তাঁর মাশরুম সরবরাহ করে থাকেন।

তিনি শেষে পাঠকসমাজকে বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য প্রার্থনা করবেন, আমার পাশে থাকবেন। সেই সাথে ধন্যবাদ দিতে চাই ডিসিনিউজকে, নিকি’স মাশরুমকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।’

সুলভ মূল্যে সতেজ মাশরুম পেতে যোগাযোগ করুন: ০১৬২২৩৪৬৭৭২, ০১৬৭৬৯১৪৭৬৭

 নিকিস মাশরুমের ফেসবুক পেজ: https://www.facebook.com/NickysMushroom/

[wp1s id=”13202″]

তরুণ উদ্যোক্তাদের আরো গল্প পড়ুন

এফ-কমার্সে সফল লীলা রোজারিও

চাকরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী

ঘরে বসে অনলাইনে আয় করছেন খ্রীষ্টিনা