শিরোনাম :
করোনায় নরসুন্দর দেবল গাইনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
|| সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা ||
দেবল গাইন। বাড়ি খুলনার পাইকগাছার বড়দল ধর্মপল্লী। জীবনের ভাগ্য বদলাতে চুল কাটার কাজ শিখে ঢাকা এসেছিলেন তিনি। ঢাকার উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের রানাবোলায় তাঁর ছোট্ট চুল কাটার সেলুনটির নাম ‘পাপড়ী হেয়ারড্রেসার’।
প্রতিদিন অগণতি গ্রহক আসতেন তার দোকানটিতে। ভিড় সামাল দিতে তাঁকে আরো দুইজন নরসুন্দরকে চাকরি দিতে হয়েছে। যে আয় করতেন, তাতে বেশ ভালই চলছিলো দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঢাকা শহরে তাদের চারজনের নগর জীবন।
মার্চের শেষে কী এক অদৃশ্য অনুজীব তার চলার গতি থামিয়ে দিল। সরকারের সাধারণ ছুটিতে এক টানা প্রায় চারমাস বন্ধ থাকলো তাঁর সেলুন। চুল কেটেই চলতো তাঁর সংসারের চাকা। পরিবারের খাবার, শিশশুদের লেখাপড়া, ওষুধ, ঘরভাড়া সবকিছু। কিন্তু করোনা লকডাউন থাকার সময় সেলুন খুলতে পারেননি দেবল। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি পাইকগাছায় চলে যেতে হয়েছিল।
তিনি তার আয়ের পথের সন্ধান করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি শুনতে পেলেন ঢাকা ক্রেডিট থেকে কমোডিটি ঋণ দেওয়া হচ্ছে। তাই তিনি আবার ঢাকা ফিরলেন। ঢাকা এসেই কমোডিটি ঋণের জন্য আবেদন করেন, পেয়েও গেলেন। সেই টাকায় বকেয়া ঘরভাড়া ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করলেন। দোকান ভাড়া দিতে না পারলে হয়তো তার দোকানই হাত ছাড়া হয়ে যেতো। তার ব্যবসাটাই হয়তো বন্ধ হয়ে যেতো এই সংকটে।
তিনি ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডিসিনিউজকে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট থেকে আমি কমোডিটি ঋণ নিয়ে ঘরভাড়া ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করতে পেরেছি। ঋণের অংশ হিসেবে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার চাল, ডাল, তেল, আটা, চিনি, লবণ ইত্যাদি ঢাকা ক্রেডিটের সমবায় বাজার থেকেই পেয়েছি। এতে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। সময়োপযোগী এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সমিতির কর্মকর্তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
দেবল আরো বলেন, করোনার সময় তাঁর কোনো আয় ছিলো না। বরং ছিলো দুুশ্চিন্তা। ঢাকা ক্রেডিট কমোডিটি ঋণ দিয়ে তাঁকে পথ চলার শক্তি যুগিয়েছে, এই সংকটকালেও ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে।
সরেজমিনে দেবল গাইনের পাপড়ী হেয়ারড্রেসার ঘুরে দেখা গেল, চুল কাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। তবে করোনা আসার আগে যেমন চুল কাটার গ্রাহক ছিলো, এখন গ্রাহকদের আধিক্য কম। মানুষের মধ্যে এখনো ভয় আছে। অনেকে নিজেরাই ঘরে চুল কাটছেন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের মেশিন কিনে চুল কাটছেন।
দেবল তাঁর ব্যবসার বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, করোনা মহামারির আগে ব্যবসা ভালো ছিলো। এখন যথেষ্ট গ্রাহক আসছেন না। তাই তার আয়ও এখন তুলনামূলক কম।
দেবল গাইনরা সাত ভাই ও চার বোন। তাদের পিতামাতার নাম মৃত মহিন্দ্র গাইন ও মাতা মৃত কমলা গাইন। তাঁর আরেক ভাই তাঁর মতো নর সুন্দরের পেশা বেছে নিয়েছেন। তবে এটি তাদের পৈতিক পেশা নয় বলে জানিয়েছেন দেবল।
দেবল রায়ের মতো ২২৬ জন ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য করোনাকালে কমোডিটি ঋণ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের প্রত্যেককে তিন কিস্তিতে দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তার মধ্যে ১২ হাজার টাকা নগদ এবং ৮ হাজার টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দেওয়া হয়েছে ঢাকা ক্রেডিটের সমবায় বাজার থেকে।