ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলছে মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি (ভিডিয়ো)

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলছে মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি (ভিডিয়ো)

0
2346

|| সুমন কোড়াইয়া ও রাফায়েল পালমা, গাজীপুর ||
অবিরাম নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে চলেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি সমবায় সমিতি। সমিতিটির নাম মঠবাড়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড (কেএসবি)। সমিতিটির যাত্রা শুরু ২০১২ সনের জুন মাসে। সেই হিসেবে সমিতির বয়স নয় বছর।
এই অল্প সময়ের ব্যবধানেই সমিতির সদস্য সংখ্যা ৫৩৩ জন, কর্মী সংখ্যা ৪৯ জন এবং সম্পদ-পরিসম্পদের পরিমান ১১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে সমিতি এর নামে ৯৫ বিঘা জমি ক্রয় করেছে। এই সমিতিকে বাংলাদেশের প্রগতিশীল সমিতিরগুলোর মধ্যে লক্ষ্যণীয় ও দৃশ্যমান উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে মনে করেন অনেকেই।
এত দ্রুত কোনো সমবায় সমিতি এত বেশি সংখ্যক সদস্য বৃদ্ধিসহ কর্মীর কর্মসংস্থান অনেকটাই অবাক করার মতো। সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন রিচার্ড গমেজ ডিসিনিউজকে বলেন, ‘দেশে বেকারত্ব বড়ো একটি সমস্য। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সেই সমস্যা সমাধান করা যায়। তাই আমারা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। ভবিষ্যতে আমাদের ইচ্ছা আছে ২০০ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার।’
চেয়ারম্যান জানান যে, কেএসবি মূলত একটি ব্যবসায়ভিত্তিক সমিতি। এই সমিতির প্রথম প্রকল্প হলো সমবায় বাজার। এখানে রয়েছে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের নানা উপাদানের মধ্যে খাদ্য,বস্ত্র, তৈজসপত্র, আসবাবপত্রসহ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য।
এই সমিতির রয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স। ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও এই এ্যাম্বুলেন্স আশীর্বাদ ও উদ্বোধন করেন। সমিতির সদস্য ও সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের সময় এই বাহনটি ব্যবহার করতে পারেন।
এই সমিতির আরেকটি পরিবহন প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের গাড়িগুলো সমিতির নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করাসহ সদস্যদের কাছেও ভাড়া দেওয়া হয় বলে জানান সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন।


সমিতির আরো একটি নতুন প্রকল্প হচ্ছে কেএসবি বেকারী। ইতিমধ্যে চারজন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই আধুনিক বেকারীতে। মোট ৫৩ ধরনের ভোগ্যপণ্য তৈরি কার হয় এখানে। বেকারীর সেফ অরুন ফ্রান্সিস ক্রুশ ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমরা বেকারীতে স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য তৈরি করে থাকি। এখানকার পণ্য কেএসবির সদস্য ও স্থানীয় মানুষ তৃপ্তিসহকারে উপভোগ করে থাকে। আমরা মান ঠিক রেখে পণ্য তৈরি করে থাকি। ভবিষ্যতে আমরা ১০০-এর অধিক পণ্য তৈরি করবো।’
জানা গেছে, ইতিমধ্যে এই বেকারীর পণ্য ভোক্তাদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। ঢাকা শহরের ক্রেতারাও প্রচুর পরিমানে এই পণ্য কিনে থাকেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কেএসবির চেয়ারম্যান সুরেন বলেন, সমিতির ভবিষ্যতে দুটি রিসোর্ট তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। একটি তৈরি করা হবে ঢাকার পূর্বাঞ্চলের খুব কাছে। সেখানে ২৫ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। আরেকটি রিসোর্ট তৈরি করা হবে মঠবাড়ী গ্রামে। এখানে ১২ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। মঠবাড়ীর রিসোর্টটি হবে ব্যতিক্রমী। এখানে গ্রামের মধ্যে রিসোর্ট তৈরি করা হবে। শহরের মানুষ অল্প সময়ের ব্যবধানে এখানে এসে গ্রামের ছোঁয়া পাবেন বলে জানান সুরেন।
এ ছাড়া কেএসবি কালচারাল একাডেমি, ইংলিশ কোর্স, ডায়রি ফার্ম, নার্সারি প্রকল্প চালু করার কথা রয়েছে বলে চানান সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন।
এ ছাড়া এই সমিতির রয়েছে গেস্ট হাউজ প্রকল্প, বিউটি পার্লার, জীম ও ফিটনেস প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমিতির সম্পদ যেমন ব্যবহার করা যাচ্ছে, করা যাচ্ছে কর্মসংস্থানও।
কেএসবি সমবায় বাজারের কর্মী প্রভাতি রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমি এই সমিতির সদস্য। বাই-সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করি। নারী ক্ষমতায়নে এই সমিতি জোর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এই সমিতির উদ্যোক্তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
কেএসবি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি করোনা মহামারিতে আর্থমানবতার জন্য অবদান রেখে চলেছে। করোনাকালে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এই সমিতির পক্ষে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। সমিতির চেয়ারম্যান সুরেন জানান, এই মহামারিতে বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করা ছাড়াও তারা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একটি বড় অংকের টাকা দিয়েছেন। তাঁদের সমিতি থেকে করোনাকালে ৭ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার সহযোগিতা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান সুরন বলেন, দেশের অনেক সমবায় সমিতি এখনো শুধু ঋণ দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ভিন্নমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, নারী ক্ষমতায়নে দেশের সমিতিগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তাহলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের সম্পদ ব্যবহার করা যাবে। উন্নত হবে মানুষের রাষ্ট্র ও সমাজজীবন। অন্য দেশের সাহয্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।