ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ বান্দুরার ঐতিহ্যবাহী লরেন্স বেকারী (ভিডিয়ো)

বান্দুরার ঐতিহ্যবাহী লরেন্স বেকারী (ভিডিয়ো)

0
1949

সুমন কোড়াইয়া || বান্দুরা

ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরার লরেন্স বেকারী। ১৯৬২ সনে হাসনাবাদের লরেন্স রোজারিও এটি স্থাপন করেন। তিনি এখন বেঁচে নেই, তবে রয়ে গেছে তাঁর প্রতিষ্ঠা করা বেকারীটি। লরেন্স বেকারী বান্দুরার বেকারীগুলোর মধ্যে সেরা একটি বেকারী।
সম্প্রতি ডিসিনিউজের পক্ষে লরেন্স বেকারীতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ক্রেতারা ভিড় করে পণ্য কিনছেন। বিক্রেতারা চাহিতা মতো পণ্য বিক্রি করতে গলদঘর্ম।
লরেন্স বেকারী স্বত্বাধিকার লেনার্ড রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আমাদের দাদু লরেন্স রোজারিও ১৯৬২ কী ১৯৬৩ সনে এই বেকারী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই সময় পরিবার, প্রতিবেশী কেউ রাজি ছিলেন না তাঁর এই উদ্যোগের পক্ষে। কিন্তু ৫৮ বছর ধরে তাঁর প্রতিষ্ঠা করা সেই বেকারী আজো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুনামের সাথে।’
এই বেকারীর শুরুর চিত্র তুলে ধরেন লেনার্ড রোজারিও। তিনি বলেন, ‘আমার ঠাকুর দাদা যখন লরেন্স বেকারী প্রতিষ্ঠা করেন তখন এরকম ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিলো না। তখন প্রায় সব বিস্কিটই হাতে তৈরি করা হতো।’

বেকারীটি ঘুরে দেখা গেছে এখন বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির বিস্কিট তৈরির মেশিন। সেগুলো আনা হয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে।
এই বেকারীর চারা বিস্কিট দেশ ও দেশে বাইরে খুব জনপ্রিয় ও সুনাম রয়েছে। এখানে ৩৫ ধরনের বেকারী আইটেম তৈরি করা হয়। লেনার্ড বলেন, ‘আমরা বিস্কিট বা কেক যাই তৈরি করি না কেন তা গুণে মানে সেরা পণ্য হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি।’
তিনি জানান, যখন তাঁর দাদু এই বেকারী প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন, তখন অনেকে আপত্তি করেছিলেন। তবে তাঁর ধৈর্য ছিল। ধৈর্য ধরে পণ্যের মান ঠিক রাখাতে তাঁর ব্যবসায় সফলতা আসে। এখন দোকানটি নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।
বিভিন্ন সময় চড়াই-উতরাই পাড় করেছে লরেন্স বেকারী। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনারা বান্দুরা বাজার পুড়িয়ে দেয়। তখন লরেন্স বেকারী পড়ে বিরাট পরীক্ষায়। দেশ স্বাধীন হলে লরেন্স বেকারী আবার পুনরায় চালু হয়। ঘুড়ে দাঁড়ায় বেকারীটি।
লেনার্ড রোজারিও জানান, ‘আমরা ভালো মানের পণ্য কম দামে বিক্রি করি। ফলে বিক্রি বেশি হয়। এভাবে আমাদের লাভও হয়।’
তাঁদের বেকারীতে বর্তমানে ১৪ জন কর্মী কাজ করছেন। এই বেকারীর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে চারা বিস্কিট। এখানে মাত্র ৩৫ টাকায় বার্গার পাওয়া যায়। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে গিয়ে লরেন্স বেকারীর বার্গার উপভোগ করেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন ৪০০ কেজি ময়দা, ৬০ কেজি সয়াবিন তেল, ১০০ কেজি চিনি প্রয়োজন পড়ে এই বেকারীর পণ্য উৎপাদনে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে লেনার্ড বলেন, ‘ভবিষ্যতেও আমাদের পণ্যের মান ঠিক রাখবো এবং ঢাকাতে একটি শাখা খুলবো, যাতে শহরের মানুষ চাইলেই আমাদের পণ্য হাতের নাগালে পান।’
লরেন্স বেকারীতে ২১ বছর ধরে কাজ করছেন স্বপন রায়। তিনি মূলত তৈরি করেন চারা বিস্কিট। তিনি বলেন, আমি চারা বিস্কিট তৈরি করা শিখেছি আরেকজন কারিগর রঞ্জিতের নিকট থেকে। আমাদের চারা বিস্কিট দেশ বিদেশে সুনাম রয়েছে।
লরেন্স বেকারীর পণ্যের প্রশংসা করেন একজন ক্রেতা মো. আয়ুব। তিনি ডিসিনিউজকে বলেন, এই বেকারীর প্রতিটি খাবারের মান খুবই ভালো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুস্বাদু। পণ্যের দামও তুলনামূলক কম।

হাসনাবাদের অধিবাসী পিংকি গমেজ নিয়মিত ক্রেতা লরেন্স বেকারীর। তিনি বলেন, বান্দুরাবাজারে এই বেকারী অনেক পুরানো দোকান। এখানকার পণ্যের মান খুবই ভালো, তাই আমরা নিয়মিত এখান থেকে খাবার কিনে খাই।